জি এম কাদেরের সময় কাটছে লেখাপড়ায়, শরীরচর্চায়

1 min read

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ভাষ্যমতে, তিনিই দেশের একমাত্র রাজনীতিক, যাঁকে আদালতের নিষেধাজ্ঞায় রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে হয়েছে কিংবা হচ্ছে। তিনি জানান, আদালতের নজিরবিহীন আদেশে পাওয়া ‘ছুটি’ কাটাচ্ছেন লেখাপড়া ও শরীরচর্চা করে। পরিবারকে সময় দিচ্ছেন। বক্তৃতা-বিবৃতি না দিলেও নিজ কার্যালয়ে মাঝে মাঝে যান।

বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে লড়াইয়ে সংসদের পর আদালতেও ধাক্কা খেয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান। রওশনের পক্ষ নিয়ে দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া জাপার সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধার মামলায় গত ৩১ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হকের আদালত দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্য গ্রহণে জি এম কাদেরকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। ১ নভেম্বর থেকে তিনি দলীয় কার্যক্রম ও রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছেন।

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন গত ১৬ নভেম্বর নামঞ্জুর করেন আদালত। আদেশের কপি এখনো পাননি জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, ‘অপেক্ষা ছাড়া আর কী করার আছে?’ অবশ্য তাঁর আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ও জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া জানিয়েছেন, আজ সোমবার আদেশের কপি পেলে জজ আদালতে আপিল করা হবে।

সব বিষয়ে সরকারের সুরে কথা বলে গৃহপালিত বিরোধী দলের তকমা পাওয়া জাপা বছর খানেক ধরে বেসুরো। জি এম কাদের সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সংকট ও নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে কড়া বক্তৃতা করছিলেন। ইভিএমের ঘোর বিরোধিতা করেন। পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকে আগামী নির্বাচনের কথা তুলছিলেন।

জি এম কাদের বিএনপি-জামায়াতের সুরে কথা বলছেন- এ কারণ দেখিয়ে তাঁকে দলীয় নেতৃত্ব থেকে সরাতে গত ৩১ আগস্ট কাউন্সিল ডাকেন জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। তাই তাঁকে সরিয়ে জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে জাপার ২৬ এমপির ২৪ জন সমর্থিত চিঠি স্পিকারকে দেওয়া হয় পরের দিন। কিন্তু ৮১ দিনেও বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি।

বরং ওই চিঠি দেওয়ার পরের ঘটনাক্রম জি এম কাদেরের বিপক্ষে গেছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে রাজনীতির যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করেন কিনা- প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘তা তো বলতে পারি না। তবে এই দেশে আমিই প্রথম রাজনীতিক, যাকে আদালত রাজনীতি করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।’

দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই জাপার চেয়ারম্যান হন জি এম কাদের। তিনি জানান, গত তিন বছরে সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন সভা-সমাবেশে বক্তৃতা করতে হতো। করোনা মহামারির পর জেলায় জেলায় গিয়েছেন। দলীয় বৈঠক প্রতিদিনই হতো।

জি এম কাদের কৌতুক করে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার ভালো দিকও আছে। বাসায় আছি। লেখাপড়া করছি। ১০ বছর ধরে নিয়মিত জিমে যাই। এখন জিমে আরও বেশি সময় দিতে পারছি। পরিবার-আত্মীয়দের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি।’

রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় আদালতে টেনে নেওয়া অনুচিত বলে মনে করেন জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, ‘দল কীভাবে চলবে, তা নেতাকর্মীরা ঠিক করবেন।’ তিনি বলেন, ভবিষ্যতে অন্য দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়েও ‘কোর্ট-কাচারি’ হতে পারে।

এরশাদ ও জি এম কাদের বর্জন করলেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিএনপিবিহীন নির্বাচনে রওশনের নেতৃত্বে অংশ নেয় জাপার একাংশ। দলীয় সূত্রের খবর, তাঁর প্রতি আওয়ামী লীগের সমর্থন রয়েছে। ৩১ অক্টোবর মুজিবুল হক চুন্নুসহ জাপার কয়েকজন এমপি স্বীকৃতির বিষয়ে তাগিদ দিতে গেলে স্পিকার জানান, বিরোধীদলীয় নেতার পদে রওশনকেই চায় সরকার। প্রতিবাদে সংসদ বর্জনের ঘোষণা দেয় জাপা। ওই রাতেই রওশন তাঁর আহূত কাউন্সিল স্থগিত করলে জাপা সংসদে ফেরে।

গত শনিবার রওশনের এলাকা ময়মনসিংহে জাপার দ্বিবার্ষিক জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। একই দিনে রওশনপন্থিরাও কর্মী সম্মেলন ডেকেছিল। কিন্তু দুটি কর্মসূচিই স্থগিত হয়েছে। জাপা সূত্রের খবর, ‘বিশেষ’ চাপে সম্মেলন স্থগিত করতে হয়েছে।

যদিও জি এম কাদেরের দাবি, স্বাভাবিক সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। দলের নেতারা তাঁর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। নীবর থাকার বিষয়ে বলেছেন, ‘রাজনীতিই যেহেতু করতে পারছি না, তাই কথা বলছি না।’

সূত্রের খবর, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নীরব রয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান। রওশনের কাউন্সিল স্থগিত ‘করিয়ে’ জাপার ভাঙন ঠেকিয়েছে সরকার। জাপাকে দ্বিখণ্ডিত করে বিএনপির দিকে ঠেলে দিতে চায় না। সরকার অবিভক্ত, কিন্তু এমন জাতীয় পার্টিকে চায়, যারা আওয়ামী লীগকে নিঃশর্ত সমর্থন করে যাবে। সে কারণেই দল না ভেঙে জি এম কাদেরকে চাপে রাখা হয়েছে।

তার অংশ হিসেবে কাউন্সিল স্থগিত করলেও জেলায় জেলায় কমিটি করছে রওশনপন্থিরা। অঙ্গসংগঠনেরও কমিটি ‘করছে’। এর মাধ্যমে সব জায়গায় জাপার দুটি করে কমিটি হয়ে যাচ্ছে। দলে জি এম কাদেরবিরোধী বলয় বড় ও শক্তিশালী হচ্ছে। নেতৃত্ব নিয়েও তাঁর বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা চলছে। রাজনৈতিক ও আইনি, দুই চাপে আছেন জি এম কাদের। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচলিত রয়েছে, এরশাদও এমন দ্বিমুখী চাপে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে পারেননি। তবে এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি জি এম কাদের।

এ দিকে দলীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপা। তবে কঠোর নয়; নমনীয় কর্মসূচি পালন করা হবে। মঙ্গলবার কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে তারা।

+ There are no comments

Add yours