হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় চরিত্ররা যখন সংসদে

1 min read

নিউজ ডেস্ক: যে কোনো রাষ্ট্রেই সংস্কৃতি অঙ্গন গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ। যার সংস্কৃতি যত মজবুত তার সমাজ ও নাগরিকের মূল্যবোধও ততো মজবুত। সে ভাবনা থেকেই যুগে যুগে রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে সংস্কৃতি কিংবা সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছে রাজনীতি।

বিশ্বের নানা দেশের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে দেখা গেছে অনেক সংস্কৃতিকর্মীকে। অনেকে সংস্কৃতি অঙ্গনের জনপ্রিয়তাকে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত রাখার প্রত্যাশায় এমপি-মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন।

বাংলাদেশেও সেই ঘটনা বেশ পুরনো। দীর্ঘদিন ধরেই অনেক সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা সংসদ আলোকিত করে আসছেন। তবে এদেশের সংসদে স্বশরীরে না থেকেও দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে মিশে আছে কিংবদন্তি লেখক হুমায়ূন আহমেদের নাম। একটু অদ্ভূত শোনালেও কথাটা সত্যি।

২০০১ সালে নীলফামারী-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জনপ্রিয় অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। হুমায়ূন আহমেদের নাটক দিয়েই যার জনপ্রিয়তার শুরু। এমনকি অনেকে তাকে হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের চরিত্রে বাকের ভাই নামেও ডাকতে বেশি পছন্দ করেন।

শুধু তাই নয়, যখন নির্বাচনে অংশ নেন নূর তখন তার নেতাকর্মীরা বাকের ভাইকে নৌকা মার্কায় ভোট দিন বলেও স্লোগান দিয়েছেন বলে শোনা যায়। কালজয়ী চরিত্র বাকের ভাই দিয়ে সংসদে প্রবেশ শুরু হুমায়ূন আহমেদের।

এরপর সংসদে আসেন হুমায়ূন আহমেদের আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র ‘রুপা’ চরিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি পাওয়া অভিনেত্রী তারানা হালিম। ১৯৯৪ সালে বিটিভিতে প্রচার হওয়া ‘হিমু’ নাটকে রুপা চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। সেখানে হিমু চরিত্রে তার বিপরীতে ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর।

নূর ও তারানা দুজনই হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। দুজনই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবং তারা দুজনই মন্ত্রী হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করেছেন। বিষয়টি বিরল ও কাকতালীয়ভাবে একটি রেকর্ড।

সেই তালিকা আরও সমৃদ্ধ হলো সুবর্ণা মুস্তাফাকে দিয়ে। একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত হয়েছেন সদ্য একুশে পদক পাওয়া এই অভিনেত্রী। তার এমপি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত।

এ নিয়েই শুরু হয়েছে অন্য রকম আলোচনা। যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ ও তার লেখা নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’ দুটি চরিত্র বাকের ভাই এবং মুনা আপা।

১৯৯০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার শুরু হয়েছিল ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকটি। এটি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। বিশেষ করে গুন্ডা প্রকৃতির শিক্ষিত বেকার যুবক বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করে আসাদুজ্জামান নূর হয়ে উঠেছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আলোচিত অভিনেতা।

নাটকে বিনা অপরাধে তার ফাঁসি হওয়ার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছিল মানুষ। সে এক ইতিহাস, যা আজও বাংলা নাটকের জন্য বিরল দৃষ্টান্ত ও কিংবদন্তি হয়ে আছে।

সেই নাটকে বাকের ভাইয়ের বিপরীতে ‘মুনা আপা’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণীদের প্রতিনিধি হিসেবে এই চরিত্রটি নব্বই দশকে জয় করে নিয়েছিল দর্শকের মন।

এছাড়া বেশকিছু নাটকে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন নূর-সুবর্ণা। সেগুলোও দর্শকপ্রিয় হয়েছে। তবে এই জুটির সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা বা জনপ্রিয় ‘কোথাও কেউ নেই’ বাকের ভাই ও মুনা চরিত্র দিয়েই।

তাই দীর্ঘদিন পর নাটকটি ও তার চরিত্রগুলো আলোচনায় এলো সুবর্ণা মুস্তাফার এমপি হতে যাওয়ার খবরে। কারণ তার সঙ্গে সংসদ সদস্য হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদে দেখা যাবে বাকের ভাই চরিত্রের আসাদুজ্জামান নূরকেও।

আসাদুজ্জামান নূর নীলফামারী-২ আসন থেকে ২০০১, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ৯ম জাতীয় সংসদের বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে সদস্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর ১২ জানুয়ারি গঠিত মন্ত্রিসভায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে তিনি একই আসন থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

কোনো একজন লেখকের সাহিত্য বা নাটকের একাধিক জনপ্রিয় চরিত্ররা একসঙ্গে সংসদ সদস্য হওয়ার ঘটনাটি বিরল দৃষ্টান্ত। একটা অদ্ভূত রকমের কাকতালীয় রেকর্ডও, যা ঘটেছে ‘কোথাও কেউ নেই’ ও ‘হিমু’ নাটকের ভাগ্যে।

যেহেতু এবার সংসদ সদস্য হননি তারানা হালিম তাই আলোচনার সবটুকু আলো ‘কোথাও কেউ নেই’র দুই চরিত্র বাকের ভাই ও মুনা আপাকে ঘিরে। এই জনপ্রিয় জুটির হাত ধরে আলোচনায় নাটকের লেখক হুমায়ূন আহমেদও।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও লেখালেখি চলছে। অনেকে মজা করে ট্রলও করছেন। তারা মজার ছলে প্রশ্নও ছুড়ে দিয়েছেন, এরপর হুমায়ূন আহমেদের নাটক বা সাহিত্যের কোন জুটি সংসদে যাবেন?

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours