জাফরুল্লাহর মৃত্যু: শোক না জানিয়ে প্রতিশোধ নিলো বিএনপি

0 min read

নিউজ ডেস্ক: বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মারা গেছেন মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাত সোয়া ১১টায়। তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংস্কৃতিক কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ছুটে যান। পাশাপাশি শোকবার্তায় সমবেদনা জানিয়েছেন অনেক রাজনীতিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শোক জানিয়ে বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ঔষধ শিল্প ও জনস্বাস্থ্য খাতে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

কিন্তু ব্যতিক্রম কেবল বিএনপি। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুর প্রায় ১৬ ঘণ্টা পার হলেও দলটির পক্ষ থেকে কোনও শোকবার্তা পাঠানো হয়নি, ধানমন্ডিমুখী হননি কোনও নেতাও। এ নিয়ে ইতোমধ্যে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত থাকা গণতন্ত্র মঞ্চে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক নেতা জানান, গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত। এই মঞ্চের সৃষ্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কারণে। বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে নিয়ে কোনও বিবৃতি আসেনি। এমনকি দুঃখজনক বিষয় হলো, দলটির কোনও নেতাই আসেননি জাফরুল্লাহর মৃত্যুর সংবাদ শুনে।

জানা গেছে, তারেক রহমানের নির্দেশে শোকবার্তা জানানো থেকে বিরত রয়েছে বিএনপি। একমাত্র মির্জা ফখরুল ছাড়া বিএনপির কোনো নেতাই শোক জানায়নি ড. জাফরুল্লাহর মৃত্যুতে। খালেদা জিয়া শোক জানাতে চাইলেও পরে তারেকের নিষেধ জানতে পেরে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক উন্নত থাকলেও নির্বাচনের পর তারেক রহমানের সমালোচনা করেন তিনি। এরপর থেকে শুরু হয় দলটির সঙ্গে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দূরত্ব। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উদ্দেশে প্রকাশ্যে তিনি পরামর্শ দেওয়া শুরু করলে উভয় পক্ষের সম্পর্কে ব্যাপক অবনতি ঘটে।

২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সভায় ‘বিএনপির গঠনতন্ত্র মেনে তারেক রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি’ শীর্ষক বক্তব্যের পর বিরোধ আরও প্রকাশ্যে চলে আসে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষ থেকে পাল্টা অনুরোধ করা হয়, ‘আমি তাকে (ডা. জাফরুল্লাহ) অনুরোধ জানাবো, যেসব কথায় জনগণ বিভ্রান্ত হয়, সেসব কথা যেন তিনি না বলেন।’

এদিকে সকাল থেকে বিএনপির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা ও দায়িত্বশীলদের কাছে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে বিএনপির দলীয় কোনও শোক আসবে কি না, জানতে চাইলে কেউই কিছু বলতে পারেননি। তবে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘লন্ডনের নিষেধাজ্ঞা আছে। তবে এখনও বলতে পারছি না। অপেক্ষা করছি, দেখা যাক কী হয়।’

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক দায়িত্বশীলের ভাষ্য, দলের শীর্ষ পর্যায় নিয়ে মন্তব্যের কারণে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কেউই দায়িত্ব নিয়ে আলাপ করতে চাননি। তারেক রহমানের মনোভাব কেমন, কী অবস্থায় আছে, এ বিষয়টিই তাদের কাছে বিবেচ্য। আরেক দায়িত্বশীলের মন্তব্য, ‘লন্ডন থেকে স্পষ্ট বার্তা এলেই নয়াপল্টন থেকে শোকবার্তা পাঠানো হবে।’

গণতন্ত্র মঞ্চের একজন নেতা বলেন, ‘এ জন্যই বিএনপির এমন পরিস্থিতি। সারা দেশের মানুষ যেখানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকাহত, সেখানে বিএনপি তাদের অতীতের কষ্ট নিয়ে পড়ে আছে। আর এ কারণেই তাদের এই অসহায় পরিস্থিতি।’

বিএনপির এমন আচরণ দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের সমালোচনা করায় বিএনপি তার মৃত্যুতে মোক জানানো থেকে বিরত রয়েছে। মূলত, তারেক রহমানের কথা মতো শোক না জানিয়ে প্রতিশোধ নিলো বিএনপি।

উল্লেখ্য, বিএনপির নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব থাকলেও বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে সরব ভূমিকা রেখেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এ ছাড়া জামায়াতকে বাদ দিতে, দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন, জ্যেষ্ঠদের জায়গায় তরুণ নেতৃত্বকে জায়গা দিতে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন তিনি। কয়েক বছর ধরে ‘নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার’ ইস্যুতে আলোচনা করেও বিএনপির বিরাগভাজন হন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours