ছয় মাস টিকলে ১০ গুণ প্রবৃদ্ধি হবে স্টার্টআপের

1 min read

নিউজ ডেস্ক: প্রণোদনা ও নীতিগত সহায়তা দিয়ে স্টার্টআপকে আগামী ছয় মাস টিকিয়ে রাখা গেলে বাংলাদেশের স্টার্টআপগুলোর ১০ গুণ প্রবৃদ্ধি হবে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) দুই শতাংশ অবদান রাখতে পারবে বলে দাবি করেছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। রোববার ‘জিডিপিতে স্টার্টআপের অবদান বিষয়ক বাজেট আলোচনা’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় তারা এ অভিমত দেন।

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিয়াব) এবং ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) যৌথভাবে এই আলোচনার আয়োজন করে।

ভিসিপিয়াব চেয়ারম্যান ও পেগাসাস টেক ভেঞ্চারসের জেনারেল পার্টনার শামীম আহসানের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলি রুবাইয়াত-উল ইসলাম এবং এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।

এছাড়া এতে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন ভিসিপিয়াবের মহাসচিব শওকত হোসেন, মসলিন ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ভিসিপিয়াব পরিচালক ওয়ালি-উল-মারুফ মতিন, বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, স্টার্টআপ বাংলাদেশের বিনিয়োগ উপদেষ্টা টিনা জাবিন, এফএনএস মিডিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফেরদৌস আহমেদ, বিডিওএসএন সাধারণ সম্পাদক মুনীর হাসান, ভিসিপিয়াবের ভাইস চেয়ারম্যান জিয়া ইউ আহমেদ, বিল্ড বাংলাদেশের উপদেষ্টা আরস্ত খান, পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুসেইন এম ইলিয়াস, স্টার্টআপ ঢাকার সহ-প্রতিষ্ঠাতা সামাদ মিরালি, বাংলাদেশ এঞ্জেলসের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মিনহাজ আনোয়ার প্রমুখ।

স্টার্টআপ খাত সংশ্লিষ্টদের দাবির প্রেক্ষিতে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আপনাদের জন্য সরকারের মধ্যে থেকে আমি কাজ করা, লবিং করা, তদবির করা সে কাজটি করব।

সেই সঙ্গে সরকারি টেন্ডারে যাতে স্টার্টআপরা অংশ নিতে পারেন সে জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) সংশোধনের আশ্বাস দেন মন্ত্রী।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিভাগের প্রতিমন্ত্রী পলক ইয়াং এন্টারপ্রেনারদের জন্য পিপিআরের যে বাধা আছে তা সরিয়ে দেয়ার জন্য বলেছেন, আমি তাকে আশ্বস্ত করছি এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলব। আমার মনে হয় গ্রাউন্ডটা উন্মুক্ত করে দেয়া সম্ভব হবে।

রাইড শেয়ারিংয় পাঠাওয়ের উদ্যোক্তা হুসেইন এম ইলিয়াসের প্রশংসা করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আজ যদি সে উদ্যোক্তা হওয়ার সাহস নিয়ে এগিয়ে না আসত তাহলে বাংলাদেশে তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান হতো না। হয়তো বিদেশি কোনো কোম্পানি ওই জায়গাটা দখল করত। আমাদের অভ্যন্তরীণ যে চাহিদা বাড়ছে তা যদি স্থানীয় উদ্যোক্তা, স্টার্টআপরা পূরণ করতে না পারে, তাহলে বিদেশি কোম্পানি এসে সেই জায়গাটা দখল করে নেবে।

তিনি বলেন, স্টার্টআপরা গত চার বছর ধরে আমাদের জিডিপিতে ১ শতাংশ ভূমিকা রাখছে। এটা বাড়ানোর জন্য ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র থেকে সহায়তা দিতে হবে। উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে হবে, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের স্টার্টআপরা যাতে আর্থিক সহায়তা যথাযথভাবে পান, সে জন্য প্রথমে আমরা শুরু করেছিলাম ইনোভেশন ডিজাইন এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যাকাডেমি। আমরা দেখলাম শুধু অনুদান দিয়ে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা সম্ভব নয়। প্রয়োজন হচ্ছে অর্থায়ন এবং বিনিয়োগ। সে কারণে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড কোম্পানি বানিয়েছি। আমরা আশা করছি আগামী অর্থবছরে ৫০ থেকে ১০০ কোটি টাকা যেটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, সেটা স্টার্টআপদের দিতে পারব, সবকিছু কমপ্লায়েন্স মেনে।

এ সময় পেনশন স্কিমসহ সরকারের অন্যান্য জমা করা যে অর্থ আছে সেখান থেকে স্টার্টআপদের অর্থায়নের ব্যবস্থা করার জন্য পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী। সেই সঙ্গে স্টার্টআপরা যাতে সরকারি টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারে সে জন্য পিপিআর সংশোধন করার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, টেন্ডারে অংশগ্রহণ করার জন্য যে এক্সপেরিয়েন্স এবং টার্নওভার চাওয়া হয়, সেটা একটা স্টার্টআপের পক্ষে দেয়া সম্ভব না। কারণ তাদের জন্মই হয়েছে দুই বা তিন বছর আগে। তাদের সেই টার্নওভার বা এক্সপেরিয়েন্স নেই। সুতরাং পিপিআরের স্টার্টআপদের জন্য বিশেষ একটি সংশোধনী আনতে হবে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলি রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটালে অর্থায়নের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হচ্ছে কোম্পানির বোর্ডে যারা বসে নতুন নতুন এরিয়া, নতুন নতুন কনসেপ্ট অনেকে বুঝতে পারে না। আমি সাধারণ বীমার চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় বোর্ডকে এ বিষয়ে (ভেঞ্চার ক্যাপিটালে অর্থায়ন) রাজি করাতে অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছে। অনেক কষ্ট হলেও পরবর্তীতে বোর্ড ভেঞ্চার ক্যাপিটালে অর্থায়ন করতে রাজি হয়।

আলোচনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করার সময় ভিসিপিয়াব চেয়ারম্যান ও পেগাসাস টেক ভেঞ্চারসের জেনারেল পার্টনার শামীম আহসান বলেন, আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পলিসি সাপোর্ট দেয়া বিকাশ কয়েক বছরে ৫০ গুণ বড় হয়েছে। আমরা একইভাবে দেখেছি পাঠাও, সহজের মতো অনেকগুলো স্টার্টআপ সফল হয়েছে। পাঠাও মাত্র ছয় বছরে ১০০ গুণ বড় হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে স্টার্টআপরা তাদের সচল রাখতে পেরেছে। এর ফলে আমরা নতুনভাবে নতুন স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছি। আমরা ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই। লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমাদের নীতি সহায়তা প্রয়োজন। নীতি সহায়তা দিয়ে স্টার্টআপগুলোকে ছয় মাস টিকিয়ে রাখা সম্ভব হলে আমরা প্রায় ১০ গুণ গ্রো করতে পারব।

তিনি আরও বলেন, আগামী পাঁচ বছরে আমরা যদি ১০ বিলিয়ন ডলার ভ্যালুয়েশনে পৌঁছাতেে পারি, তাহলে কোম্পানিগুলোর রেভিনিউ পাঁচ মিলিয়ন ডলারের মতো হবে বলে আশা করছি। আমরা আশা করছি ২০২৫ সালের মধ্যে জিডিপিতে ২ শতাংশ অবদান রাখা যাবে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম মাধ্যমে।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours