বিভক্তি চরমে, নতুন জোট নিয়ে বিএনপিতে হ-য-ব-র-ল!

1 min read

নিউজ ডেস্ক : সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন করতে মরিয়া বিএনপি। দলীয়ভাবে আন্দোলন সংগ্রামের ডাক এলেও সেখানে দলের নেতাকর্মীদের নেই আগ্রহ। যার ফলে তৃণমূলে আস্থা হারিয়েছে দলের হাইকমান্ড।

বিগত চার মাস ধরে নতুন জোটের কথা ভেবে আসছিলো প্রায় দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা জনবিচ্ছিন্ন দল বিএনপি। আর এই ভাবনা থেকেই নামসর্বস্ব বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে একের পর এক বৈঠক করছে দলটি। কিন্তু জোট গঠন করতে গিয়ে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে খোদ বিএনপিতে। এ নিয়ে মতবিরোধ, বিভক্তি এবং তিক্ততা চরম আকার ধারণ করেছে। তাই এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জোট গঠন করতে পারেনি বিএনপি।

গেলো বছরের মাঝামাঝিতে বিএনপি ঘোষণা দিয়েছিলো সরকারবিরোধী মতাদর্শের সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করবে বিএনপি। আন্দোলনে তাদের মূল দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

আর সেই লক্ষ্যে বিএনপি ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে। এই ধারায় পরবর্তীতে বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, এই বৈঠকের আলোকে তারা একটি অভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন করবেন। এই অভিন্ন কর্মসূচির ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন করা হবে। কিন্তু সেই পথচলাও যেনো থমকে গেছে।

এমনকি গত অক্টোবর থেকে বিএনপি যে বিভাগীয় সমাবেশগুলো করেছিল সেই বিভাগীয় সমাবেশেও বিএনপি কোনো জোট বা শরিককে আমন্ত্রণ জানায় নি। এরকম পরিস্থিতিতে শরিকদের মধ্যে এক ধরনের বিরক্তি এবং অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। সেটা দূর করার জন্য বিএনপি দ্বিতীয় ধাপে আবার বৈঠক শুরু করে। কিন্তু সময় গড়িয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি।

একটি সূত্র বলছে, বিএনপির মধ্যে এ ধরনের জোট নিয়ে রয়েছে অবিশ্বাস ও সন্দেহ। এর কারণ অতীতেও এমন জোট করে ভুগতে হয়েছে বিএনপিকে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করাটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল তা বিএনপির নেতারা এখন স্বীকার করেন।

তারা মনে করছেন যে, ওই ঐক্যফ্রন্ট ছিল বিএনপির বিরুদ্ধে পাতানো এক ফাঁদ। সেই ফাঁদে পা দিয়ে বিএনপি নিজের সর্বনাশ করেছে। কাজেই এখন আবার নতুন জোট গঠন করার পরিকল্পনাটি কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে চিন্তিত বিএনপির অনেক নেতাই।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বিএনপির একটি বড় অংশই কোনো জোটে যাওয়ার পক্ষে নয়। বরং একলা চলো নীতিতে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে আমরা। যখন নির্বাচনের সময় আসবে তখন বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এই জোটের অনেক দলই সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাত করতে পারে। ফলে বিএনপির ক্ষতি হতে পারে, যেমনটি হয়েছিল ২০১৮ সালে। আর এ কারণেই জোটের বিরোধিতা করছেন বিএনপির অনেক নেতাই।

দলীয় বৃহৎ একটি অংশের অনাগ্রহের কারণেই বিএনপি জোট গঠনের ক্ষেত্রে এক পা এগুচ্ছে, দুই পা পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন যে জোট গঠনের জন্য তারা এখন চূড়ান্ত পর্যায় পৌঁছে গেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কর্মসূচি এবং আন্দোলনের ধরন নিয়ে কথা কথাবার্তা হচ্ছে।

অপরদিকে বিএনপির অন্য আরেক নেতা বলছেন, জোটের নেতারা আন্দোলনের চেয়ে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে বেশি আগ্রহী। নির্বাচনের খবর নেই, আন্দোলনে বিজয় হবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই কিন্তু প্রথমেই জোটের নামসর্বস্ব দলগুলো এসে জাতীয় সরকার গঠন কিভাবে হবে, নির্বাচনে তারা কত আসন পাবে ইত্যাদি প্রসঙ্গগুলো উত্থাপন করেছেন। ফলে তাদের এই লোভাতুর দৃষ্টি-ভঙ্গি বিএনপির নেতাদেরকে সন্দেহপ্রবণ করছে, সদস্যদের বিরক্ত করছে।

এরকম পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত জোট হবে কিনা সেটি নিয়ে যেমন অনিশ্চিয়তার তেমনি এই জোট গঠনে যাদের যে সমস্ত কতিপয় নেতার আগ্রহ রয়েছে তাদেরকেও এখন বিএনপির নেতারা সন্দেহের চোখে দেখছে। জোট নিয়ে শেষ পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলনই এখন চোরাবালিতে আটকে গেছে। এই চোরাবালি থেকে বিএনপিকে কে উদ্ধার করবে, কিভাবে উদ্ধার করবে সেটিই এখন রাজনীতিতে বড় প্রশ্ন।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours