জিয়ার লাশ শনাক্তের একমাত্র উপায় ডিএনএ পরীক্ষা

1 min read

নিউজ ডেস্ক: নতুন করে আবারো আলোচনায় চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ আছে কি নেই। অবশ্যই এটি বাস্তববাদী প্রশ্ন। যদি সত্যিই সেখানে জিয়ার মরদেহ না থাকে তাহলে স্বামী ভেবে কাকে ফুল দিচ্ছেন খালেদা জিয়া? আর কাকেই বা পিতা ভেবে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছেন তারেক রহমান? দেশবাসীর মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে রয়েছে ব্যাপক সন্দেহ। এখন এই সন্দেহ দূর করতে পারে একমাত্র বেগম খালেদা জিয়া। তাই দাবি উঠেছে ডিএনএ পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে জিয়ার লাশের অস্তিত্ব নিশ্চিত করার।

কথায় আছে, যেকোনো রটনার পেছনে কোনো না কোনো ঘটনা থাকে। তেমনি জিয়ার লাশ নিয়েও যে রটনাটি আজ নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে তার পেছনেও ঘটনা রয়েছে। বাংলা নিউজ ব্যাংকের তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়- চন্দ্রিমায় জিয়ার কবরে যে লাশ রয়েছে সেটি জিয়ার নয়। এমনি জিয়ার লাশ কোথায় আছে তার সঠিক কোন তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, প্রথম যে গণকবরে দাফন করা হয়েছিল সেখানেও ‘জিয়ার লাশ’ নিশ্চিত না হয়েই দাফন করা হয়েছিল। আসলে জিয়াউর রহমানের লাশ কেউ দেখে নাই। এমনকি খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া, বিচারপতি সাত্তারও দেখে নাই। আবার যখন পুনরায় দাফনের জন্য পাথরঘাটা থেকে যে লাশ তুলে ঢাকায় আনা হয় সেই লাশের পরনে ছিল কমব্যাট ড্রেস। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন যে, কাঠের বাক্সে থাকা লাশের পরনে ছিল কমব্যাট ড্রেস। জিয়াউর রহমান তখন প্রেসিডেন্ট। তখন তার কমব্যাট ড্রেস পরার কথা না। তার মানে এটাই প্রমাণ হয় চন্দ্রিমায় জিয়ার কবরে যে লাশটি রয়েছে তা জিয়ার নয়।

জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন মেজর মোজাফফর। ১৯৯৪ সালে প্রোবের সম্পাদক ইরতিজা নাসিম আলীর ‘রহস্যাবৃত জিয়া হত্যাকাণ্ড’ শিরোনামে ধারাবাহিক প্রতিবেদনে মেজর মোজাফফরের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল।

সেখান থেকে জানা যায়, জ্যেষ্ঠ কর্তা কর্ণেল মতিউরের নির্দেশ ছিলো- রাতে নিহত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মরদেহ রাঙ্গামাটির কাছে কোন পাহাড়ের নিচে ফেলে দিতে হবে যাতে কেউ খুঁজে না পায়। স্পষ্ট করেই নির্দেশ দিয়ে কর্ণেল আরো বলেছিলেন, জিয়াকে দাফন করে জাতীয় বীর বানানোর প্রয়োজন নেই। মেজর মোজাফফর নিহত রাষ্ট্রপতির দেহের সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন আরো দু’জন সামরিক কর্মকর্তার মরদেহ। তবে চেহারা দেখে শতভাগ নিশ্চিত হবার সুযোগ ছিল না কোনটা কার লাশ।

১৯৮১ সালের ৩০ মে সকালে জিয়াউর রহমানের লাশ সনাক্ত ও দাফন সম্পর্কিত বর্ণনা দিতে গিয়ে মেজর মোজাফফর বলেছিলেন, কর্ণেল মতিউরের নির্দেশে কয়েকজন সৈনিক নিয়ে সকাল ১০টার দিকে তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে যান। দোতলায় ওঠার পথে দেখতে পান রক্তে ভেজা সিঁড়িতে পড়ে আছে কয়েকটি লাশ। যাদের দেখে বোঝা যাচ্ছিলো তারা প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সদস্য।

