সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেন মোরশেদ ও হাসান

1 min read

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ এসএম মোরশেদ। অপরাধ বিচিত্রা নামের অখ্যাত ম্যাগাজিনের সম্পাদক। নেই কোনো নিজস্ব পুঁজি। চাঁদাবাজি আর ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অর্থে চলে এর প্রকাশনা। আহসান উল্লাহ হাসানসহ কম করে হলেও ডজন খানেক চাঁদাবাজ অপরাধ বিচিত্রার পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সেক্টর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। চাঁদাবাজি এবং ব্ল্যাকমেইলিংই তাদের প্রধান কাজ।

মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধানে সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করে এমন একটি চক্রের ভয়ংকর সব তথ্য উঠে এসেছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অপরাধ বিচিত্রা নামের অখ্যাত ম্যাগাজিনের সম্পাদক এসএম মোরশেদ ও তারই প্রতিষ্ঠানের আরেক স্টাফ আহসান উল্লাহ হাসান। এ দুজনের নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছে একঝাঁক চাঁদাবাজ হলুদ সাংবাদিকদের একটি প্রতারক চক্র। এদের অপকর্মে বিব্রত মূলধরার গণমাধ্যমে কাজ করে এমন সাংবাদিকরাও।

জানা যায়, অখ্যাত ম্যাগাজিন অপরাধ বিচিত্রার পরিচয়ে এসএম মোরশেদ ও আহসান উল্লাহ হাসান নিজেদের অনেক বড় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে
রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে থাকেন। এছাড়াও কথিত এই দুই হলুদ সাংবাদিক বিভিন্ন পত্রিকার ভুয়া আইডি কার্ড ব্যবহার করে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্টনের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এসএম মোরশেদ ও আহসান উল্লাহ হাসানের নেতৃত্বে সাংবাদিক পরিচয়ে সংঘবদ্ধ একটি চক্র সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের হয়রাণি করে আসছে। চক্রটি ভুক্তভোগীদের কোম্পানির নামে প্রথমে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে। এরপর আর কোনো সংবাদ হবে না বলে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দাবি করে আর সেই টাকা না দিলেই শুরু হয় ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা সংবাদ প্রচার। সেসব সংবাদ ফেসবুকে পোস্ট করে বুস্টিং করে চলে প্রচারণা। যাতে যাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার হচ্ছে তারা শঙ্কিত হয়ে তাদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়।

এ প্রসঙ্গে মতিঝিলে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করেন এমন এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নামসর্বস্ব একটি পত্রিকায় কথিত সাংবাদিক এসএম মোরশেদ ও আহসান উল্লাহ হাসান সংবাদ প্রকাশ করেন। এরপর ভয়ভীতি দেখিয়ে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর আবার আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ চক্রটি বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষদের টার্গেট করে সংবাদ প্রকাশের ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি, কারখানা থেকে নিয়মিত চাঁদাবাজি করেন। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মানহানির ভয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয় না। এমনকি তার বিপক্ষে তদন্ত করতে যাওয়া আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সদস্যদেরও মানহানির উদ্দেশ্যে ভয়ভীতি দেখিয়ে বানোয়াট সংবাদ পরিবেশন করতেও সিদ্ধহস্ত এই মোর্শেদ গং। তাই কেউই তার বিপক্ষে কার্যক্রম চালাতে ভীত থাকে।

আমাদের অনুসন্ধান বলছে, কথিত সাংবাদিক এসএম মোরশেদ ও আহসান উল্লাহ হাসান সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের টার্গেট করে সংবাদ পরিবেশন করার হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করে আসছেন। আন্ডারগ্রাউন্ডের অনেক সাংবাদিক নিয়ে তার একটি গ্রুপ আছে, যারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত। এই চক্রটি একটি নারী সিন্ডিকেটও তৈরি করেছে। আর সেসব নারী দিয়ে সমাজের সম্মানী ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে বড় অংকের টাকা দাবি করে চক্রটির মাস্টারমাইন্ড এসএম মোরশেদ।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ভেজালবিরোধী খাদ্যের নামে বিভিন্ন কোম্পানি নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে ও তাদের নিকট থেকে বড় অংকের চাঁদা আদায় করে চক্রটি। এসএম মোরশেদ নিজেকে বড় পেশাদারী সাংবাদিক মনে করে কিন্তু গণমাধ্যমের কাছে সে একজন আন্ডারগ্রাউন্ডের সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। কয়েকবার র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করেছে বলেও অনেক সাংবাদিক জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে যমুনা টিভিতে কর্মরত একজন ক্রাইম রিপোর্টারের সঙ্গে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২০২৩ সালে হজে যেয়ে প্রতারক এসএম মোরশেদ ভালো হয়ে গেছে বলে প্রচার করে। কিন্তু এই প্রতারক তো ভালো হবার নয়। বর্তমানে ইসলামী ছদ্মবেশে বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে রয়েছে। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের পক্ষে না যেয়ে বরং অপরাধী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির পক্ষে এসএম মোরশেদ ও তার ডান হাত আহসান উল্লাহ হাসান সাফাই নিউজ করে বড় অংকের টাকা আত্মসাৎ করে।

এ ক্রাইম রিপোর্টার আরও বলেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সচিবালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের বিরুদ্ধে নেতিবাচক রিপোর্ট সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রা প্রকাশ করেছিল। সেসময় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সচিব বরাবর অভিযোগ করা হয়। পরবর্তীতে প্রতারক এসএম মোরশেদ ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আমার এখনও মনে আছে, ২০১৮ সালে এক মহিলা একটি মাজারে কথিত পীরের কাছে ধর্ষণের শিকার হলে প্রতারক মোরশেদ মহিলার পক্ষে না গিয়ে কথিত পীরের পক্ষ নিয়ে মহিলাকে অনেক হেনস্থা করেন। পরবর্তীতে মহিলার স্বামী তার বিরুদ্ধে মামলা করবে জানতে পেরে তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন মোরশেদ।

এ নিয়ে ক্রাইম রিপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দায়িত্বশীল নেতা জানান, এভাবে মোরশেদ ও তার চক্রের কাজ আর চলতে দেয়া যায় না। মোরশেদের সমস্ত অপকর্ম নিয়মিত চলমান, গণমাধ্যমের অনেক সাংবাদিক তার বিরুদ্ধে অতিষ্ঠ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এই প্রতারক হলুদ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহণেরও দাবি জানান তিনি। চাঁদাবাজ মোর্শেদ কোন সাংবাদিক নন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ দিকে কথিত ভুয়া সাংবাদিকদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, আসলে এসব ভুয়া হলুদ সাংবাদিক পরিচয় দেয়া ব্যক্তিদের আমরা নজরে রেখেছি। আমরা প্রায়ই অভিযোগ পেয়ে থাকি হলুদ সাংবাদিকদের চাঁদাবাজির বিষয়ে। এসব প্রতারকদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। কেউ কাউকে হয়রাণি এবং কারো কাছ থেকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিলে তদন্ত করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও উক্ত প্রতিবেদককে আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।

এ বিষয়ে কথিত সাংবাদিক এসএম মোরশেদের সঙ্গে বেশ কয়েক বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলোর বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours