আজ ভোট : নৌকার ভরসা দলীয় ঐক্য

1 min read

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ বৃহস্পতিবার। তফসিল ঘোষিত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মধ্যে গাজীপুরের নির্বাচন অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ফলে সবার দৃষ্টি এখন গাজীপুরে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের সবচেয়ে বড় এই সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ।

গত মঙ্গলবার ছিল নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন। বৃষ্টির বাধায় প্রার্থীদের প্রচার কিছুটা বিঘ্নিত হয়। প্রচারের শেষ দিনে দুজন মেয়র প্রার্থী তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন।

এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান।

তাঁর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় একাধিক নেতা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। জাহাঙ্গীর আলমের মায়ের পক্ষে যতসংখ্যক নেতাকর্মী প্রকাশ্য বা গোপনে কাজ করবেন বলে দলের আশঙ্কা ছিল, বাস্তবে তা ঘটছে না।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে গঠন করা দলের একাধিক সদস্য কালের কণ্ঠকে জানান, নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণার পরে গাজীপুরে বেশ কিছু নেতাকর্মী জাহাঙ্গীরের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তাঁরা নৌকার পক্ষে মাঠে নামেন। নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের প্রচার শুরু করেন। গাজীপুরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভোটারদের আস্থা তৈরিতে নেতাকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ফলে নৌকার জয়ের বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় একাধিক নেতা জানান, ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করে মাঠে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এই কেন্দ্র কমিটিগুলোই ভোটের দিন ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং ভোট দিতে সহযোগিতার কাজ করবে। নৌকার বড় প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুনের পক্ষে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়নি। ফলে নির্বাচন প্রস্তুতিতে অনেকটাই এগিয়ে আছে আওয়ামী লীগ।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে গঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সমন্বয় টিমের সদস্য এস এম কামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গাজীপুরের নেতাকর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। ভোটারদের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন তুলে ধরেছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা বিশ্বাস এসেছে যে গাজীপুরের উন্নয়নের জন্য নৌকায় ভোট দিতে হবে।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকাটিতে তিনজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। তাঁরা হলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। এই তিন সংসদ সদস্যের অনুসারীরাই নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী মাঠে নামতে না পারলেও তাঁদের অনুসারীদের নৌকার পক্ষে কাজ করতে তাঁরা নির্দেশনা দিয়েছেন।

গাজীপুরের কোনাবাড়ী, কাশিমপুরের বিভিন্ন এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার চালান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীরা প্রতিটি এলাকায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছে। সব ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করে আমাদের নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে সক্রিয়। জাহাঙ্গীরের পক্ষে দলের কোনো নেতা অবস্থান নেননি। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না।’

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, জয়দেবপুরের দিকে কয়েকটি ওয়ার্ডে বরাবরই বিএনপির ভোটার বেশি। ২৪, ২৫, ২৬, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে সব সময়ই বিএনপির প্রার্থীরা এগিয়ে থাকেন। জাহাঙ্গীর আলম বিএনপির ভোট নিজের পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক একজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, জয়দেবপুরের কয়েকটি ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীরের মায়ের কিছু ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এ ভোট তাঁর জয়ের জন্য যথেষ্ট হবে না।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে গঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দলের সমন্বয়ক মির্জা আজম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীর লন্ডনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বিএনপি প্রার্থী না দিলেও তারা এখন জাহাঙ্গীরকে ইন্ধন দিচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ। ফলে ৪৮০ ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেওয়ার মতো লোক তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। এখন তিনি চাইছেন নির্বাচন বিতর্কিত করতে।’

ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই শেষ দিনের প্রচারণা : মিছিল, স্লোগান, ব্যানার-ফেস্টুনে গতকাল জমজমাট ছিল গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের শেষ মুহূর্তের প্রচার। উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের দরজায় কড়া নেড়েছেন তাঁরা। বিকেলের ঝড়-বৃষ্টি দমাতে পারেনি তাঁদের। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি ৫৬টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের প্রার্থীরা স্বজন ও কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে শেষ দিনে চষে বেড়িয়েছেন এলাকার অলিগলি। মধ্যরাত পর্যন্ত চলে প্রচার।

আজমত উল্লা খান সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টঙ্গীর নিজ বাসায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, থানা ও কেন্দ্র কমিটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দুপুরের পর তিনি গাজীপুর শহরের দলীয় কার্যালয়ে গিয়েও একই ধরনের বৈঠক করেন।

এ সময় আজমত উল্লা খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। চ্যালেঞ্জ থাকলেও নৌকার জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থীর প্রতি হয়রানিমূলক আচরণ করা হচ্ছে না, হবেও না। সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের কাছ থেকে আশাব্যঞ্জক সাড়া পাচ্ছি। তাঁরা ২৫ তারিখের নির্বাচনে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবেন।’

 

 

 

 

 

 

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours