সিটি সামলাতে কি জায়েদা খাতুন সক্ষম?

1 min read

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পর থেকে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন মাকে প্রার্থী করে নিজের দুর্নীতি ঢাকতে এই পন্থা অবলম্বন করছেন জাহাঙ্গীর আলম। আবার অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, নির্বাচনে জয়ী হলেও বৃহত্তম সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে জায়েদা খাতুনের সক্ষমতা কতটুকু। জায়েদা খাতুন হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বশিক্ষিত। জন্ম ১৯৬২ সালের ১ ফেব্রয়ারি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বলেছেন, অল্প সময়ে উত্থান হওয়া জাহাঙ্গীর আলম নিজে যে অপকর্ম করেছেন তার সেই অপকর্ম ঢাকতেই তিনি মাকে নির্বাচনে প্রার্থী বানিয়ে ভোটারদের সঙ্গে প্রতারণায় নেমেছেন। কারণ হিসেবে ওই নেতারা বলেন, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ৩ বছরের মাথায় মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করে দল থেকে বহিষ্কারের পর ক্ষমা পেয়েছেন। এবার সিটি নির্বাচনে তাকে দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটিও বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন। এরপর মাকে প্রার্থী বানিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। তারা মনে করেন এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুনের বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও নৌকা প্রতীকের সমন্বয় কমিটির মহানগর সদস্য মো. উসমান আলী বলেন, জায়েদা খাতুন নামে আমাদের গাজীপুরে পলিটিক্যাল লিডার আছে বলে আমরা জানতাম না। স্বতন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে এবার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে প্রথম দেখলাম। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর আলম যখন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তখনও জানতাম না তার মায়ের নাম কী। তবে জায়েদা খাতুন একজন গৃহিণী। কোনো সামাজিক, রাজনৈতিক অনুষ্ঠানেও দেখিনি। জাহাঙ্গীর আলম আগে থেকেই জানতেন তার মনোনয়নপত্র বাতিল হতে পারে, তখন তার মায়ের নামে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন। তখন জানতে পারলাম জায়েদা খাতুন হলেন জাহাঙ্গীর আলমের মা।

জায়েদা খাতুনের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিচিতির বিষয়ে জানতে চাইলে উসমান আলী বলেন, শুধু আমি নয়, গাজীপুরে কোনো নেতাকর্মী তাকে চিনতেন না। এমনকি তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু তাও নিশ্চিত নয়। তিনি নিজেই স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। আমরা তাকে আদর্শ গৃহিণী হিসেবে চিনি। জাহাঙ্গীর আলম যখন মেয়র ছিলেন তখন জায়েদা খাতুন ঘর সামলাতেই ব্যস্ত থাকতেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাজীপুরের মানুষ এত বোকা, মূর্খের এলাকা নয় যে, জায়েদা খাতুনের মতো একজনকে নির্বাচিত করবেন। তিনি বলেন, একজন মেয়র যখন দায়িত্ব পালন করবেন তখন দেশ-বিদেশের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। সিটি উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে প্রকৌশলীদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হয়, অনেক উন্নয়নমূলক কাজের তদারকি করতে হয় এবং বড় অনুষ্ঠানগুলোতে সাধারণ মানুষের কথা বলতে হয়। তিনি সিটি মেয়র হলে কীভাবে সামলাবেন এগুলো? কারণ তার পূর্ব অভিজ্ঞতা ধারে কাছেও নেই। মেয়র হলে বিভিন্ন স্বাক্ষর করতে হয়, বিভিন্ন আইনকানুন পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, এসব দেখার জন্য তার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য তার সেক্রেটারি (পিএস) নিয়োগ করতে হবে- যদি না তিনি নির্বাচিত হন। কারণ এত কিছু তার মাথায় ঢুকবে না। তিনি আরও বলেন, আমার জানামতে, জায়েদা খাতুনের স্বামীর বাড়ি নোয়াখালী। তিনি গাজীপুর সদরের কানাইয়া গ্রামের মেয়ে।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, জাহাঙ্গীর আলমের বাবা কৃষক মিজানুর রহমান নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থেকে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামে এসে বসতি গড়েন। পরে জয়দেবপুরের কানাইয়া গ্রামে বিয়ে করে শ^শুরবাড়িতেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে কৃষিকাজের পাশাপাশি বাজারে গেঞ্জি বিক্রি করতেন।

ওই গ্রামেই ১৯৭৯ সালে জায়েদা খাতুনের কোলজুড়ে জন্ম হয় জাহাঙ্গীর আলমের। মিজানুর রহমান-জায়েদা খাতুন দম্পতির দরিদ্রতায় মামা মোহাম্মদ আলমের কাছে বেড়ে উঠেন জাহাঙ্গীর আলম। এরপর মামার সংসারে থেকেই গাজীপুরের চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন জাহাঙ্গীর আলম। স্কুলজীবন থেকে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্থানীয় উল্কা সিনেমা হলে ব্ল্যাকে টিকেট বিক্রি করে পকেট খরচ চালাতেন। এসএসসি পাসের পর ভর্তি হন জেলার ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে। জাহাঙ্গীরের মামা মোহাম্মদ আলম সে সময়ের বিএনপি নেতা ও শিল্পপতি আবদুল আউয়াল মিন্টুর কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন। এ কারণে তার সঙ্গে জাহাঙ্গীরেরও সখ্য গড়ে ওঠে। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহমেদ বলেন, জায়েদা খাতুনের নির্বাচিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়াও তার কোনো যোগ্যতাও নেই। কারণ তার বর্তমান বয়স সত্তরের ওপরে এবং তিনি একজন গৃহিণী। রাজনৈতিক বা সামাজিকভাবে তাকে কেউ চিনতও না। একটা সিটি করপোরেশনের অনেক ধরনের কর্মকাণ্ড থাকে। যেমন, দেশি-বিদেশি, স্থানীয় সরকার, সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট এগুলো সমন্বয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কাজ একজন স্বশিক্ষিত নারী কীভাবে পরিচালনা করবেন। এগুলো জায়েদা খাতুনের পক্ষে করা কোনো দিনই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, মূলত হিংসাপরায়ণ হয়ে দাবার গুটি হিসেবে জাহাঙ্গীর আলম তার মাকে ব্যবহার করছেন।

কাজী ইলিয়াস আহমেদ আরও বলেন, জাহাঙ্গীর আলম বহিষ্কার হওয়ার পর হিরো থেকে জিরো হয়ে গেছেন। তার স্ত্রীও তাকে ছেড়ে গেছেন। নেতাকর্মী যারা ছিলেন টুকটাক তারাও ছেড়ে গেছেন। জাহাঙ্গীর আলম এখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে তার মাকে এখানে নিয়ে আসছেন নির্বাচন করাতে। নিজের গাড়ি কর্মীদের দিয়ে ভেঙে, হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খান ও আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর দোষ চাপিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। জাহাঙ্গীর আলম ভাবছেন, মানবিক কারণে গাজীপুরের মানুষ তার মাকে ভোট দেবেন। কিন্তু গাজীপুরের মানুষ এত বোকা না। একজন দুর্নীতিবাজের কথায় তার মাকে ভোট দেবেন না। জায়েদা খাতুনের পারিবারিক ও সামাজিক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ভাওয়াল রাজার এমন কোনো বংশধর নয়, যে তাকে গাজীপুরের মানুষ চিনবে। আঙুল ফুলে কলাগাছ হলে যা হয় তা-ই হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours