সুসংগঠিত না হয়ে কাঁচের মতো টুকরো টুকরো বিএনপি

1 min read

নিউজ ডেস্ক: দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সবাই-ই মুখ খোলে। খুলতে বাধ্য হয়। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না। গুলশানের বাসায় গৃহপরিচারিকা ফাতেমার কাছে আক্ষেপ করে তিনি বললেন, আজ যা এতকিছু। সব কিছুর জন্য তারেকই দায়ী। তার জন্যই দলটা শেষ হয়ে গেছে। নেতাকর্মীরা কেউই এখন আর কোন আন্দোলন-সংগ্রামে আসতে চান না। আর কেনই বা আসবেন, তারেক কি দুর্ব্যবহার আর অবিচারটাই না করছে তাদের সঙ্গে। তারপরও তার মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। একদম ঠিক বাবার মতোই হয়েছে।

দায়িত্বশীল সূত্রের তথ্যমতে, প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। অথচ এই দীর্ঘ সময়েও সুসংগঠিত হয়নি দলটি। বরং ভেঙে যাওয়া কাঁচের মতো হয়েছে টুকরো টুকরো। দ্বন্দ্ব-কোন্দলে হয়েছে জর্জরিত। এ ব্যাপারে খালেদা-তারেকের উভয়ের ভুল সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ থাকলেও এখন দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুষছেন বড় ছেলে তারেক রহমানকে।

খালেদা জিয়ার ভাষ্য, তারেক রহমানের কারণেই আজ তার ও দলের এই অবস্থা। সবাই হাসাহাসি করে। দলের ভেতর এতো ভাঙন-কোন্দলের দায়ও তারেকের। সে সময় ‘হাওয়া ভবন’ বসে ওসব না করলে কি হতো না? এখন দেশে-বিদেশে তার জন্য মুখ দেখাবার উপায় নেই। সবাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বাংলানিউজ ব্যাংককে বলেন, অনেক দিন ধরেই ম্যাডাম (খালেদা জিয়া ) ও তারেক রহমানের মধ্যে নীরব রেষারেষি চলছে। একে-অপরকে বিভিন্ন বিষয়ে দুষছেন। কিন্তু এতে কার লাভ হচ্ছে? বরং তাদের দু’জনার এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিএনপি। দলের লোকের পাশাপাশি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ভোটাররাও। যে কারণে ব্যালট-ইভিএমে বারবার ঘটছে পরাজয়। তাদের মা-ছেলের এই দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার যুদ্ধ না থামলে, কোনদিনই আলোর পথে ফিরতে পারবে না বিএনপি। বরং প্রবেশ করবে অন্ধকারের অতল গহ্বরে।

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে খালেদার একাধিক ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর জানান, ছন্দহীনভাবে চলছে বিএনপি। ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) কারাগারে যাওয়ার পর নিজস্ব সাম্রাজ্য গড়ে তোলে তারেক, এমনকি ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) মুক্তি নিয়েও অর্থ বাণিজ্য করতে পিছপা হয়নি সে। শুধু তাই নয়, পদ-কমিটি-মনোনয়ন প্রদানেও করেছে রমরমা বাণিজ্য। যে কারণে তার স্বৈরাচারী মনোভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে দল ছেড়েছে অনেক পদবঞ্চিত নেতাকর্মী। যারা কিনা ছিলো রাজপথের পরীক্ষিত সৈনিক। অথচ টাকা ও নারীর লোভে অন্ধ তারেকের এসবে কিছুই যায় আসে না। যায় আসে না দেশে তার অসুস্থ মা কিভাবে আছে, কি অবস্থায় আছে। বরং তিনি লন্ডনে যাপন করছেন চোখ ধাঁধানো আয়েশি জীবন। মহাখুশি হয়ে তুলছেন ‘তৃপ্তির ঢেঁকুর’। আর এসব বিষয় নিয়েই তার উপর মহাবিরক্ত ম্যাডাম (খালেদা জিয়া)।

তার কথা, ‘আমার কারামুক্তির ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আগ্রহ না দেখিয়ে যে ছেলে নিজের আখের গোছানোয় ব্যস্ত থাকে, নিজের স্বার্থের জন্য দলীয় আদর্শ বিসর্জন দেয়, তাকে আর নতুন করে কি বলার অপেক্ষা রাখে। তার কাজই তো তার পরিচয়, ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। সে এতোটাই স্বার্থপর যে, মায়ের জন্য তার সময় নাই, ছোট ভাই কোকো মারা গেলো, তার জন্যও সে ফিরল না জেল খাটার ভয়ে। অথচ এই আমি ঠিকই সাজা ভোগ করছি।’

এ বিষয়ে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সব চাওয়া পূর্ণ হয় না। তাই খালেদার আশাও পূর্ণ হয়নি। ছেলে তারেকও হয়নি মানুষের মতো মানুষ। রয়ে গেছে বাবার মতো অমানুষ। শুধুমাত্র তার কারণেই আজ যাদুঘরের রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে বিএনপি। যেখান থেকে চাইলেও আর সহজে ফিরতে পারবে না দলটি। আর ফিরবেই বা কি করে? দুর্নীতি-লুটপাটের মাধ্যমে সব পথ তো তারেকই বন্ধ করে গেছে। কম যান না খালেদাও। তিনিও ছেলেকে সে সময় সমর্থন যুগিয়ে এখন করছেন হা-হুতাশ। তখন শাসন করলে, পথ আগলে দাঁড়ালে কি এখন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো? কখনই না। তাই তারা উভয়ই সম দোষী। তাদেরকে বাংলার মানুষ ও ইতিহাস ক্ষমা করবে না।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours