নগদ সহায়তা বিতরণে দুর্নীতির সুযোগ নেই: আহমদ কায়কাউস

1 min read

নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেছেন, একটি বিষয় স্পষ্টভাবে বলতে পারি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৫০ লাখ দরিদ্র মানুষকে নগদ আড়াই হাজার টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম বা দুর্নীতির সুযোগ নেই। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বেশির ভাগ তথ্য সঠিক নয়। আর তালিকায় নাম থাকলেই কেউ নগদ টাকা পেয়ে যাবে, বিষয়টি এমন নয়।

সম্প্রতি গণমাধ্যমের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।

আহমদ কায়কাউস বলেন, সারা দেশে এত বড় কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে, এই নিশ্চয়তা দেওয়ার শক্তি হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। একজন সুবিধাভোগীকে তিনটি উপায়ে প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি সঠিক ব্যক্তি। প্রথম হচ্ছে, তার জাতীয় পরিচয়পত্র, দ্বিতীয় হচ্ছে, তাঁর মোবাইল নম্বর এবং তৃতীয় হচ্ছে তার নাম। একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে পুরো কাজটি সম্পন্ন করা হচ্ছে। এই তিনটি তথ্যে গরমিল পাওয়া গেলে তার নাম বাদ পড়বে। এখানে কারও চেষ্টা বা তদবিরের সুযোগ থাকছে না।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ছাড়াও জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, শিক্ষক ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এই তালিকা তৈরি করেছে। তারপরও বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়ছে। অন্ধের মতো ওই তালিকা অনুযায়ী টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়নি বলেই ত্রুটিগুলো ধরা পড়ছে। এখন ৫০ লাখ সুবিধাভোগী বাছাই করে স্বচ্ছতার সঙ্গে তাদের কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়াটা আমাদের চ্যালেঞ্জ এবং এটা করা সম্ভব। এখানে পুরো কাজটি দেখভাল করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ ছাড়া ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এই কাজে সহায়তা করছে।

আহমদ কায়কাউস বলেন, এখনকার পরিস্থিতিতে নগদ টাকা পেতে অনেকেই চেষ্টা করবে, এটা স্বাভাবিক। একটি উদাহরণ দেই; সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া কর্মচারীদেরও প্রচুর আবেদন এসেছে। তাদের অভাব থাকতে পারে, কিন্তু তারা এই ৫০ লাখ সুবিধাভোগীর মধ্যে পড়ে না।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, আমরা সফটওয়্যারে ৫০ লাখ মানুষের তথ্য আপলোড করেছি। যাদের নাম, পেশা, মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রে অসংগতি আছে তারা বাতিল হবে।

আহমদ কায়কাউস বলেন, এটা চলমান প্রক্রিয়া। পর্যায়ক্রমে দেওয়া হচ্ছে। এখনই একসঙ্গে সবাইকে নগদ টাকা দিয়ে দিতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। সরকারের লক্ষ্য এখানে খুবই পরিষ্কার, প্রাপ্য মানুষের হাতে টাকাটা পৌঁছে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে এই সহায়তা পাওয়ার যোগ্য নয়, এমন কেউ যাতে না পায় সেটা নিশ্চিত করা বড় দায়িত্ব। এ জন্য তালিকাটি তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এখন নতুন সুবিধা প্রত্যাশীদের নাম সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, যারা দৈনন্দিন কাজ করে খেতো, তাদের এখন কাজ নেই এবং আয়ের পথ বন্ধ। তাদের কথা চিন্তা করেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ মানুষকে অর্থ সহায়তার ঘোষণা দেন। এ জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে এক হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এই ভাতা পাওয়ার তালিকায় আছেন রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ-শ্রমিক, কৃষক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক ও সংবাদপত্রের হকারসহ নিম্ন আয়ের নানা পেশার মানুষ। প্রতি পরিবারে ধরা হয়েছে চারজন সদস্য, সেই হিসাবে এই নগদ সহায়তায় উপকার-ভোগী হবে ২ কোটি মানুষ। বিকাশ, রকেট, নগদ ও সিওর ক্যাশের মতো মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে এই তহবিল বিতরণ করা হবে।

আহমদ কায়কাউস বলেন, অনিয়মের চেষ্টা কেউ কেউ করতে পারে। কিন্তু আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, তাতে লাভ হবে না। সুবিধাভোগীর তিনটি তথ্য মিলতেই হবে, দুটি মিললেও কিন্তু হবে না। আমি বলব, এই জালিয়াতি করাটা খুব কঠিন। ধরা যাক, পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, একজন জনপ্রতিনিধি একাধিক নামের বিপরীতে একটি মোবাইল নম্বর দিয়েছে। কিন্তু সফটওয়্যার একটির বেশি মোবাইল নম্বর নেবে না। আবার যাদের নাম সুবিধা প্রত্যাশী হিসেবে এসেছে, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম ও পেশা উল্লেখ আছে এবং এই পরিচয়পত্র ন্যাশনাল ডেটাবেইস সংযুক্ত রয়েছে। সফটওয়্যার সেসব তথ্য কিন্তু সহজেই পেয়ে যাচ্ছে। তাই তালিকা পাঠালেই নগদ টাকা চলে যাবে, এমনটি ভাবার কারণ নেই। তারপরও যদি কেউ অনিয়মের চেষ্টা করে তাহলে রেহাই পাবে না। কারণ এই রেকর্ডগুলো কিন্তু সরকারের কাছে রয়ে গেল। এটা খতিয়ে দেখারও সুযোগ থাকছে।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours