নির্বাচনের আগেও জনসমর্থনের ভাটা চলছে বিএনপিতে

0 min read

নিউজ ডেস্ক: বিএনপিতে অনেক বড় বড় নেতা থাকলেও তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে। নির্বাচন নিয়ে তারা সুনির্দিষ্ট কৌশল প্রণয়নে ব্যর্থ। একাদশ নির্বাচনে তাদের গণফোরামের মতো একটি সাইনবোর্ড সর্বস্ব দলের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। তখন বিএনপির নির্বাচনী কৌশলের নেতৃত্ব দিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। অথচ আওয়ামী লীগ, সিপিবি ও ন্যাপের (মোজাফফর) কয়েকজন দলছুটের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় গণফোরাম। এর কারণ হচ্ছে, এককভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার সক্ষমতা নেই বিএনপির। তাদের কোনো সর্বজনীন মতাদর্শও নেই। যে কারণে সামাজিকমাধ্যমে আন্দোলন, সরকার পতন, বিএনপির ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা যতটা কল্পনাবিলাসী, মাঠের লড়াইয়ে তাদের ততটা অবস্থান নেই।

বলা যায়, রাজনৈতিক মাঠে বিএনপি অনেকটা একা। সহযোগী আছে কিছু ছোট ও নামসর্বস্ব দল। এমনকি এর আগের নির্বাচনগুলোতে দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রকাশ্যে সেই অভিযোগ করেছেন।

রাজনীতি হলো বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলের খেলা। এতে টিকে থাকতে হলে সময়োপযোগী হতে হয়, সক্ষমতা ও সাহসের প্রমাণ দিতে হয়। থাকতে হয় প্রবল আত্মসমালোচনা। কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল বিএনপি গেল এক যুগের বেশি সময়ে এসবের কোনোটিই করে দেখাতে পারেনি। দলটির রাজনৈতিক সক্ষমতা তলানিতে। সেখান থেকে উঠে আসতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির রাজনীতি কেবল ক্ষমতাকেন্দ্রিক। যে করেই হোক তারা মসনদ দখল করতে চায়। এমনকি সাম্প্রতিক নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া নিয়ে তারা কোনো বড় কর্মসূচিতে যাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

বিএনপি মনে করে, নির্বাচনের আগে এখনই যদি দলবল নিয়ে তারা মাঠে নামে তাহলে একটা সময় নেতাকর্মীরা ক্লান্ত হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে দলীয় ভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

এ বিষয়ে দলের সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমকে বলেছেন, সরকার নানাভাবে বিএনপি ও নেতাকর্মীদের উসকানি দিচ্ছে। নির্যাতন করছে। গুলি চালিয়ে হত্যা করছে। কিন্তু এরপরও তারা সরকারের ফাঁদে পা দেবে না। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে জনগণকে আরও সম্পৃক্ত করবে।

ইতিহাস কিন্তু বলছে ভিন্ন কথা, পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখেই নির্বাচন করেছিলো বিএনপি। কিন্তু আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখে তারা টিকতে পারেনি। আওয়ামী লীগ পারলেও তার আঠারো বছর পর ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। অর্থাৎ ২০১৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে আওয়ামী লীগকে বাধ্য করতে পারেনি বিএনপি। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই তারা নির্বাচনে অংশ নেয়। যথারীতি নির্বাচনে তাদের ভরাডুবিও হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে না গিয়ে ভুল করেছিল বিএনপি। তৎকালীন সময়ে ড. কামাল হোসেন ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীদের পরামর্শে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাদের অংশ নেয়া ছিল আরেক ভুল। কারণ, ‘প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন’ ছাড়া আওয়ামী লীগের ওপর তারা কোনো দায়ই চাপাতে পারেনি। তারা যেমন নির্বাচনী মাঠে ঢুকতে পারেনি, তেমনি রাজপথেও ছিল না তাদের কোনো প্রতিরোধ।

অর্থাৎ, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনো কৌশল ছিল না। বহিরাগতদের পরামর্শে দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দলটিকে নির্বাচনে মাঠে নামতে হয়েছে। আর তার ফল এসেছে লজ্জাজনক পরাজয় হিসেবে। গেল এক দশকে আওয়ামী লীগের দৃঢ়তার কাছে মাঠে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি। গণবিচ্ছিন্নতার পাশাপাশি জনসমর্থনেরও ভাটা চলছে দলটির।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours