ভারতীয় প্ল্যাটফর্মে কদর বাড়ছে বাংলাদেশি কনটেন্টের

0 min read

বিনোদন জগতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ওয়েব প্ল্যাটফর্ম। করোনাকালে ঘরবন্দি সময়ে দর্শক কাছে টেনে নিয়েছে ওয়েব মাধ্যমগুলোকে। আমাদের দেশের দর্শকরাও ভিড় করছেন বিদেশি ওয়েব প্লাটফর্মগুলোতে। নেটফ্লিক্স, আমাজনের মতো ভারতীয় প্লাটফর্মগুলোর কাজের আলোচনা দর্শকের মুখে মুখে। এখন মূল ধারার প্রেক্ষাগৃহের চেয়ে ওয়েব কনটেন্টেই বেশি মনোযোগী হলিউড ও বলিউডের নির্মাতারা। আমাদের দেশে কিছুদিন আগেও তেমন করে ওয়েবের জন্য কাজ চোখে পড়ত না। দৃশ্যপট বদলেছে, এখন মূলধারার নির্মাতা ও কলাকুশলীরাও ওয়েবের দিকে ঝুঁকছেন। এরই মধ্যে এদেশের কনটেন্ট ভারতীয় প্ল্যাটফর্মে বেশ ভালো চাহিদা তৈরি করেছে। প্রথম দিকে ভারতের হইচই ও আড্ডা টাইমসে বেশ কিছু কাজ প্রচার হয়েছে বাংলাদেশের। তারমধ্যে কিছু কাজ সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। কিন্তু গত মাসে হইচইয়ে সৈয়দ আহমেদ শাওকী পরিচালিত ও চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত ‘তকদির’ মুক্তির পর সেই সম্ভাবনা আরও অনেক বেড়েছে। সে ধারাবাহিকতায় অল্প সময়ের ব্যবধানে আরও বাংলাদেশি কনটেন্ট প্রকাশ হতে যাচ্ছে। গত ৯ জানুয়ারি জি ফাইভে প্রকাশ হয়েছে ‘দেবী’ সিনেমাখ্যাত নির্মাতা অনম বিশ্বাসের পরিচালনায় বিদ্যা সিনহা মিমের ওয়েব ফিল্ম ‘হোয়াট দ্য ফ্রাই’। এরইমধ্যে কনটেন্টটির জন্য বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছেন নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পী।

অনম বিশ্বাস বলেন, ‘আমার বেশ কজন সহকর্মী ফোন করে কাজটির প্রশংসা করেছেন। ফেইসবুকে ভালো কথাই বেশি দেখেছি। অল্প কিছু গঠনমূলক সমালোচনাও আছে। সেটাকে আমি গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। একটি কাজ করতে গেলে নিজের মতো করেও শতভাগ করা সম্ভব হয় না নানা কারণে। সে ক্ষেত্রে সব দর্শকের মন জয় করা আরও চ্যালেঞ্জিং। আমি কী করেছি নিজেই ভালো করে জানি। জি ফাইভ ইন্টারন্যাশনাল কাজে কেমন বাজেট দেয় জানি না। তবে আমাদের যে বাজেট দিয়েছে তাতে ভারতীয় কোনো হিন্দি ওয়েব কনটেন্টের সমতুল্য প্রডাক্ট করতে পেরেছি আমরা। এখানে মিম, প্রীতম, শাকিব, ইরেশ যাকের সবাই খুব সাবলীল অভিনয় করেছেন। মিমকে গ্ল্যামারাস চরিত্রে দেখে দর্শকের ভালো লেগেছে।’ বিদ্যা সিনহা মিম বলেন, ‘এর আগে ভারতের সিনেমায় কাজ করলেও ওয়েবের জন্য এটাই আমার প্রথম কাজ। শুধু তাই নয়, অনম বিশ্বাসের পরিচালনায় ও প্রীতম হাসানের বিপরীতেও এবারই প্রথম কাজ করেছি। আমরা অনেক মজা করে কাজ করেছি। এখানে আমি প্রায় বাস্তব জীবনের চরিত্রেই কাজ করেছি। আমার চরিত্রটি একজন সুপারস্টারের। সে একটি ফাঁদে পড়ে যায়। তাই নিয়ে ঘটতে থাকে মজার ঘটনা।’

আগামী ১৫ জানুয়ারি ভারতের হইচইতে মুক্তি পাবে মেধাবী নির্মাতা আশফাক নিপুনের পরিচালনায় ৯৯ মিনিট ব্যাপ্তির কনটেন্ট ‘কষ্টনীড়’। এতে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, রুনা খান, সাবিলা নূর, শ্যামল মাওলা, ইয়াশ রোহান, সাঈদ বাবু ও সাবেরী আলম। তারিক আনাম খান বলেন, ‘এটি ঢাকা শহরের একটি পরিবারের গল্প। আমি সেই পরিবারের কর্তা। আমার দুই মেয়ে ও তিন ছেলে। সব সময় যে বাবার সিদ্ধান্তই সঠিক হবে, তার তো কোনো মানে নেই। সেই বিষয়টির সঙ্গে সংযোগ রেখে সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক প্রচলিত মিথ কিংবা সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে। কাজটি সবাই খুব যত্ন নিয়ে করেছে। এরইমধ্যে ফেইসবুকে খুব ভালো সাড়া পেয়েছে এর ট্রেইলার। এই কাজটি অনেক দূর যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’
নির্মাতা আশফাক নিপুন বলেন, ‘কষ্টনীড় পরিবারের গল্প। তবে গল্পের মধ্যে বিভিন্ন লেয়ার আছে। প্রত্যেকটি চরিত্রের লেয়ার আছে। রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ফিলোসফি। দেখা যাবে ব্যক্তিত্ব, আদর্শিক জায়গা ও রাজনৈতিক ক্লেশ।’

ভারতীয় প্ল্যাটফর্মগুলোর লগ্নিকে অনেকেই ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। আশফাক নিপুন বলেন, ‘দুটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। প্রথমত, ভারতীয় প্ল্যাটফর্ম যদি আমাদের মধ্যে সম্ভাবনা না দেখত, তাহলে লগ্নি করত না। তাদের জন্য কাজ করার ফলে আমরা সারা বিশ্বের মানুষের কাছে কাজ পৌঁছাতে পারছি। যেমন আমার কষ্টনীড় হিন্দিতেও ডাবিং করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের যে বিপুল সংখ্যক মানুষ দেশের বাইরে থাকেন তারাও কাজটি দেখতে পারবেন। কিন্তু আমাদের দেশের প্ল্যাটফর্মে তা সম্ভব নয়। এমনকি নিজের দেশে বসে কাজ দেখতে গেলেও নানা সীমাবদ্ধতা থাকে। তাই আমি মনে করি, এখনই দেশি প্ল্যাটফর্মগুলোকেও আন্তর্জাতিকমানের প্ল্যাটফর্মের সব সুবিধা নিয়ে দর্শকের সামনে আসতে হবে। নয়তো বিদেশিরা এখান থেকে মুনাফা নিয়ে যাবে।’

অনম বিশ্বাস বলেন, ‘আমরাও যে আন্তর্জাতিক মানের কাজ করতে পারি তা প্রমাণিত। নয়তো অন্য দেশ থেকে আমাদের পেছনে লগ্নি করত না। এখনই সময় আমাদের প্রযোজকদেরও এগিয়ে আসা। সঠিক মানুষ নিয়ে সঠিক কাজ করানো।’

তারিক আনাম খান বলেন, ‘এটা অভিনয়শিল্পীদের জন্যও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। এর ফলে নানামাত্রিক গল্প দেখানোর একটা সুযোগ হয়েছে। ফলে আমরা নিজেদের দক্ষতা মেলে ধরার আরও সুযোগ পাব বলে আশা করছি।’

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours