ক্ষমতা নিয়ে ট্রায়াঙ্গেল রাজনীতিতে বিএনপি

1 min read

নিউজ ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বিভাগীয়সহ বাকি সকল আন্দোলনে বিএনপি একটি ট্রাম কার্ড ব্যবহার করতে চায়। অন্য দলের নেতাদের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বিএনপি নিজেদের মধ্য থেকে একজন চমক জাগানিয়া নেতা জনগণের সামনে উপস্থাপিত করতে চায়। আর এটি করার মধ্য দিয়ে একটি গণজোয়ার সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির।

বিএনপির এই চমক নেতা হিসেবে প্রথম পছন্দ ছিল ডা. জোবায়দা রহমান। কিন্তু জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় এখনো পলাতক রয়েছেন তিনি এবং তার স্বামী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফলে জোবায়দার আপাতত বিএনপির ট্রাম্পকার্ড হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই বাস্তবতায় বিএনপি নতুন চিন্তা ভাবনা করছে এবং এই নতুন চিন্তা ভাবনার মধ্যে তারেক জিয়ার মেয়ে জাইমা রহমান এবং কোকোর প্রয়াত স্ত্রী সিঁথির নাম আলোচনায় আসছে। এরমধ্যে জাইমা রহমানের নামটি বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বিএনপিতে।

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া কাগজে-কলমে বিএনপি চেয়ারপারসন হলেও তিনি দলীয় কোন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে বেগম জিয়া এখন সরকারের কৃপায় জামিনে মুক্ত আছেন, ফিরোজায় বসবাস করছেন, কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি অংশগ্রহণ করছেন না। আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনের আগে তাকে কারাগারে প্রেরণ করার কোনো সম্ভাবনা নেই।

অন্যদিকে, তারেক রহমান লন্ডনে থেকে দল পরিচালনা করছেন কিন্তু দেশে তার অনুপস্থিতির কারণে তার নেতৃত্ব বিএনপির মধ্যে কোন প্রভাব ফেলতে পারছে না, জনগণের মধ্যেও কোন ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারেক রহমান। তাছাড়া তারেক রহমানের এক ধরনের ইমেজ সংকট রয়েছে। একজন রাজনৈতিক নেতার চেয়ে তাকে একজন দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিবাজ হিসেবেই জনগণ বেশি চেনে। এ কারণেই তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি বড় ধরনের কোনো আন্দোলন করতে পারবে এমনটি বিএনপি নেতারা এখন বিশ্বাস করে না। অবশ্য বিএনপি নেতারা অন্যভাবে কথাটি বলেন। তারা মনে করেন যে, যেহেতু দেশে আন্দোলন করতে হবে সে কারণে নেতৃত্ব দেশেই থাকতে হবে। আর এই বাস্তবতায় বিএনপি চিন্তাভাবনা করছে যে, নির্বাচনকেন্দ্রিক চূড়ান্ত আন্দোলনের যেকোনো একটি পর্যায়ে জিয়া পরিবারের কাউকে দেশে নিয়ে এসে চমক তৈরি করার চেষ্টা করা। কিন্তু সেই চমক প্রথমে হোঁচট খেয়েছে।

এখন বিএনপির অনেকেই চাইছেন যে, তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নির্বাচনের আগে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে দেশে নিয়ে আসা হোক এবং জাইমা রহমানের উপস্থিতি দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করবে, উদ্বুদ্ধ করবে, উৎসাহিত করবে। তবে জাইমা রহমান রাজনীতিতে কতটা আগ্রহী এবং বাংলাদেশে এসে তিনি কী করবেন এটি নিয়েও বিএনপির মধ্যে নানা রকম প্রশ্ন আছে। অনেকেই মনে করছেন যে, জাইমা এভাবে এসে আর কিছু করতে পারবেন না, শুধু সাময়িকভাবে মানুষের আবেগ সৃষ্টি করবে।

অন্যদিকে, সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথিকে নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। তবে সিঁথি বিএনপির রাজনীতিতে কতটা টনিক হবেন সেটা নিয়েও বিএনপির কেন্দ্রের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তবে সিঁথির কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর শর্মিলা রহমান কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং তিনি বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বেগম জিয়া অসুস্থ হওয়ার পর তিনি এসেছেন, তার শুশ্রূষা করেছেন। ইত্যাদি কারণে বিএনপির মধ্যে তাকে নিয়ে একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। কিন্তু রাজনীতির ময়দানে সিঁথির যে ক্যারিসম্যাটিক ইমেজ দরকার সেটি তার ভেতর নেই। এবং কোকো রাজনীতির পাদপ্রদীপে না থাকার জন্যও সিঁথি বাড়তি সুবিধা বিএনপিতে পাবেন বলেও বিশ্লেষকরা মনে করেন না।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours