ভুল সময়ে ভুল আন্দোলনে বিএনপি

1 min read

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিএনপি আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। আগামীকাল থেকে এই আন্দোলনের সূচনা হবে। বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এই আন্দোলনকে পর্যায়ক্রমে তারা সরকার পতনের আন্দোলনের দিকে নিয়ে যেতে চায়। এমন এক সময় আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করলো বিএনপি, যখন নির্বাচন কমিশন গঠনের অপেক্ষায়। আজকালের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হতে যাচ্ছে। বিএনপি ইতোমধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এই নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার কোনো পর্যায়েই অংশগ্রহণ করেনি।

বিএনপি বলছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা অন্য কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এরকম একটি বাস্তবতায় হিসেব-নিকেশ করেই বিএনপি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বলে বিএনপির নেতারা বলছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভুল সময়ে ভুল আন্দোলনে গেল বিএনপি। যে ভুলগুলো এই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি করেছে তার মধ্যে রয়েছে,

১. সামনে রোজা: বিএনপি যে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তা পুঞ্জিভুত রূপ নিতে অন্তত এক মাস সময় লাগবে। আগামী এক মাসের মধ্যেই রোজা শুরু হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পবিত্র রমজান মাসে কোনো আন্দোলন হয় না। ফলে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েই মাঝপথে বিএনপিকে আবার ঘরে ফিরতে হবে। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা থাকবে না।

২. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: বিএনপি যে সময় আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করছে, সেই সময় রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের নজর সেদিকে এবং এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানামুখী আলাপ-আলোচনা। কাজেই বিএনপি’র এই আন্দোলনের কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত হবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই।

৩. দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের অস্বস্তি আছে কিন্তু ক্ষোভ নেই: সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান গত এক দশকে অনেক বেড়েছে। সরকারি চাকরিতে যেমন বেতন বেড়েছে তেমনি বেসরকারি খাতেও ব্যাপক বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকারখানাগুলো বাংলাদেশকে এক নতুন মাইলফলকে নিয়ে গেছে। কাজেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি আছে। এ নিয়ে সরকারকে সমালোচনাও করছে কিন্তু বিশ্ব বাস্তবতা এবং সবকিছুই সাধারণ মানুষ অনুভব করে। এ নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করার মতো সময় বা আগ্রহ সাধারণ মানুষের নেই। কাজেই এটি নিয়ে বিএনপি যে বড় ধরনের কোনো আন্দোলন করে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই।

৪. ক্ষতবিক্ষত বিএনপি: বিএনপি নিজেই এখন সাংগঠনিকভাবে দুর্বল। একটি আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য প্রথম দরকার হলো সংগঠনকে শক্তিশালী করা এবং ঐক্যবদ্ধ করা। কিন্তু বিএনপির মধ্যে নানারকম বিভক্তি, বহিষ্কারের ঘটনা দলটিকে এক ধরনের বিভক্ত এবং বিভ্রান্ত করেছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপি’র পক্ষে একটি বড় ধরনের আন্দোলন তৈরি করা অসম্ভব ব্যাপার হয়ে যাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

৫. নেতৃত্বের সংকট: একটি রাজনৈতিক দলকে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য প্রথম দরকার একজন নেতা। বিএনপিতে দীর্ঘ সময় ধরেই বেগম খালেদা জিয়া দলের একক নেতা ছিলেন। কিন্তু এখন বিএনপিতে নেতৃত্বের সংকট প্রবল আকার ধারণ করেছে। বিএনপি’র কে নেতা এ নিয়ে নানারকম প্রশ্ন রয়েছে। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের প্রধান নেতা হিসেবে কাজ করছেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। কিন্তু তারেক জিয়ার গ্রহণযোগ্যতা নেই। আর তিনি বাংলাদেশ থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে পারবেন না।

এরকম একটি পরিস্থিতিতে নেতৃত্বের সংকট বিএনপিকে কতটুকু এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে এবং জনগণ বিএনপি’র প্রতি কতটুকু আস্থাশীল হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন। কাজেই বিএনপি’র পক্ষে যারা চিন্তাশীল ব্যক্তি তারা বলেছিল, আগে সংগঠন গুছিয়ে আন্দোলন করতে। কিন্তু ভুল সময়ে ভুল আন্দোলনে বিএনপি হয়তো আরেকবার পিছিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াই শুরু করলো।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours