জিয়া পাকিস্তানি এজেন্ট, প্রমাণ কর্নেল বেগের সেই চিঠি

1 min read

কেবল মুখের কথা নয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের সঙ্গে যে জিয়ার ‘গোপন সংযোগ’ ছিল, তার প্রমাণ বহন করে তাকে উদ্দেশ্য করে লেখা পাকিস্তানি কর্নেল বেগের একটি চিঠি। সেখানে লেখা একটি লাইনই পরিষ্কার করে দেয়, জিয়া পাকিস্তানের কথা অনুযায়ীই চলেছেন। বাস্তবায়ন করেছেন তাদেরই এজেন্ডা। পরবর্তীতে চিঠিটি ফাঁস হলে বেরিয়ে আসে জিয়াউর রহমানের আসল চরিত্র। দেশবাসী জানতে পারে, জিয়া কোন অবস্থাতেই দেশপ্রেমিক নন। বরং মুখোশের আড়ালে থাকা পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্সের একজন কুখ্যাত গুপ্তচর।

দায়িত্বশীল সূত্রের তথ্যমতে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৭১ সালের ২৯ মে, জিয়াউর রহমানকে একটি চিঠি লেখেন তৎকালীন পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কর্নেল মির্জা আসলাম বেগ। যে চিঠিতে তিনি জিয়ার কাজের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘তোমার কাজে আমরা সবাই খুশি। আমাদের অবশ্যই বলতে হবে, তুমি ভালো কাজ করেছো। খুব তাড়াতাড়ি তুমি নতুন কাজ পাবে।’

একইসঙ্গে চিঠিতে জিয়াউর রহমানকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন কর্নেল বেগ। বলেন, পরিবার নিয়ে চিন্তা করো না। তোমার স্ত্রী ও সন্তানরা ভালো আছে। তবে তুমি মেজর জলিলকে নিয়ে সতর্ক থেকো।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জিয়াউর রহমান ১৯৫৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ১২ পিএমএ লং কোর্সে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন প্রাপ্ত হন। পরে করাচিতে ২ বছর কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যারই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৫৭ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে স্থানান্তরিত হয়ে আসেন এবং ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ আইএসআইতে কাজ করেন। পরবর্তীতে সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালে কাজ করেন কুখ্যাত গুপ্তচর হিসেবে। যখন তিনি দেখলেন যুদ্ধে পাকিস্তান পরাজিত হয়েছে, তখন পা বাড়ালেন বঙ্গবন্ধু হত্যার মিশনে।

এ বিষয়ে কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) শাফায়াত জামিল (বীর বিক্রম) তার ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর’ শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কেবল সেই ধরনের বাঙালি অফিসারদের গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করার সুযোগ দেয়া হতো, যারা কিনা নিষ্ঠার সঙ্গে স্বজাতি (অর্থাৎ বাঙালি) সেনা কর্মকর্তা ও রাজনীতিকদের সম্পর্কে সত্য-মিথ্যা নানা ধরনের রিপোর্ট দিতে উৎসাহ বোধ করবে। তাই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সঙ্গে মনেপ্রাণে ভিন্নমত পোষণকারী অফিসাররাই বিভিন্ন গোয়েন্দা পদে নিযুক্তি লাভ করতেন।’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পরস্পর যুদ্ধরত দুটি দলের দুইজন সেনার মাঝে বিশেষ যোগাযোগ ও পত্র বিনিময়ই বলে দেয়, সামথিং ইজ রং। যেটা হয়েছে পাকিস্তানি কর্নেল বেগের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততায়। পরবর্তীতে ‘আলোচিত’ চিঠিটি ফাঁস হয়ে যাওয়া এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিরোধের জেরে লে. জে এ এ কে নিয়াজির সামরিক উপদেষ্টা কর্নেল মির্জা আসলাম বেগকে কোর্ট মার্শালের হুমকি দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে বদলি করা হয়। এ থেকেই সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধকালীন অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জিয়া জড়িত। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ড অমান্য করায় তিনবার জিয়াকে অপসারণ ও তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেন সেনাপতি ওসমানী।

+ There are no comments

Add yours