পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টিতে সক্রিয় জেএসএসের ২টি গোষ্ঠী

1 min read

নিউজ ডেস্ক: রাঙামাটিতে গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সন্তু লারমা গ্রুপের সঙ্গে দলটির সংস্কারপন্থী গোষ্ঠীর (এমএন লারমা) গোলাগুলিতে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জেএসএসের সন্তু লারমা গ্রুপ।

এর আগে একই দিনে মালবাহী ২টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা থেকে চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে জেএসএসের দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধ হয়। এতে কোকো চাকমা (২৬) নামে লারমা গ্রুপের এক নেতা গুলিবিদ্ধ হয়ে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে পড়ে নিখোঁজ হন। পরে তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় গোলাগুলি থেকে বাঁচার জন্য রমজান আলী নামে অপর এক বোট চালক পানিতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বাঁচান।

মঙ্গলবার জনসংহতি সমিতির (সন্তু) সহ-সাধারণ সম্পাদক গুনেন্দু বিকাশ চাকমা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, বরকল উপজেলাধীন সুবলং এলাকায় গত ২৭ জুন স্মৃতিময় চাকমা কোকো নামে সুধাসিন্ধু-তাতিন্দ্র নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থীদের এক ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসী’ চাঁদাবাজি করতে গিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের গুলিতে নিহত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জনসংহতি সমিতির (সন্তু) ৬০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা আসামিদের ‘নির্দোষ’ দাবি করে মামলা প্রত্যাহার চায়। এছাড়া হামলাকারীদের ‘অজ্ঞাত পরিচয় সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।

অথচ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জলপথে রাঙ্গামাটির প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত সুবলংয়ে দীর্ঘদিন ধরে জেএসএস (সন্তু) ও জেএসএস (এমএন লারমা) গ্রুপের ক্যাডাররা প্রতিটি নৌযান থেকে চাঁদা আদায় করে আসছে। ওই দিন লারমা গ্রুপ সকালে ইট ও কংক্রিট বোঝাই দুটি বোট থেকে চাঁদা আদায়ের জন্য থামতে বললে বোট দুটি না থেমে চলে যায়। পরে লারমা গ্রুপ একটি স্পিডবোট নিয়ে বোটের গতিরোধ করে। এ ঘটনা দেখে পাশে আমবাগান এলাকা থেকে জেএসএসের সন্তু গ্রুপ প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে উভয়ের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধ শুরু হয়। এতে লারমা গ্রুপের নেতা কোকো গুলিবিদ্ধ হন এবং পরে তার মরদেহ পাওয়া যায়। স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকেও একই তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে এই ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে ঘটেছে- জেএসএস (সন্তু) গ্রুপের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হলেও অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সালে জেএসএস ভেঙে দুটি গ্রুপ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই তাদের মধ্যে ভয়ংকর সংঘাত চলে আসছে। আর তাতে পাহাড়ে বারবার ঝরেছে রক্ত। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির বাস্তবায়নও বিঘ্নিত হয়েছে।

সশস্ত্র গোষ্ঠী দুটিকে শান্ত করতে শুরু থেকেই চেষ্টা চালিয়ে আসছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রায়ই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই গ্রুপ।

এর আগে ২০১৮ সালের ৩ মে জেএসএসের সংস্কারপন্থী অংশের সহ-সভাপতি ও নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে হত্যা করে দলটির সন্তু গ্রুপের ক্যাডাররা। পরে তার দাহক্রিয়ায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে আরও ছয়জনকে হত্যা করা হয়। এভাবেই পার্বত্য অঞ্চলে একের পর এক সহিংসতা করে আসছে জেএসএসের দুটি গ্রুপ। তাদের এই সংঘাতে অতিষ্ঠ পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় মানুষ।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours