ইরানের নজিরবিহীন হামলা, নজর এখন ইসরায়েলের দিকে

1 min read

দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলার প্রতিশোধ নিতে শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে ইসরায়েলের দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। এবারই প্রথম ইসরায়েলের ভূখণ্ডে সরাসরি হামলা চালালো তারা। যদিও, ইরানের ছোড়া ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্রের ৯৯ শতাংশই ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইসরায়েল। তবে এই হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ইরান এরই মধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ইসরায়েল বা তার সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র যদি কোনো ধরনের প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে আরও বড় আক্রমণ চালাবে তারা। অন্যথায়, সংঘাত এখানেই সমাপ্ত।

অর্থাৎ, আক্রমণের পর বল এখন ইসরায়েলের কোর্টে ঠেলে দিয়েছে ইরান। পরবর্তীতে কী হবে তার পুরোটাই নির্ভর করছে ইসরায়েলের পদক্ষেপের ওপর।

কী করবে ইসরায়েল?

ইসরায়েলের বর্তমান সরকারকে দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে কট্টরপন্থি সরকারগুলোর একটি বলে মনে করা হয়। তারা এরই মধ্যে ইরানের হামলার ‘উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া’ জানানোর শপথ নিয়েছে।

ইসরায়েল কতটা বেপরোয়া, তা দেখা গেছে গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়াতেই। ওই হামলার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। পরের ছয় মাসে ফিলিস্তিনি অঞ্চলটিতে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছে তারা। এতে এরই মধ্যে ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।

বিবিসির খবর অনুসারে, ইসরায়েল ইরানের এই হামলার জবাব না দিয়ে চুপচাপ বসে থাকবে, তেমনটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

ইসরায়েলের সামনে উপায় কী?

প্রথমত, ইসরায়েল হয়তো আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের কথা শুনতে পারে এবং ‘কৌশলগত ধৈর্য’ দেখানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেক্ষেত্রে, সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর পরিবর্তে লেবাননের হিজবুল্লাহ বা সিরিয়ার মতো তেহরানের প্রক্সি মিত্রদের নিশানা করতে পারে ইসরায়েল, যা তারা বহু বছর ধরেই করে আসছে।

দ্বিতীয়ত, ইরানের মতো ইসরায়েলও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে প্রতিশোধ নিতে পারে। সেক্ষেত্রে, যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি থেকে ইরান গতরাতে হামলা শুরু করেছিল, সেগুলোকে নিশানা করতে পারে তেল আবিব। তবে এটিকে উসকানি মনে করতে পারে ইরান।

অথবা, ইরানের শক্তিশালী বিপ্লবী গার্ড কর্পস আইআরজিসির অভ্যন্তরীণ ঘাঁটি, প্রশিক্ষণ শিবির এবং কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে আরও প্রসারিত হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল।

তবে উভয় ক্ষেত্রেই সংঘাত আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রও সরাসরি জড়িয়ে পড়বে কি না?

উপসাগরীয় ছয় দেশসহ সিরিয়া, ইরাক এবং জর্ডানে সামরিক ঘাঁটি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ বাঁধলে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠতে পারে এসব ঘাঁটি।

ইরান আরও একটি বড় কাজ করতে পারে। সেটি হলো- হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়া। মাইন, ড্রোন ও দ্রুতগামী জলযানের সাহায্যে এই রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিতে পারে তেহরান। সেটি হলে বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ তেল সরবরাহ আটকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এমনটি ঘটলে তা সারা বিশ্বের জন্যই দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠতে পারে। এ কারণে সংঘাত আরও বেড়ে যাওয়া আটকাতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ।

+ There are no comments

Add yours