আব্দুল মুত্তালিব চিশতি। সবসময় তার পরনে থাকে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা। মাথায় তার লম্বা টুপি। প্রতি সপ্তাহে তার আস্তানায় জড়ো হয় মুরিদরা। তখন কাফনের সাদা কাপড় পরে দেয় ধর্মীয় বয়ান, ধরে লম্বা মোনাজাত। সবাই তাকে চেনেন বড় বুজুর্গ আর পীর হিসেবে। যদিও সর্বসাকুল্যে মাত্র তিনটি সুরা মুখস্থ তার। এসবের আড়ালে প্রতারণা করে হাতিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
জানা গেছে, ধর্মীয় লেবাসে থাকলেও সমকামীদের দুটি ওয়েবপেজের পরিচালক সে। নিজেও সমকামী। আছে দুইশ ‘বালকবন্ধু’। মঙ্গলবার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এই ভণ্ড পীরকে রাজধানীর তুরাগ থেকে গ্রেফতারের পর তার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, মুত্তালিব চিশতি এতটাই বদ প্রকৃতির যে, যৌন হয়রানি আর প্রতারণা করতে সে ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। আস্তানায় তার কথিত ওরসে নানা অভিনয়ে আশেকানরা দিতেন অশ্রু বিসর্জন। ওই সময় নিজে চোখ বন্ধ করে ‘ধ্যানে’ থাকলেও কখনও কখনও চোখ খুলে বিকৃত লালসা পূরণে সন্ধান করতেন শিকারের। ডিবির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ধান্ধাবাজি আর প্রতারণায় ধর্মের পাশাপাশি রাজনীতিকে ব্যবহার করার কৌশল আয়ত্ত করেছিল এই ভণ্ড পীর।
এরই মধ্যে একটি চক্রকে নিয়ে গড়ে তুলেছে ‘আওয়ামী নির্মাণ শ্রমিক লীগ’। সাইনবোর্ড-সর্বস্ব ওই সংগঠনের সে সিনিয়র সহসভাপতি। এই পদবি ব্যবহার করে কৌশলে দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে সেলফি আর ছবি তুলত সে। সে পরিচয়ে সচিবালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় আর দপ্তরে ছিল অবাধ যাতায়াত। একদিকে পীরবাদের বয়ান, অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণার জন্য সফর করত দেশের নানা জায়গায়। তার অভিনয়ে লোকজন মুরিদ হলেই নানা কৌশলে নেয়া হতো টাকা, পছন্দ হলে বিকৃত লালসা পূরণে করত বাধ্য।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ভণ্ড চিশতি বিভিন্ন দফতরে মাস্টাররোলে চাকরি দেওয়া, রাজউকের বিভিন্ন প্রকল্পে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট স্বল্পমূল্যে বরাদ্দ দেওয়া, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার চেয়ারম্যান-মেম্বার, মেয়র-কাউন্সিলর দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে একেকজনের কাছ থেকে নিয়েছে ছয় থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, চিশতির ঘরে দুই স্ত্রী রয়েছেন। আরও তথ্য জানতে তাকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
+ There are no comments
Add yours