ধারণা করা হয়, আক্রমণের প্রথমেই এদের সবাই বুলেটবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন। দোতলায় গিয়ে দেখতে পান সিঁড়ির পাশের কক্ষের দরজা অর্ধেকটা খোলা অবস্থায়। সেখানে উপুড় হয়ে পড়ে আছে একটি মরদেহ। রক্তে ভেসে যাওয়া কার্পেটের রং পাল্টে হয়ে গেছে কালো। দেহটিকে ঘুরিয়ে ধারণা করলেন মরদেহটি রাষ্ট্রপতিরই হবে। যদিও কক্ষটি রাষ্ট্রপতির জন্য বরাদ্দ ছিলো না। এখান থেকেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি কোনটা তৎকালীন প্রেসিডেন্টের লাশ।

চেহারা দেখে চেনার উপায় নেই। এসএমজির ম্যাগজিনে থাকা সমস্ত বুলেট চেহারা, মাথা ও বুক ঝাজরা হওয়া মরদেহটিকে জিয়াউর রহমানের লাশ বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। একটু এগিয়ে বারান্দায় তাকিয়ে দেখতে পান অতি পরিচিত দুজন সামরিক কর্মকর্তার মরদেহ পড়ে আছে সেখানে। একজন লে. কর্নেল আহসান আর অন্যজন ক্যাপ্টেন হাফিজ। গুলি লেগেছিল তাদের বুকে।

মেজর মোজাফফর আবারো এগিয়ে গেলেন মরদেহের দিকে। মরদেহ আচ্ছাদনের কিছুই নেই হাতের কাছে। কয়েকজন সৈনিকের সহায়তায় ৩ টি মরদেহ চাদর দিয়ে জড়িয়ে, সেনাবাহিনীর গ্রাউন্ড সিট দিয়ে মুড়ে দিলেন। দোতলা থেকে ধরাধরি করে লাশগুলো নিচে নামিয়ে সৈনিকরা তুলে নিলো পিকআপে। সার্কিট হাউস থেকে বেড়িয়ে জিপ আর পিকআপ পৌঁছে গেলো পাথরঘাটার খেজুর গাছের তলে।

গাড়ি থেকে নেমে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সিদ্ধান্ত নিলেন এখানেই দাফন করবেন সাথে থাকা ৩টি মরদেহ। পালন করবেন ধর্মীয় রীতিনীতি। সাথে থাকা সৈনিকরা কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করেছে আগেই। জানাজার ইমামতি করার জন্য নিয়ে আসা মৌলভীকে মেজর জানালেন, শান্তি বাহিনীর গুলিতে তাদের ৩ জন অফিসার নিহত হয়েছেন, দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। ইমামসহ স্থানীয় লোকজন ৩টি মরদেহের গোসল পর্ব শেষ করলেন। বুলেটে ঝাঁজরা লাশগুলি দেখে কেউ চিনতেও পরালেন না কোনটি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের। বড় করে খোঁড়া একটি কবরের মধ্যেই ৩ জনকে দাফন করা হলো এক সঙ্গে। অনেকটা গণ কবরের মত করে। তিন জনের মধ্যে জিয়া ছিল কিনা তা নিয়ে সন্দেহ ছিল মেজর মোজাফফরেরও।

তার ৩ দিন পর সেখান থেকে লাশ তুলে এনে একটি মরদেহ ঢাকার সংসদ ভবনের চন্দ্রিমা উদ্যানে স্থানান্তর করা হয়। এ মরদেহটি আসলেই জিয়াউর রহমানের ছিলো কিনা তা নিয়ে সন্দেহ ও বিতর্ক চলছে এখনো। আর এখন এর সমাধান হতে পারে একমাত্র ডিএনএ টেস্টের মধ্য দিয়ে। তাছাড়া এই বিতর্ক চলতেই থাকবে।

+ There are no comments

Add yours