শান্তি আলোচনার নামে ব্যাংক ডাকাতির ছক কষে কেএনএফ

1 min read

নিউজ ডেস্ক: মাত্র ১৬ঘন্টার ব্যবধানে বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি। যদিও সরকার তাদের সঙ্গে ‘শান্তি আলোচনা’ করে পাহাড়ে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে গেছে। তবে সন্ত্রাসী এই গোষ্ঠীটি সরকারের মহানুভবতাকে দুর্বলতা মনে করে ভেতরে ভেতরে ব্যাংক ডাকাতির মতো ভয়ানক ছক কষেছিল বলে নিশ্চিত করেছে কুকি চিনের শীর্ষ নেতা নাথান বমের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র।

ওই সূত্রের বরাতে জানা যায়, ২০২২ সালে কুকি-চিনের তৎপরতা দৃশ্যমান হলেও তারা অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করতে ষড়যন্ত্র করে আসছিল। সংগঠনটি তাদের ফেসবুক পাতায় নিজেদের বাংলাদেশের কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন নয় বলে দাবি করলেও তারা পৃথক স্বশাসিত অঞ্চলের নামে আলাদা স্বাধীন ভূখণ্ডে বিশ্বাস করে। তাই তারা সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার নাম করে সন্ত্রাস কার্যক্রম চালাতে ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নেয়। অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে তারা ব্যাংক ডাকাতির ছক কষে।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে আসা এক বম সম্প্রদায়ের যুবক বলেন, কেএনএফ-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নাথান বম ২০১২ সালে কুকি চিন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনস বা কেএনডিও নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন যা পরে কেএনএফ এ রূপান্তরিত হয়। গত বছর কেএনএফ-এর সাথে সেনাবাহিনীর সংঘাত চলে। বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকজন সেনা সদস্যকে কেএনএফ হত্যা করে নিজেদের শক্তির জানান দেয়ার চেষ্টা করেছে। যদিও কেএনএফ’র সাথে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত নিরসনের পথ বেছে নেয় সরকার। কিন্তু নাথান বম কখনোই সশস্ত্র বিপ্লব ছাড়া আর রক্তপাত ছাড়া অন্য পন্থায় যাওয়ার পথ খুঁজতে রাজি নয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে শান্তি আলোচনার আড়ালে ব্যাংক ডাকাতির ছক কষে কেএনএফ।

বম সম্প্রদায়ের যুবক আরও বলেন, শুধু ব্যাংক ডাকাতির ঘটনাই নয়, সোনালি ব্যাংকের ম্যানেজারকে অপহরণ, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র লুট করে নাথাম বম বাহিনী নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিতে চাচ্ছে। সরকারের সাথে কেএনএফ-এর যখন শান্তি আলোচনা চলছে ঠিক সে সময়ে এসব ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা অবশ্যই পূর্ব পরিকল্পিত, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তারা আরও ভয়ানক হামলার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। তাই আমি মনে করি সরকারের নাথাম বমের মতো প্রতারক সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এখনই জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। পাহাড়ি-বাঙালি সবাইকে একজোট হয়ে এ সশস্ত্র গোষ্ঠীর মোকাবিলা করতে হবে।

এ বিষয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহবায়ক ও বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা জানিয়েছেন, সম্প্রতি ব্যাংক ডাকাতি এবং ত্রাস সৃষ্টির ঘটনায় কেএনএফ-এর সাথে সংলাপ করার সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

আগামীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষে সংলাপ চালিয়ে সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় শান্তির চেষ্টা বড় ধরণের ধাক্কা খেয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যদের কেউ কেউ মনে করছেন- সরকারের শিথিলতার সুযোগ নিয়ে কেএনএফ এই ব্যাংক ডাকাতির মতো গর্হিত কাজ করে থাকতে পারে।

অপরদিকে কেএনএফ-এর বিভিন্ন ফেসবুক পোস্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পাহাড়ে অন্যান্য সংগঠনের সাথে তাদের চরম বিরোধ রয়েছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফকে উদ্দেশ করে বিভিন্ন সময় তারা নানা পোস্ট দিয়েছে। এসব পোস্টের মাধ্যমে জেএসএস এবং ইউপিডিএফ-কে নানা সতর্কবার্তা দিয়েছে কেএনএফ।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours