সিরাজের পালিত শিবির ক্যাডারদের পরিকল্পনায় নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়!

0 min read

নিউজ ডেস্ক: যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার আগের রাতে মাদ্রাসার ‘অবৈধ ছাত্রাবাসে’ গোপন বৈঠক করেছিল অভিযুক্ত অধ্যক্ষ (বর্তমানে বরখাস্ত) সিরাজের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা। মামলার আসামিসহ সন্দেহভাজন কয়েকজনকে ওই রাতে ছাত্রাবাস থেকে বের হতে দেখেছে স্থানীয় লোকজন।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তরের আগ পর্যন্ত নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন সোনাগাজী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘নুসরাতের বাসায় মঙ্গলবার তল্লাশি চালিয়ে তার পড়ার টেবিলের একটি খাতার ২ পাতায় সিরাজের অপকর্ম নিয়ে লেখা পান। তিনি সেগুলো মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করেন।’ নুসরাতের চাচাতো ভাই মো. ফয়েজ বলেন, ‘লেখাটি নুসরাতের নিজের হাতে লেখা। আমাদের সামনে পুলিশ অন্য খাতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে খাতাগুলোও নিয়ে গেছে।’

ওই খাতার একটি পাতায় লেখা আছে, ‘আমি লড়বো শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। আমি প্রথমে যে ভুলটা করেছি আত্মহত্যা করতে গিয়ে। সেই ভুলটা দ্বিতীয়বার করবো না। মরে যাওয়া মানেই তো হেরে যাওয়া। আমি মরবো না, আমি বাঁচবো। আমি তাকে শাস্তি দেব যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেব যে তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নিবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেব ইনশাআল্লাহ।’

আরেকটি পাতায় নুসরাত লিখেছে, ‘তামান্না, সাথী। তোরা আমার বোনের মতো এবং বোনই। ওই দিন তামান্না আমায় বলেছিল, আমি নাকি নাটক করতেছি। তোর সামনেই বললো। আরো কি কি বললো, আর তুই নাকি নিশাতকে বলেছিল, আমরা খারাপ মেয়ে। বোন, প্রেম করলে কি সে খারাপ? তোরা সিরাজ উদ দৌলা সম্পর্কে সব জানার পরও কিভাবে তার মুক্তি চাইতেছিস। তোরা জানিস না, ওই দিন রুমে কি হইছে?’

এদিকে মাদ্রাসার পুরনো ভবনের ৩য় তলায় হেফজখানার পাশে দুটি কক্ষে কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের অনুমোদন বা অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে ছাত্রাবাস গড়ে তুলেছিলেন অধ্যক্ষ সিরাজ। সেখানে পরীক্ষার্থীদের নাম করে তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা থাকত।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, মাদ্রাসা কমপ্লেক্সের মধ্যে ছাত্রীদের জন্য টয়লেট আছে সাইক্লোন শেল্টার ভবনের ৪ তলায়, ছাদে। ওই ছাদেই নুসরাত যাওয়ার পর তার শরীরে আগুন দেওয়া হয়। গোপনে কেউ নুসরাতকে বান্ধবী নিশাতের ‘বিপদের’ তথ্য দেয়। এতে সন্দেহ করা হচ্ছে, ছাদে বোরকা পরা আক্রমণকারীদের মধ্যে কথিত শম্পাসহ (যে নাম নুসরাত শুনেছে) এক বা একাধিক নারী ছিল। তবে গতকাল পর্যন্ত আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করতে পারেনি তদন্তকারীরা। সংশ্লিষ্ট কেউ এ ব্যাপারে এখনো কোনো সূত্র খুঁজে পায়নি।

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে মাদ্রাসার এক শিক্ষক বলেন, শনিবার সকালে নুসরাতের শরীরে আগুন দেওয়ার আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ফাজিল শ্রেণির ছাত্র নূর উদ্দিন এবং আলিম পরীক্ষার্থী নাসির উদ্দিনকে মাদ্রাসার ছাত্রাবাস থেকে বের হতে দেখেন। সেখানে মামলার আরেক গ্রেফতারকৃত আসামি আরিফুর রহমানও অবস্থান করছিল বলে জানা যায়। পরীক্ষার আগে এত রাতে জ্যেষ্ঠ একজনের সঙ্গে নাসিরকে দেখে তার সন্দেহ হয়। নূর উদ্দিন মামলা দায়েরের পর সিরাজের পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সামনের সারিতে ছিল।

মাদ্রাসার কাছের এক দোকানি বলেন, শনিবার সকালে নুসরাত অগ্নিদগ্ধ হওয়ার সময়ই তিনি শিবির ক্যাডার নূর উদ্দিনকে দ্রুত চলে যেতে দেখেন। তখন তিনি ডাকালেও নূর দাঁড়ানো যাবে না বলে জানায়।

মাদ্রাসার অফিস সহকারী (যিনি সব হিসাবের কাজ করেন) সিরাজুল হক বলেন, ‘এখানে অফিশিয়ালি কোনো ছাত্রাবাস নেই। অধ্যক্ষ দুটি রুমে ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এ ব্যাপারে আমি জানি না। তবে হেফজখানায় ১২ ছাত্র এবং ১ জন শিক্ষক আছেন। মাদ্রাসা থেকেই তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।’

মাদ্রাসার একাধিক সূত্র জানায়, দুটি কক্ষে প্রতিবছরই নেতা শ্রেণির কিছু ছাত্রকে বিনে খরচে থাকার ব্যবস্থা করে দেন সিরাজ। এর ফলে তারা অনুগত হয়। এরা বিভিন্ন সময় তার পক্ষ নিয়ে বিবাদে জড়ায়। শিবির ক্যাডার নূর উদ্দিন, স্বঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন শামীমসহ কয়েকজন এই সুবিধা পেয়েছে। এখনো আরিফুরসহ কয়েকজন ওই কক্ষে থাকছিল।

হেফজখানার শিক্ষক আব্দুল কাদের সিরাজের তথ্যদাতা ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের খাবার কমিয়ে দিয়ে সিরাজের ক্যাডারদের ফাও খাবার দিতেন এবং অবৈধভাবে থাকার ব্যবস্থা করতেন। হাফেজ আব্দুল কাদের শিক্ষার্থী নুসরাত হত্যাচেষ্টা মামলার পলাতক আসামি। গতকাল তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, মাদ্রাসার নিরাপত্তাকর্মী মোস্তফা রাতে নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, গত শুক্রবার তিনি ১০টার দিকে গেটে তালা লাগিয়ে চলে যান। আরিফের (গ্রেপ্তারকৃত আসামি) কাছে গেটের চাবি আছে। নূর উদ্দিন, শামীমসহ কয়েকজন ছাত্রাবাসে নিয়মিত আসত বলেও জানান তিনি।

+ There are no comments

Add yours