ডিজিটাল পদ্ধতিতে ৫০ লাখ পরিবারে নগদ অর্থ পাঠিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

1 min read

নিউজ ডেস্ক: করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। ভাতা পাওয়ার তালিকায় আছেন রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক ও হকারসহ নিম্ন আয়ের নানা পেশার মানুষ।

তালিকাভুক্তদের মধ্যে নগদ, বিকাশ, রকেট এবং শিউরক্যাশ’র মাধ্যমে সরাসরি চলে যাবে এই টাকা। ফলে বাড়তি কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না তাদের। টাকা পাঠানোর খরচ সরকার বহন করবে। এই টাকা উত্তোলন করতে ভাতাভোগীদের কোন খরচও দিতে হবে না। এই ৫০ লাখ পরিবারের বাইরে আরও ৫০ লাখ পরিবারের প্রায় ২ কোটি সদস্য আগে থেকেই ভিজিএফ কার্ডের আওতায় রয়েছে। এই কার্যক্রমে যুক্ত থাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সম্প্রতি গণভবনে ভিডিও ককনফারেন্সে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে ৫০ লাখ সুবিধাভোগীর হিসাবে সরাসরি নগদ অর্থ পাঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সময় ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। এই ডিজিটাল কর্মসূচিতে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ। তিনি বলেন, যারাই দুর্নীতির চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনাসংকটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের মানুষের সহায়তায় যে মানবিক উদ্যোগ নিয়েছেন তা বিশ্বে নজিরবিহীন। সোশ্যাল সেফটিনেটের (সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী) মতো এমন উদ্যোগ উন্নয়নশীল বিশ্বে আর দুয়েকটা নেই। বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম মানবিক উদ্যোগ আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ নিতে পারেনি। তাই এই দুর্যোগে ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকারবিরোধী একটি মহল দেশে ও দেশের বাইরে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য সন্ত্রাস করছে। সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের এই তথ্য সন্ত্রাস রুখে দিতে প্রস্তুত আছে। প্রধানমন্ত্রীর এই মানবিক উদ্যোগে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই। সরকারের সিস্টেমে এটি ধরা পড়েছে। অন্য কেউ ধরেনি। যে চার-পাঁচ জায়গায় এরকম হয়েছে সেখানেই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ নিয়ে ড. সেলিম মাহমুদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘আজ সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু ওয়েবলিংক দেখলাম যেখানে দেখা যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাসের কারণে সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারকে এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যে অর্থ পাঠিয়েছেন, কয়েকটি জেলায় প্রায় ৫০/৬০টি কিংবা তারও অধিক অ্যাকাউন্টে একই মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে কেউ কেউ এটিকে দুর্নীতি হিসেবে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে আমি প্রথমে সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে জানায় যে, আমাদের অনলাইন সিস্টেমেই এই অসঙ্গতিগুলো ধরা পড়েছে। আর ওই সকল অসঙ্গতিপূর্ণ অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা যায়নি। তারা আরও জানান, এই সকল অসঙ্গতি দূর করে নতুনভাবে তালিকা প্রেরণের জন্য ইতোমধ্যে ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে মাঠপ্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

