বিএনপি-জামায়াত দ্বন্দ্ব, জোট ছাড়ার প্রস্তুতি জামায়াতের

1 min read

নিউজ ডেস্ক: ২০ দলীয় জোটের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলাম একটি বড় ফ্যাক্ট। সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় জোটে গুরুত্বপূর্ণ হলেও প্রকাশ্যে দলটিকে নিয়ে কথা বলতে চায় না শরিকরা। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়া এবং সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত শীর্ষ নেতাদের শাস্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই জামায়াতের পক্ষে সরাসরি কথা বলতে বিব্রতবোধ করে বিএনপি। এছাড়াও আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে। ধীরে ধীরে জামায়াত-বিএনপির মধুর সম্পর্কটি এখন তিক্ততায় পরিণত হয়েছে। বিএনপির উপর ভরসা করে থাকা দলটি এখন বিচ্ছেদের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জানা গেছে, বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হিসেবে বিএনপির সাংগঠনিক দূর্বলতাকেই দায়ী করেছে জামায়াত।

বিএনপির অপরিপক্ব রাজনৈতিক কৌশলের সমালোচনা করে জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের বাংলা নিউজ ব্যাংকে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কৌশলের সামনে বিএনপির টিকে থাকার মতো নেতৃত্ব নেই। তাই তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ভালো কিছু বয়ে আনবে না। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বিএনপি একটি অকৃতজ্ঞ দল।

তিনি আরো বলেন, ২০ দলীয় জোট নিয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনে রাষ্ট্রক্ষতায় আসীন হবার পেছনে আমাদের (জামায়াতের) অবদান ছিল বেশি। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে বিএনপি শরিক দলগুলোকে ভুলে যায়। অথচ ১/১১-এর সময় দলটির বিপদে (বিএনপি) আমরাই (জামায়াত) পাশে ছিলাম। কিন্তু যখন জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে আন্দোলন হয় তখন বিএনপি পাশে তো থাকেইনি, তাদের অবস্থানও পরিষ্কার করেনি। অথচ এই জামায়াতকে দিয়ে অনেক স্বার্থ হাসিল করে নিয়েছিল খালেদা জিয়া। এখন তার দলের নেতারাই তার মুক্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে গত মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) জিয়াউর রহমানকে নিয়ে সাম্প্রতিক ‘বিতর্কের’ প্রেক্ষাপটে একটি বিবৃতি দেয় জামায়াত। বিবৃতিতে মহান ব্যক্তিদের নিয়ে বিতর্ক না করার আহ্বান জানানো হয়। তবে সেখানে জিয়াউর রহমানের নাম তারা উল্লেখ করেনি। ফলে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি নেতাদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি বেশ কয়েকদিন ধরে দেশের সম্মানিত ও মহান ব্যক্তিদের নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করা হচ্ছে এবং তাদের ব্যাপারে অসম্মানজনক ও অশালীন ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের জন্য যারা যে অঙ্গনে ভূমিকা পালন করেছেন এবং অবদান রেখেছেন, তাদের সে অবদানের প্রতি জনগণ শ্রদ্ধাশীল। সম্প্রতি যে বিষয়গুলো নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করা হচ্ছে, তা দেশের জনগণকে মর্মাহত করেছে।

বিবৃতিতে জিয়াউর রহমানের নাম উল্লেখ না করায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেন, জামায়াতে ইসলামী তো বিএনপি করে না। জামায়াত ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধের শক্তি। সেজন্য বিবৃতিতে তারা তাদের নিজস্ব আঙ্গিকে বক্তব্য দিয়েছে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, এখন তো শহিদ প্রেডিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়েই আলোচনা। তার নাম উল্লেখ না করার তো কারণ নেই। আমার ধারণা, সরকারের সঙ্গে জামায়াতের একটা সমঝোতা চলছে। যার কারণে এই মুহূর্তে বিএনপি বা জিয়াউর রহমানের নাম বললে তারা হয়তো আরও বিপদে পড়তে পারে। আবার এও শুনছি জামায়াত নাকি জোট ছেড়ে দিতে চায়।

বিবৃতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বিবৃতি দেওয়া উচিত তেমনই দেওয়া হয়েছে। মহান ব্যক্তিদের জন্যই দিয়েছি। এখানে আমরা একজনকে হোক বা একাধিক জনকে হোক, যারাই ভালো ব্যক্তি, তাদের নিয়ে বিতর্ক না হোক-সেটাই চাই।

তবে জামায়াতের একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, বিবৃতিতে কী যাবে, তা দলের শীর্ষ নেতারা ঠিক করেন। তবে জিয়াউর রহমানের নাম উল্লেখ না করার কিছু যৌক্তিক কারণ আছে। এটি কৌশলও হতে পারে। কারণ জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার, ফাঁসির রায় এবং তা কার্যকর করা হয়, তখন বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বিবৃতি পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি-জামায়াত পরমমিত্র হলেও যখন অসময়ে কেউ কারো পাশে না দাঁড়ায় তখন বন্ধুত্বটা বেশি দিন টেকে না। মানবতাবিরোধী অপরাধ, জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের কারণে জামায়াত নিয়ে বিতর্ক শুরু থেকেই। আর বিএনপি তাদের সাথে সম্পর্ক রাখছে গোপনে। এভাবে স্বাভাবিক সম্পর্ক টিকে থাকতে পারে না। তবে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক সম্পর্কগুলোর ভবিষ্যৎ বলা মুশকিল। কারণ দুলই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours