রিজভীর ‘সই জাল করা’ চিঠি নিয়ে বিএনপিতে তোলপাড়!

1 min read

নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রামে মহিলা দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের সই জাল করা একটি ভুয়া চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নেতারা।

এদিকে সোমবার (৩১ আগস্ট) বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদের স্বাক্ষর করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রুহুল কবির রিজভীর সই জাল করে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয় প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মণিকে ইতোপূর্বে বহিষ্কার করা হয়েছিল এবং তাকে স্বপদে বহাল করা হয়নি, শুধুমাত্র প্রাথমিক সদস্যপদ বহাল আছে’। ৩০ আগস্ট কোনো প্রতারক বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদের স্বাক্ষর জাল করে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে- যা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। বিজ্ঞপ্তিটি যে প্রকাশ করেছে সে একজন প্রতারক। এতে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।

আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে গিয়ে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের ভূয়সী প্রশংসা করে এবং তাকে আবারও মেয়র হিসেবে দেখতে চান- বক্তব্য দিয়ে ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর বহিষ্কার হয়েছিলেন মহিলা দল নেত্রী মনোয়ারা বেগম মণি। তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের (লালখানবাজার, জামালখান ও বাগমণিরাম) সদ্যবিদায়ী কাউন্সিলর।

চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সই করা চিঠিতে মণির বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয় এবং তাকে চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সভাপতির পদও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া স্থগিত হওয়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে তিনি কাউন্সিলর পদে পুনরায় বিএনপির সমর্থনও পান।

কিন্তু মণিকে দলে ফেরানো এবং স্বপদে বহালের সিদ্ধান্ত নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলে তার পক্ষে-বিপক্ষে দুটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়। একটি পক্ষ কোনোভাবেই মণিকে সভাপতির পদে মানতে নারাজ।

জানতে চাইলে মনোয়ারা বেগম মণি বলেন, ‘বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পর আমি নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। দলের সকল কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছি। সাংগঠনিক সভা-সমাবেশও করছি। এর মধ্যে আমার বিরোধী একটি গ্রুপ হঠাৎ করে গত (রোববার) রাতে ফেসবুকে আমাদের নেতা রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সাহেবের সই করা একটি চিঠি ছড়িয়ে দেয়। আমি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত ভাই ও সাধারণ সম্পাদক বক্কর ভাই, আমাদের মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন উনারা খবর নিয়ে সই জালের বিষয়টি জানান। এই প্রতারণার বিষয়ে আমি বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতরে অভিযোগ দিয়েছি। এছাড়া জড়িতদের বিরুদ্ধে আমি ডিজিটাল আইনে মামলা করব।’

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ‘ফেসবুকে একটি চিঠি আমরা দেখেছি। পরে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেছি। উনারা বলেছেন- এটা জালিয়াতি করে দেওয়া হয়েছে। রিজভী আহমেদ সাহেবের সই জাল করা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে এ ব্যাপারে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। মহিলা দলও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করেছে। এছাড়া কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিকে বলা হয়েছে, এই সই জালিয়াতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে। আমরা তদন্ত করে দেখছি।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ বলেন, ‘মনোয়ারা বেগম মণি বিএনপির দফতরে অভিযোগ করেছেন যে, উনার বিরুদ্ধে একটি চিঠি ফেসবুকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি আকারে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে রুহুল কবির রিজভী আহমেদের সই আছে। আমি বিষয়টি নিয়ে রিজভী ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলি। তিনি জানিয়েছেন, এ সংক্রান্ত কোনো ধরনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি সই করেননি। বিষয়টি উনি জানেনও না। এটা স্পষ্টত প্রতারণার শামিল। আমরা অফিসিয়ালি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’

গত বছরের ৪ অক্টোবর নগরীর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ব্যানারে দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠান হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মনোয়ারা বেগম মণি বলেন, ‘আ জ ম নাছির একটা দল করেন, আমি আরেকটা দল করি। সেটাতে আমি বিশ্বাসী না। আমি বুঝি, দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার সেবা। মানবতার জন্য কাজ করাই হচ্ছে রাজনীতি, সমাজনীতি। কে কোন দল করে সেটা বিবেচনা করে আ জ ম নাছির কাজ করেন না। উনি একটা জায়গায় আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি। কিন্তু উনি চট্টগ্রামের অভিভাবক। আগামী দিনেও আমরা আ জ ম নাছিরকে আবার মেয়র হিসেবে দেখতে চাই ইনশাল্লাহ। সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে আ জ ম নাছির সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে মেয়র হবেন; আবার এখানে আসবেন। আমরা আবার ফুল দিয়ে বরণ করে নেব তাকে।’

এই বক্তব্য নিয়ে বিএনপিতে তোলপাড় সৃষ্টি হলে পরদিন তাকে বহিষ্কার করা হয়। তবে মনোয়ারা বেগম মণি এই বক্তব্যকে আবেগের বশবর্তী হয়ে অনিচ্ছাকৃত ভুল বলে উল্লেখ করেছিলেন।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours