ভোট শেষে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি জাহাঙ্গীরের!

1 min read

আজ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (জিসিসি) তৃতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। এই সিটি নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাম জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুরের সাবেক এই মেয়র নিজে নির্বাচন করতে না পারলেও লড়ে যাচ্ছেন মায়ের জন্য। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে দলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন। ফলাফল যাই হোক ‘সব হারানো’ জাহাঙ্গীর ভোটের পরেই দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে। নির্বাচনে মা হারতে পারেন এমনটা আশঙ্কা থেকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হওয়া এই নেতা দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বেশ কয়েকটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ভোটের পরদিন সকালে দুবাই যাওয়ার টিকিট কেটে রেখেছেন দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত গাজীপুরের সাবেক এই মেয়র। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে যাত্রা বাতিলও করতে পারেন জানিয়েছেন একটি বিশ্বস্ত সূত্র।

জানা যায়, আগামী ২৬ মে সকাল ৮টা ১৫মিনিটে ঢাকা থেকে দুবাইগামী বেসরকারি একটি এয়ারলাইন্সের বিজনেস ক্লাসে (যার নম্বর- ফ্লাইট বিএস ৩৪৩) তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর এবং পাসপোর্ট (যার নম্বর- বিএক্স০০১৩০৪২) ব্যবহার করে একটি টিকিট বুকিং দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুর সচেতন মহলের মতে, ২৫ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ফলাফল অনুকূলে না আসতে পারে এমন আশঙ্কায় জাহাঙ্গীর দেশ থেকে পালানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। যদিও তার সঙ্গে একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও পাওয়া যায়নি। বিষয়টি গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

গাজীপুরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের ঘনিষ্টজন রবিউল আলম রবিউল ফেসবুকে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে জাহাঙ্গীরের দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন। তিনি যেন দেশ ছাড়তে না পারেন সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।

গাজীপুর জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এমএ ফরিদ লিটন লিখেছেন, ‘ভোটে হার সুস্পষ্ট!! পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন জাহাঙ্গীর।’ এরপর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাহিম সরকার বলেন, ‘নির্বাচনের মধ্যে অনেক গুঞ্জন শোনা যায়। জাহাঙ্গীর দেশ ছাড়তে পারে এমন গুঞ্জন শোনা গেছে। তবে সকাল থেকে বিমানের টিকিট বুকিং বিষয়টি জানার পর থেকে এটি স্পষ্ট যে তিনি পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’

কারণ হিসেবে রহিম সরকার বলেন, ‘দেখুন গাজীপুরের সাবেক মেয়র হলেও দুর্নীতির দায়ে দুদক তাকে তলব করেছে। সেই সঙ্গে গুমসহ সরকারবিরোধী নানা বক্তব্য দিয়েছে। এতে তিনি নিজেকে হয়তো এই দেশে আর নিরাপদ মনে করছেন না। আমরাও আশঙ্কা করছি তিনি পালিয়ে যাবেন।’

বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সম্প্রতি দুদকে তলবও করা হয়েছে। জবাবের জন্য এক মাস সময় চান জাহাঙ্গীর।’

দুই দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর আবারও তলব করে তাকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। সেই নোটিশে আগামী ৬ ও ৭ জুন তাকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক আলী আকবরের নেতৃত্বে দুটি আলাদা অনুসন্ধান টিম জাহাঙ্গীর আলমকে তলব করেন।

সূত্রগুলো জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীরের মা মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের বিরুদ্ধেও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুনের উৎস বহির্ভূতভাবে অর্জিত প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অর্থসম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। বৈধ ও উৎস বহির্ভূত আয়ে অর্জিত ব্যক্তিগত সম্পদ ছাড়াও জাহাঙ্গীর আলম ফাউন্ডেশনের নামে একশ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তিসহ দুইশ কোটি টাকার অধিক প্রদত্ত অনুদানের কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। এছাড়া চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, জমি দখল, ইমামদের ভাতা ও ইজতেমার টাকা আত্মসাৎ ও সরকারিভাবে প্রদত্ত ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাতসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধারণা, আইনগত বিষয় এড়াতে বিদেশে পালানোর চেষ্টা করছেন জাহাঙ্গীর। জেল-জরিমানা হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় তিনি বিদেশ চলে যেতে পারেন বলে ধারণা নেতাকর্মীদের।

গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান যুবলীগ নেতা হিরা সরকার বলেন, ‘আমরা ওনার বিদেশে যাওয়ার বিষয়টি ইতোমধ্যেই জেনেছি। বর্তমান আওয়ামী লীগের কর্মী হয়ে মেয়রের চেয়ারে বসে। আবার সেই আওয়ামী লীগ দলের মনোনয়ন দেওয়া নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন। সেই সঙ্গে দল নিয়ে, আমাদের নৌকার প্রার্থীকে নিয়ে যে মিথ্যাচার করেছেন এটির জবাব গাজীপুরের মানুষের কাছে করতে হবে সেটি উনি বুঝতে পেরেছেন, যা জবাব দেওয়ার পরিস্থিতি তার নেই। সেই সঙ্গে দুর্নীতির কারণে দুদকের জবাব দেওয়ার একটা বিষয় আছে। সবমিলিয়ে গাজীপুরের মানুষের কাছে তার জবাবদিহি অনেক, যেটি করতে পারবে না মনে করে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন উনি (জাহাঙ্গীর)।’

ইমিগ্রেশন পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, জাহাঙ্গীরের নামে দেশত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আর কোনো ব্যক্তির নামে নিষেধাজ্ঞা না থাকলে সেক্ষেত্রে যাতায়াতে সমস্যা হবে না।

এ বিষয়ে জানতে ইমিগ্রেশন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাসরিন আক্তার বলেন, কোনো ব্যক্তির নামে রাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে আমরা সতর্ক থাকি ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এর বাইরে কিছু করার নেই। যে কর্তৃপক্ষ মামলা করে তাদেরই উচিত ওই ব্যক্তিকে থামানোর উদ্যোগ নেওয়া। দুদক থেকে যদি এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় সেক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করবে।

২০১৩ সালে গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওই সময়ের প্রার্থী আজমত উল্লাহকে সমর্থন দিলেও পরে নিজেই ‘বিদ্রোহী’ হন। দলের নির্দেশেও ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি না হওয়ার এক পর্যায়ে ‘নিখোঁজ’ হন তিনি। ভোটের আগ মুহূর্তে গাজীপুরে ফিরে কাঁদতে কাঁদতে আজমতকে সমর্থন জানান। তবে সেই নির্বাচনে বিএনপির কাছে নৌকার পরাজয় হয়। আর সেই পরাজয়ের জন্য দায়ী করা হয় জাহাঙ্গীরের বিরোধিতাকেই। পরের নির্বাচনে তিনিই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে মেয়রের চেয়ারেও বসেন।

কিন্তু ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। দলের সদস্যপদ বাতিল করা হয় সেই সঙ্গে বরখাস্ত হন মেয়র পদ থেকেও। ক্ষমা চেয়ে শৃঙ্খলা মেনে চলার শর্তে গত ১ জানুয়ারি তাকে ক্ষমা করে চিঠি দেয় দল।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours