পিটার হাসের কলাম ও বৈশ্বিক বাস্তবতা

1 min read

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সম্প্রতি একটি সংবাদপত্রে কলাম লিখে আবারও আলোচনায় এসেছেন। বরাবরের মতো এটাকে ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত’ কাজ হিসেবে উল্লেখ করছেন সাবেক কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, কলামের প্রতিটি লাইনে তিনি পুরনো কথাগুলোই লিখেছেন। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে যে সহনশীলতা ও বাক স্বাধীনতা লক্ষ্য করা গেছে সেটা পিটার হাসের চোখ কীভাবে এড়িয়ে যায় সে প্রশ্নও করছেন তারা।

১৫ মার্চ প্রকাশিত কলামে তিনি লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো বাংলাদেশ ও বিশ্বের সর্বত্র গণতন্ত্রের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে। সহজ করে বলতে গেলে, আমরা বিশ্বাস করি, দেশের মানুষের কল্যাণে গণতন্ত্র হলো স্থায়ী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সর্বোত্তম উপায়। আমরা সাহসী নাগরিক সমাজ এবং মানবাধিকার কর্মীদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখব। যেসব গণমাধ্যমকর্মী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক দমন ও হয়রানির শিকার হন, তা অবসানের আহ্বান আমরা অব্যাহত রাখব। বাক ও সমাবেশের স্বাধীনতা যাতে বজায় থাকে, সে ব্যাপারে আমরা চাপ অব্যাহত রাখব। আমরা আরও উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাজের পথকে সুগম করতে অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক সংলাপের আহ্বান জানানো অব্যাহত রাখব।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হাস কূটনৈতিক নিয়মের সীমানাকে চ্যালেঞ্জ করে এমন ভাষা ব্যবহার করে সুশীল সমাজ, মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং মিডিয়া পেশাদারদের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করার প্রয়োজন অনুভব করেছেন। কিন্তু গাজা উপত্যকার বর্তমান পরিস্থিতি উল্লেখ না করে গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির কোনো সমসাময়িক আলোচনা শুরু হতে পারে না, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামলার পর থেকে ৩১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। হামাসের অন্তত ৭০% হতাহত নারী ও শিশু।

এই দশকের সবচেয়ে বড় মানবাধিকার বিপর্যয় মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী করেছে? ফিলিস্তিনিরা যখন গণহত্যার শিকার হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র দেশ যারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বানে বারবার বাধা দিচ্ছে। উপরন্তু, দক্ষিণ আফ্রিকা কর্তৃক আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (ICJ) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশিত প্রাথমিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

রাষ্ট্রদূত হাস যেখানে মিডিয়া পেশাদারদের সুরক্ষার গুণাবলীর কথা লিখেছেন, অন্যদিকে তার দেশ গাজার পরিস্থিতি কভার করা সাংবাদিকদের জন্য কিছুই করেননি। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) অনুসারে, ১৪মার্চ, ২০২৪ পর্যন্ত, ৯৫ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৯০ জন ফিলিস্তিনি এবং ৩ জন লেবানিজ। একই সময়ে, ১৬ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন, ৪ জন নিখোঁজ হয়েছেন, ২৫ সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা, হুমকি, সাইবার আক্রমণ, সেন্সরশিপ এবং হত্যার একাধিক ঘটনা ঘটেছে।

পিটার হাসের কলাম নিয়ে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. জিয়া রহমান বলেন, উনি এর আগেও গণমাধ্যমে এসে বিশেষ সাক্ষাতকার দিয়েছেন। রাষ্ট্রদূতদের আচরণ বিধিতে ‘শিষ্ঠাচারের’ কথা বলা হয়ে থাকে, এতে তার ব্যত্যয় ঘটেছে। বাংলাদেশে বাক ও সমাবেশের স্বাধীনতা নিয়ে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায় না। দিনে বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ হয়ে থাকে। একাধিক টকশোতে যার যার অভিমত উপস্থাপনে কোন বাধা দেওয়া হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রে কি চাইলেই যেখানে সেখানে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে সমাবেশ করা যায়? বাংলাদেশ কি কোথাও বাধা দিয়েছে?

কলাম লিখলে আটকানোর কিছু নেই তবে কী লিখছে সেইটা নিয়ে পর্যালোচনা হতে পারে বলে মনে করেন সাবেক কূটনীতিক মুন্সি ফয়েজ। তিনি বলেন, লক্ষ্য করে দেখবেন নির্বাচনের আগে তারা যেভাবে কথা বলছিলো সেটা বন্ধুসুলভ ছিলো না। তারা সেসময় যে শর্তগুলো দিচ্ছিলো এখন সেসব কথা বলছে না, নতুন করে প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন না। তবে এইরকম কলাম নিয়ে কেউ যদি সমালোচনা করতে চায়, সে সুযোগ আছে। প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, তার দেশ পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় কী করছে- ইজরায়েল, মিশরে কী করছে? পৃথিবীজুড়ে নিরস্ত্র মানুষের প্রতি যে অবিচার হচ্ছে তার সবচেয়ে বেশি দায় কার

+ There are no comments

Add yours