‘ঘুমিয়ে থাকা নেতা’র সংখ্যা বাড়ছে বিএনপিতে!

1 min read

নিউজ ডেস্ক: যতই দিন যাচ্ছে, ততই যেন অলস-অথর্ব-অকর্ম নেতায় ভরে যাচ্ছে বিএনপি। প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা এই রাজনৈতিক দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম শূন্যের কোঠায়। দিবসকেন্দ্রিকতায় কালেভদ্রে সভা-সমাবেশের আয়োজন করা হলেও সেখানে আসেন না অধিকাংশরাই। দু’একজন যারা আসেন কিংবা করোনাকালে ভার্চুয়াল মিটিংয়ে নাম মাত্র হাজিরা দেন, তাদের বেশিরভাগই সময়ক্ষেপণ করেন গল্প করে। আবার কেউবা ‘একঘেয়ে আলোচনা’ শুনে পড়েন ঘুমিয়ে। সম্প্রতি একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটায়, বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন উঠেছে।

বিশিষ্টজনরা বলছেন, কথায় জোর থাকলেও মাঠে ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতা নেই বিএনপির। এ কথা দলটির নেতৃবৃন্দ খুব ভালো করেই জানেন। এ কারণে তারা দলের পরিবর্তে ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোনিবেশ করছেন বেশি। আর অধিক জোরাজুরিতে যারা দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেন, তারাও থাকছেন না থাকার মতো। তাই বলাই বাহুল্য, বিএনপিতে দেদারছে বাড়ছে এমন ‘ঘুমিয়ে থাকা নেতা’র সংখ্যা।

বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্যমতে, হাইকমান্ডের ব্যর্থতা, কোন্দল, একপেশে মনোভাব এবং সমন্বয়হীনতার কারণেই বিএনপি আজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এ কারণে দলটির কেন্দ্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেতা ছাড়া বেশির ভাগ নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ বিদেশেও চলে গেছেন। আবার অনেকে পরিস্থিতি ‘সুবিধাজনক’ না দেখে গা ঢাকা দিয়েছেন। যে ক’জনা এখনও ‘অনুরোধে ঢেঁকি গেলা’র মতো করে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশ নেন, বা নিচ্ছেন তারা অনেকটা ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আমরা অনেক কিছুই মন মতো করতে পারি না। উপর মহলের চাপ থাকে। তাছাড়া মানুষের এখন রাজনীতিতে আগ্রহও তেমন নেই। সবাই যে যার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি নেই। টুকটাক যা চলছে, তাও ঘুমিয়ে চলার মতো।

বাংলানিউজ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হয় বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, কোনভাবেই এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিএনপিতে চেইন অব কমান্ডের ঘাটতি আছে। আছে তারেকের স্বৈরতন্ত্র। এ কারণে দলীয় রাজনীতির প্রতি আগ্রহ নেই নেতাকর্মীদের। ‘ধরে বেঁধে’ যে ক’জনাকে আনা হয় মিছিল-মিটিং কিংবা অনলাইন সভায় তারাও ঘুমিয়ে সময় কাটান। এটাই হওয়া স্বাভাবিক, তাই নয় কি?

তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে বিএনপির উচিত দ্রুত সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসা। বিশেষ করে তরুণদের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে। যারা বার্ধক্যে পৌঁছেছেন তাদের অবসরে যাওয়া উচিত। কারণ, মাঠের রাজনীতিটা খুব জরুরি। তাছাড়া লন্ডন থেকেও দল চালানোর ঐতিহ্যটা পরিহার করতে হবে। তাহলে বিএনপির বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন হলেও হতে পারে।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সংবাদ সম্মেলন, নালিশ ও কূটনৈতিকদের কাছে সরকারের নামে গীবত করেই এখন সময় কাটে বিএনপির। কাজের কাজ বলতে এগুলোই করে তারা। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের বেলায় দলটির নেতাকর্মীরা লবডংকা। আর এ কারণেই বিগত অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে ধারাবাহিকভাবে ভরাডুবি হয়েছে দলটির। যার প্রেক্ষিতে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে এখন ঘুমিয়েই সময় কাটছে নেতাকর্মীদের। আর দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এদের সংখ্যা। সঙ্গে রয়েছে নিজেদের ভুল-ভ্রান্তি ও বিভেদের রাজনীতি। সবমিলিয়ে জাদুঘরের রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে বিএনপি। যেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর আর কোন পথ খোলা নাই।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours