বিএনপিতে এখন প্রকাশ্যেই তারেক বিরোধিতা

1 min read

নিউজ ডেস্ক: খালেদা জিয়ার অবর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বা দলের শীর্ষ নেতার পদে থাকা তারেক রহমানের পক্ষে সমর্থন কমে আসছে ধীরে ধীরে। বিতর্কিত বিভিন্ন সিদ্ধান্তে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনিয়র নেতারাই এখন তারেকের বিপক্ষে কথা বলছেন। প্রকাশ্যেই বিরোধিতা করছেন তারেক কর্মকাণ্ডের। এ পরিস্থিতিতে দিনে দিনে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।

কমিটি বাণিজ্য নিয়ে মুখ খুলছেন নেতারা

গত প্রায় চার বছর ধরে তারেক রহমান দলে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। ইতিমধ্যে নিজের পছন্দমতো অনেক জেলা কমিটি গঠন করেছেন। ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিও দিয়েছেন। প্রতিটি কমিটিতেই ছিল বিতর্ক আর অর্থ লেনদেনের অভিযোগ।

সম্প্রতি তার দেওয়া ঢাকা মহানগর বিএনপির দুটি আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে উত্তেজনা যেন কিছুতেই কমছে না। বরং এই কমিটি গঠনের পর প্রতিদিন নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হচ্ছে।

তারেকবিরোধী বিএনপির অধিকাংশ নেতাই স্বীকার করছেন, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ব্যাপক টাকার লেনদেন হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ২০ টাকা লেনদেনের কথা বলছেন তারা।

নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব

গতকাল শুক্রবার সকালে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিতে গিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, তারেক রহমান দেশে আসলেই বিএনপি রক্ষা পাবে, আমরাও ক্ষমতাও যেতে পারব। কিন্তু একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল দলের অভ্যন্তরে থেকে আমাদের নেতাকে দেশে আসতে বাধা দিচ্ছে।

তার কথার বিরোধীতা করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রিজভীর কথাবার্তা বাস্তববর্জিত, আবেগ দিয়ে রাজনীতি হয় না।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, তারেক রহমান সিনিয়র কোনো নেতার পরামর্শ ছাড়াই সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদকে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আনেন। তাদের অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে দলে। সিনিয়র নেতারা মনে করেন এই দুজনের পাশাপাশি স্থায়ী কমিটির শূন্য পদে আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করা যেত।

এর আগে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত মওদুদ আহমদের মতামত ছাড়াই তার নির্বাচনী এলাকা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় দলের দুটি কমিটি দেন তারেক। এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় তারেক রহমান মওদুদ আহমদকে বলেছিলেন, ‘আপনি মনোনয়ন পাবেন, এমপি হলে মন্ত্রী হবেন- এ বিষয়ে আপনার মাথা ঘামানোর দরকার নেই।’

এদিকে শোকজ ইস্যু নিয়ে দলটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সাথে তারেকপন্থী নেতাদের বাকবিতন্ডার কারণে মির্জা আব্বাস, মেজর হাফিজ উদ্দিনের মতো নেতারা প্রকাশ্যেই তারেক রহমানের বিরোধীতা করেন। এছাড়াও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং আব্দুল্লাহ আল নোমান- এর মতো নেতারা তারেকের নেতৃত্ব নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। ফলে তারেকপন্থীদের সাথে তারেকবিরোধীদের দ্বন্দ্বের চিত্র এখন হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে বিএনপিতে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিএনপিতে এ ধরণের ঘটনা আরও ঘটবে। এক সময় নেতৃত্বহীন হয়ে পড়বে দলটি। কারণ পারিবারিকভাবে দলটিতে গণমানুষের জন্য ত্যাগ শিকার করার মতো নেতা নেই। এছাড়া অন্য নেতাদের দলের শীর্ষ নেতৃত্বে আসতেও দিতে চান না খালেদা। তাই এখন পর্যন্ত তাদের ভরসা দুর্নীতিে দায়ে পলাতক আসামি তারেক রহমানের প্রতি।

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মতে, শক্তিশালী প্রাণী ডাইনোসরও বিলুপ্ত হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের এই পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতিও আগামী দিনে বদলাবে। তাই পারিবারিক মালিকানা বাদ দিয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের সামনে এনে দলের মধ্যেই খালেদা জিয়ার গণতন্ত্রের চর্চা শুরু করা উচিত।

+ There are no comments

Add yours