তবুও স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিএনপির মিথ্যাচার

1 min read

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির কোনো যোগ নেই। থাকার কথাও নয়। বাংলাদেশ জন্মের সঙ্গে বিএনপির নাম নিয়ে কোনো নেতারও রাজনৈতিক সংযোগ নেই; থাকার কথাও নয়। পরে দলটিতে যোগ দেওয়া কেউ কেউ মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে জড়িত থাকলেও বিএনপির নামে কেউ ছিল না স্বাভাবিকভাবেই।

বিএনপির রাজনৈতিক সৌভাগ্য যে, দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সুযোগ হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের। মেজর জিয়া যে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন তাও নয়, এর আগে আবদুল হান্নানসহ একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন। এবং জিয়াউর রহমানের সে পাঠ ছিল মার্চের ২৭ তারিখে, বঙ্গবন্ধুর পক্ষে। অর্থাৎ এর আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা হয়ে গেছে। গ্রেপ্তারের পূর্ব মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বয়ং স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত স্বাধীনতা দিবসও তাই ২৬ মার্চ।

তবুও স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা এখনও পরিলক্ষিত হয় বিএনপির রাজনীতিতে।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ইতিহাস স্বীকৃত, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মিডিয়া ও ইতিহাসবেত্তা কর্তৃক বর্ণিত। বাংলাদেশ কেবল ৯ মাসের এক সশস্ত্র যুদ্ধের পরিণতি নয়, এর পেছনে আছে দীর্ঘ মুক্তির সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা। কেবল ৯ মাসের এক যুদ্ধের ফল হিসেবে ভাবলে খণ্ডিত ইতিহাস অথবা ইতিহাসের বিকৃতি হয়। অস্বীকার করা হয় বায়ান্ন, বাষট্টি, ঊনসত্তর, সত্তর, একাত্তরের অসহযোগ থেকে সবকিছুই। অথচ এগুলোই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিজয়ের প্রাথমিক সোপান। কেবল হুট করে স্বাধীনতার ঘোষণা হয়ে গেল আর বাংলাদেশ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল- এ ধারণাটি মূর্খ আর গর্দভদেরই মানায়। বিএনপিপন্থী সুশীল বাবুরাসহ দলটির নেতাকর্মীরা সবাই সেই মূর্খতা প্রতিষ্ঠায় ব্যতিব্যস্ত।

২৫ মার্চ ভয়াল কালরাত্রির পর একাত্তরের ২৬ মার্চে গ্রেপ্তারের পূর্ব মুহূর্তের দেওয়া বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কর্তৃকও প্রচারিত। তবুও মার্চ মাস এলেই জিয়াউর রহমান কর্তৃক কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের ঘোষণা পাঠের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন বিএনপির নেতার। পাঠককে ঘোষক হিসেবে দাবি করেন। অথচ ঘোষণা আর পাঠ এ দুইয়ের মধ্যকার যে বিশাল পার্থক্য সেটা তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই এড়িয়ে যায়।

স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ এবং স্বাধীনতার ঘোষণা রেডিওর মাধ্যমে জানানোর বিষয়টি জিয়ার আগেও অনেক আওয়ামী লীগ নেতা করেছেন। তাদের মধ্যে একজন আবদুল হান্নান। ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমানের আগে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন। আবদুল হান্নানসহ আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা এবং মাইকে ঘোষণা প্রচারকারীগণ যদি ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ হিসেবে আলোচনায় না আসেন তাহলে কেনো জিয়া এককভাবে আসবেন? বিএনপির নেতাকর্মীরা এই বিষয়টা বুজিয়াও বুঝতে চায় না। তারা মনে করেন, বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল প্রমাণ করার এটাই এমকাত্র সম্বল।

অথচ, জিয়া জীবদ্দশায় কখনোই নিজেকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ দাবি করেননি। তার মৃত্যুর পর বিএনপি নেতারাই তাকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ হিসেবে অপপ্রচার চালায়। অথচ সেই অপপ্রচারকারীদের কেউই জানে না, একাত্তরের ২৬ মার্চের আগে জিয়া কোথায় ছিলেন? এই না জানাদের সবাই খুব ভালো করে জানে উত্তাল মার্চের সব ঘটনা, পতাকা উত্তোলন, সোহরাওয়ার্দীতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণসহ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনাসহ সবকিছু। তারা জানে ২৬ মার্চে গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু, তার আগে দিয়ে যান স্বাধীনতার ঘোষণা।

তবুও স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে মিথ্যাচার করেই যাচ্ছে বিএনপি। জিয়া অন্য অনেকের মতো একজন পাঠক মাত্র। এটাই প্রকৃত ইতিহাস।

+ There are no comments

Add yours