স্ট্যাটাসে তিনি আরও লিখেন, ‘এই কর্মসূচিটি যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে, তাই বিষয়টি নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জনাব ড. আহমদ কায়কাউসের সাথে টেলিফোনে কথা বলি। তিনি আমাকে বিষয়টি অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, এই ডিজিটাল কর্মসূচিতে একজনের নামে বা একজনের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে অন্য কারও অর্থ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি বলে থাকে যে, কারও কারও মোবাইল ফোন নেই, তাই অন্য কারো মোবাইল নম্বর দেওয়া হচ্ছে, আমাদের সিস্টেমে এটি গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই। সিস্টেম এটি গ্রহণ করবে না। শুধু মোবাইল নম্বর থাকলেই হবে না, তার সাথে ভোটার আইডি কার্ড নম্বরও থাকতে হবে। প্রতিটি ব্যক্তির মোবাইল ফোন নম্বর আর ভোটার আইডি নম্বর ভেরিফাই করে টাকা ছাড় করানো হবে। তাছাড়া, যে ব্যক্তিকে টাকাটা পাঠানো হবে, সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী তিনি এটি প্রাপ্য কিনা সেটিও সিস্টেম দেখবে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় সকল পরিবারেই ন্যূনতম একটা মোবাইল ফোন রয়েছে। তাই মোবাইল নম্বর নেই- এই অজুহাতে অন্য কারও নম্বরে টাকা গ্রহণ করা বা পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মসূচিতে দুর্নীতি করার কোনো সুযোগ নেই। যারাই দুর্নীতি করার চেষ্টা করবেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ড. সেলিম মাহমুদ লেখেন, ‘দেশে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রয়েছেন চার হাজার ৫৭১ জন, ইউপি সদস্য রয়েছেন ৪১ হাজার ১৩৯ জন আর নারী সদস্য আছেন ১৩ হাজার ৭১৩ জন। এর মধ্যে ৪/৫ জন এই অসঙ্গতিপৃর্ণ বা অন্যায় কাজটি করেছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো এই বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আর এই কয়েকটি অসঙ্গতি বা অনিয়ম সরকারের সিস্টেমেই ধরা পড়েছে। সরকারই এটি উদঘাটন করেছে।’

তিনি তুলে ধরেন, ‘বাংলাদশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সরকার প্রধান ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ আড়াই হাজার টাকা করে ঈদ উপহার হিসেবে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা দিয়েছেন। এটি একটি ইতিহাস। প্রতি পরিবারে ন্যূনতম চারজন সদস্য ধরলে দেশে মোট উপকারভোগী মানুষের সংখ্যা দুই কোটি। আর প্রতি পরিবারে সদস্য পাঁচজন ধরলে মোট উপকার ভোগী মানুষের সংখ্যা আড়াই কোটি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার এই নগদ সহায়তা পেয়ে খুশী তৃণমূলের সাধারণ মানুষ। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই মানবিক উদ্যোগে ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকারবিরোধী কিছু লোক সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচারে নেমেছে। তাদের সকল তথ্য সন্ত্রাস নির্মূল করার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাদেশে মেম্বর ৪১ হাজার ১৩৯ জন, মহিলা মেম্বর ১৩ হাজার ৭১৩ জন, ইউপি চেয়ারম্যান ৪ হাজার ৫৭১ জন। এর মধ্যে ৪/৫ জন এই অপকর্মটি করেছেন। কেউ একই নম্বর দিয়েছেন ৫০ জনের নামের বিপরীতে। এটাতো কোনো সাংবাদিক বা অন্য কেউ ধরেনি। এটা সরকারই ধরেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কীভাবে? এটার একটি অটোমেটিক সিস্টেম আছে। ভোটার আইডি কার্ড, নামের সঙ্গে ভোটার আইডি ও ফোন নম্বর; এই তিনটি বিষয় ম্যাচ করলেই কিন্তু টাকাটা যাবে। আদারওয়াইজ টাকাটা যাবে না। এক নম্বরে একাধিক বার টাকা যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। বাইরে থেকে কেউ যদি করেও থাকে তাহলে কিন্তু এটা ধরা পড়বেই।‘

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, সদস্য, শিক্ষক, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিএই তালিকা তৈরি করেছেন। ভাতা পাওয়ার তালিকায় আছেন রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক ও হকারসহ নিম্ন আয়ের নানা পেশার মানুষ। তালিকাভুক্তদের মধ্যে নগদ, বিকাশ, রকেট এবং শিউরক্যাশ’র মাধ্যমে সরাসরি চলে যাবে এই টাকা। ফলে বাড়তি কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না তাদের। টাকা পাঠানোর খরচ সরকার বহন করবে। এই টাকা উত্তোলন করতে ভাতাভোগীদের কোন খরচও দিতে হবে না। এই ৫০ লাখ পরিবারের বাইরে আরও ৫০ লাখ পরিবারের প্রায় ২ কোটি সদস্য আগে থেকেই ভিজিএফ কার্ডের আওতায় রয়েছে। এই কার্যক্রমে যুক্ত থাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours