তত্ত্বাবধায়কের আন্দোলন বাদ, অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা বিএনপির

1 min read

নিউজ ডেস্ক: নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের আপ্রাণ চেষ্টা করছে বিএনপি। ঈদের পর থেকে চূড়ান্ত আন্দোলন ঘোষণা করা হবে। এমনটি ঘোষণা দিয়েছিল দলটি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিএনপি আন্দোলন তো বহু দূরের কথা এখন পর্যন্ত একটি পথসভাও করতে পারেনি। বরং ত্রিমুখী সংকটে দলটি এখন কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। এ নিয়ে নানাবিধ অস্থিরতা বিরাজ করছে দলটিতে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন তো দূরের কথা এখন বিএনপি তার অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টাতেই ব্যতিব্যস্ত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

প্রথমত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দলগুলোকে জোটবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল। আওয়ামী লীগকে এক ঘরে করে সবগুলো রাজনৈতিক দলকে এক ছাতার নিচে নিয়ে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনকে তীব্র করার ব্যর্থ চেষ্টাও করেছিল তারা। ২০১৪’র মত একটি পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টায় ছিল দলটি। যেন আওয়ামী লীগ এবং তার ১৪ দলীয় মিত্র ছাড়া কেউই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে পারে। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে তারা প্রথমে জাতীয় পার্টিকে প্রলুব্ধ করেছিল এবং পরবর্তীতে গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সংলাপ করে। কিন্তু জাতীয় পার্টি বিএনপি’র এই টোপ গেলেনি। জাতীয় পার্টি এখন নির্বাচনের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে। ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টি ঘোষণা করেছে যে তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।

ইসলামী দলগুলোর সঙ্গেও বিএনপির এক ধরনের সমঝোতার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ইসলামী দলগুলো সাফ বলে দিয়েছে যে তারা আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এমনকি বিএনপির পরীক্ষিত মিত্র জামায়াতে ইসলামীও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলেও গুঞ্জন রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপি যে জোটবদ্ধ আন্দোলন করার লক্ষ্যে ধারাবাহিক সংলাপ করেও হোঁচট খেয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে গেছে গণঅধিকার পরিষদ। ফলে বিএনপির মধ্যেই এখন সংশয় সন্দেহ দেখা দিয়েছে যে, জোটবদ্ধ আন্দোলন করলে জোটের শরিকরা যদি শেষ পর্যন্ত সরকারের ফাঁদে পা দিয়ে নির্বাচনে যায় তাহলে জোটের কি হবে! এ কারণেই তারা এখন জোটবদ্ধ আন্দোলন নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত

দ্বিতীয়ত জোট শুরু হওয়ার আগেই জোটের শরিকরা দাবি-দাওয়া’র ফিরিস্তি নিয়ে বিএনপির সামনে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি নিজেই অবশ্য এই সংকট তৈরি করেছে। বিএনপি বলেছিল যে, জোটবদ্ধভাবে আন্দোলন, জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন এবং জোটবদ্ধভাবে সরকার গঠন করা হবে। কিন্তু এখন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের শুরুতেই জোটের শরিকরা জানতে চাইছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা কতটি আসন পাবে; এই ফয়সালা আগে নির্ধারিত হতে হবে। যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন যে তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর এ বিষয়টি ঠিক করা যাবে। কিন্তু তাতে শরিকরা রাজি নয়। ফলে জোটবদ্ধ আন্দোলন করার ক্ষেত্রে এক ধরনের অস্বস্তি এবং অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

তৃতীয়ত বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংকট চরম পর্যায়। বিএনপির কোন কোন নেতা মনে করছেন, আগামী নির্বাচন বিএনপির অস্তিত্বের সংকট। যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচন প্রতিহত না করে এবং একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যায়, তাহলে বিএনপি তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে না। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন ২০১৪ নির্বাচন ছিল একটি ভুল এবং ২০১৮ এর নির্বাচনী কৌশল ছিল মহাভুল। এরকম পরিস্থিতিতে এখন এমন একটি কৌশল গ্রহণ করতে হবে যেটি বিএনপির অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারে। কারণ আর ভুল করার সুযোগ নেই বলেই মনে করছে বিএনপি।

এছাড়াও বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থান নিয়ে বিএনপির মধ্যে নানা রকম সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বিএনপির অনেক নেতা নির্বাচনের জন্য তৎপরতা শুরু করেছে। এরকম পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত বিএনপি আন্দোলন তো দূরের কথা কিভাবে ঐক্য টিকিয়ে রাখবে সেটিই এখন দেখার বিষয়।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours