জাল মৃত্যু সনদ : মিল্টন সমাদ্দার তিন দিনের রিমান্ডে

1 min read

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের জাল মৃত্যু সনদ দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২ মে) মিল্টনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তার বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন ডিবি পুলিশের এসআই কামাল হোসেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মিল্টন সমাদ্দার চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার সেন্টার চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান খুলে মানবতার ফেরিওয়ালা পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাতনামা, ওয়ারিশবিহিন ব্যক্তি, শিশু ও প্রতিবন্ধিদের নিয়ে চিকিৎসা ও সেবা প্রদানের নামে সঠিক দায়িত্ব পালন না করে ধুকে ধুকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছে। ধৃত আসামি দীর্ঘদিন ধরে জালজালিয়াতির মাধ্যমে ৫০টি মৃতের সার্টিফিকেট দিয়েছেন। এতে আসামির অন্য কোন অসৎ উদ্দেশ্য আছে কিনা, মৃত্যুর সঠিক কারণ, তার তথ্য উপাত্ত উদঘাটন, ধৃত আসামি নিজে ডাক্তার না হয়ে, আদৌ তার ডাক্তারি সনদ আছে কিনা তা যাচাই, তার সহযোগী অন্যান্য আসামিদের সনাক্তসহ নাম, ঠিকানা সংগ্রহ ও গ্রেফতার করার জন্য, চিকিৎসা সেবার নাম করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে কোন ভিকটিমকে হত্যা এবং তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রয় করেছে কিনা সেই তথ্য সংগ্রহ এবং অজ্ঞাতনামা শিশুদের আইনানুগ অভিভাবকদের অজ্ঞাতে পাচার করেছে কিনা এসব অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
বুধবার ১ মে রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এরপর আজ বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলায় মিল্টনের সহযোগী কিশোর বালাকেও আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মানবতার ফেরিওয়ালার অত্যাচার ও মারামারির সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য মামলার বাদিসহ পুলিশ মিরপুরে চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার সেন্টারে হাজির হলে মিল্টন সমাদ্দার পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টাকালে তাকে আটক করা হয়।

পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, সে কোনো নিবন্ধিত ডাক্তার নয় এবং তার এ প্রতিষ্ঠানে সে নিবন্ধিত কোনো ডাক্তার নিয়োগ প্রদান করে নাই। সে চাইল্ড এন্ড ওন্ড এইজ কেয়ার সেবার নামে প্রতিষ্ঠান তৈরী করে নিজে ডাক্তার সেজে এজাহারভূক্ত পলাতক আসামি কিশোর বালার সঙ্গে পরস্পর যোগসাজসে প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা প্রদান করে, ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট তৈরী করে ফেইসবুক, ওয়াটসআপ ও ইমো-এর মাধ্যমে আসামি মিল্টন সমাদ্দারের ১ কোটি ২০ লাখ ফ্রেন্ড ফলোয়ার-এর মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ উপার্জন করতো।

তখন ধৃত আসামি মিল্টন সমাদ্দারের দেখানো মতে তার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাগজপত্র ও তার টেবিলে থাকা ডেথ সার্টিফিকেট, দুইটি স্ট্যাম্প সিল, যার একটিতে ইংরেজিতে Md Mohid Khan অন্যটিতে বাংলায় মিল্টন সমাদ্দারের নাম লেখা আছে।

আসামি মিল্টন সমাদ্দার নিজে নিজে ডাক্তার সেজে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আশ্রমে মৃতদের মৃত ঘোষণা ও জালজালিয়াতির মাধ্যমে মৃত্যু সনদপত্র দিত।

মামলার এজহারে আরও বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, মিল্টন সমাদ্দার দীর্ঘদিনযাবৎ মানবতার সেবা ও চিকিৎসার নামে বিভিন্ন বয়স্ক ও শিশুকে নিয়ে শারিরিক, মানসিক আঘাত করে কখনো কখনো তাদের সুচিকিৎসার নাম করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে আসছিলো বলে বিভিন্ন ইলেকট্রিক, সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে প্রচার করা হয়েছে। আসামি একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না হয়েও সেবার নামে অজ্ঞাতনামা, ওয়ারিশবিহীন ব্যক্তিদের নিয়ে চিকিৎসা প্রদান না করে, খাবারের যথাযথমান বজায় না রেখে বিভিন্ন মানুষকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছে।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours