রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করে বিএনপির ৩২ গডফাদার

1 min read

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিনে দিনে অবনতির দিকে যাচ্ছে। ইয়াবা পাচার, ডাকাতি, চুরি ও হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে গত চার বছরে মামলা হয়েছে ১০১৪টি। যেখানে আসামি ২৬৮৭ জন রোহিঙ্গা। এসব মামলায় আটক-গ্রেফতারও হয়েছে দেড় হাজারের বেশি।

বর্তমানে বেপরোয়া হয়ে উঠছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। কারো কারো হাতে উঠে এসেছে আগ্নেয়াস্ত্র। গড়ে তুলছে ছোট ছোট সন্ত্রাসী বাহিনী। এখন তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায়। এরই মধ্যে তারা খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মাদক পাচার ছাড়াও নানা অপরাধে জড়িয়েছে। এর ফলে ক্যাম্পকেন্দ্রিক অপরাধের মাত্রা গত চার বছরে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে চলতি বছরের ২৮ জুলাই পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে দুই নারীসহ নিহত হয়েছে ১১২ জন রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭০টি খুনের মামলা হয়েছে গত চার বছরে। এ সময় ৭৬২টি মাদক, ২৮টি মানবপাচার, ৮৭টি অস্ত্র, ৬৫টি ধর্ষণ ও ১০টি ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে। ৩৪টি মামলা হয়েছে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায়।

অপহরণ ছাড়াও রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ মাদক ব্যবসায় জড়িত। রোহিঙ্গাদের হাত ধরে আসছে ইয়াবা ও স্বর্ণের বারসহ নানা মাদক। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিএনপি-জামায়াতের ৩২ জন মাদক পাচারকারী গডফাদারের সন্ধান পাওয়া গেছে। মাদকের বড় বড় চালান পাচারে জড়িত এসব নেতারা। এ অঞ্চলে বিএনপি-জামায়াতের প্রভাব থাকায় অবৈধ মালামালের কর্তৃত্ব ও ভাগাভাগি নিয়ে ক্যাম্পে মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষ হয়।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের একটি অংশ নিয়মিত অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের অপরাধ দমনে সেখানে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি থানা পুলিশের একাধিক টহল দল অভিযান চালাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে পুলিশ আরো কঠোর হবে। রোহিঙ্গাদের অপরাধে কাজে লাগাচ্ছে একটি চক্র। তাদের দমনের চেষ্টা চলছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১০১৪টি মামলায় গ্রেফতার হয়েছে ১ হাজার ৬২২ জন রোহিঙ্গা। এর মধ্যে ৮৯৪টি মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়।

উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কষ্টসাধ্য।

১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক এসপি তারিকুল ইসলাম বলেন, এক বছরও পূর্ণ হয়নি এপিবিএন কাজ করছে। তবু আমরা ক্যাম্পের অপহরণ বাণিজ্য, মাদক চোরাচালানসহ নানা অপরাধ ঠেকাতে নিয়মিত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

কক্সবাজার র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ দমনে র‍্যাব প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে। পাশাপাশি মাদক পাচারে জড়িত রোহিঙ্গাদের আটক করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, প্রতিদিনই বাড়ছে রোহিঙ্গাদের মামলার সংখ্যা। হত্যা, অপহরণ, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৩২ জন মাদক পাচারকারী গডফাদারের সন্ধান মিলেছে। বড় পাচারকারীদের ছত্রছায়ায় থেকে ক্যাম্পের অনেকেই ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়ছে। অভিযানে যারা ধরা পড়ছে, তারা মাদক বহনকারী। আমরা রোহিঙ্গা গডফাদারদের ধরার চেষ্টা করছি।

+ There are no comments

Add yours