নতুন জোট নিয়ে বিএনপির মধ্যে অবিশ্বাস, সন্দেহ

1 min read

সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য বিএনপি নতুন জোটের কথা ভাবছিল। আর এই ভাবনা থেকেই গত চার মাস ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে পালা করে বৈঠক করছে দীর্ঘ ১৬ বছরের বেশি ক্ষমতায় বাইরে থাকা এই রাজনৈতিক দলটি।

কিন্তু জোট গঠন করতে গিয়ে ভজকট হয়েছে খোদ বিএনপিতে। বিএনপির মধ্যে এ নিয়ে মতদ্বৈততা, বিভক্তি এবং তিক্ততা চরম আকার ধারণ করছে। আর এ কারণে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জোট গঠন করতে পারেনি বিএনপি।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিএনপি ঘোষণা করেছিল যে সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করবে বিএনপি। তাদের প্রধান দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এই লক্ষ্যে বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পালা করে বৈঠক করা শুরু করে। এই ধারায় ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে। পরবর্তীতে বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় যে এই বৈঠকের আলোকে তারা একটি অভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন করবেন। এই অভিন্ন কর্মসূচির ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন করা হবে। কিন্তু সেই পথও এগোয়নি। বিএনপি একাই আন্দোলন আন্দোলন করে। এমনকি গত অক্টোবর থেকে বিএনপি যে বিভাগীয় সমাবেশ গুলো করেছিল সেই বিভাগীয় সমাবেশেও বিএনপি কোনো জোট বা শরিককে আমন্ত্রণ জানায়নি। এরকম পরিস্থিতিতে শরিকদের মধ্যে এক ধরনের বিরক্তি এবং অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। সেটা দূর করার জন্য বিএনপি দ্বিতীয় ধাপে আবার বৈঠক শুরু করে। কিন্তু সময় গড়িয়ে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত বিএনপি আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি।

কেন বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি—এ নিয়ে একাধিক মত পাওয়া গেছে। একটি সূত্র বলছে যে বিএনপির মধ্যে এ ধরনের জোট নিয়ে অবিশ্বাস, সন্দেহ রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন। ওই ঐক্যফ্রন্ট গঠন যে একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল তা বিএনপির নেতারা এখন স্বীকার করেন। তারা মনে করছেন যে, ওই ঐক্যফ্রন্ট ছিল বিএনপির বিরুদ্ধে পাতানো এক ফাঁদ। সেই ফাঁদে পা দিয়ে বিএনপি নিজের সর্বনাশ করেছে। কাজেই এখন আবার জোট গঠন করার মাধ্যমে বিএনপি নতুন কোনো ঝামেলায় জড়াবেন কিনা—এই চিন্তা বিএনপির মধ্যে অনেকের।

বিএনপির একটি বড় অংশই কোনো জোটে যাওয়ার পক্ষে নয়। বরং তারা একলা চলো নীতিতে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে। তারা মনে করে যে যখন নির্বাচনের সময় আসবে তখন বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এই জোটের অনেক দলই সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাত করতে পারে। ফলে বিএনপির ক্ষতি হতে পারে, যেমনটি হয়েছিল ২০১৮ সালে। আর এ কারণেই জোটের বিরোধিতা করছেন বিএনপির অনেক নেতাই। তাদের অনাগ্রহের কারণেই বিএনপি জোট গঠনের ক্ষেত্রে এক পা এগুচ্ছে, দুই পা পিছোচ্ছে। তবে বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন যে জোট গঠনের জন্য তারা এখন চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছে গেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কর্মসূচি এবং আন্দোলনের ধরন নিয়ে কথা কথাবার্তা হচ্ছে। তবে বিএনপির অন্য একজন নেতা বলছেন যে জোটের নেতারা আন্দোলনের চেয়ে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে বেশি আগ্রহী। নির্বাচনের খবর নেই, আন্দোলনে বিজয় হবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই কিন্তু প্রথমেই জোটের নামসর্বস্ব দলগুলো এসে জাতীয় সরকার গঠন কিভাবে হবে, নির্বাচনে তারা কত আসন পাবে ইত্যাদি প্রসঙ্গগুলো উত্থাপন করেছেন। ফলে তাদের এই লোভাতুর দৃষ্টি-ভঙ্গি বিএনপির নেতাদেরকে সন্দেহপ্রবণ করছে, সদস্যদের বিরক্ত করছে। এরকম পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত জোট হবে কিনা সেটি নিয়ে যেমন অনিশ্চিয়তার তেমনি এই জোট গঠনে যাদের যে সমস্ত কতিপয় নেতার আগ্রহ রয়েছে তাদেরকেও এখন বিএনপির নেতারা সন্দেহের চোখে দেখছে। জোট নিয়ে ভজঘট শেষ পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলনই এখন কাদায় আটকে গেছে। এই কাদা থেকে বিএনপিকে কে উদ্ধার করবে, কিভাবে উদ্ধার করবে সেটিই এখন রাজনীতিতে বড় প্রশ্ন।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours