রাজধানীর যানজট নিরসনে ১৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

1 min read

নিউজ ডেস্ক: রাজধানীবাসীর জনজীবনকে যানজটের দুর্বিসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য ঢাকায় গত দশ বছরে ১৭ হাজার ৬১৭ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১৪ হাজার ৬৯ কোটি, ঢাকা উত্তর সিটি দুই হাজার ৬১৩ কোটি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীনে ৯৩৫ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তায়ন করছে।

বুধবার জাতীয় সংসদে ভোলা-৩ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার যানজট নিরসনে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। সেসব তথ্য পর্যালোচনা করে গত দশ বছরে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের তথ্য জানা যায়।

সংসদ সদস্যের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী লিখিত উত্তরে বলেন, ঢাকা মহানগরীর যানজট সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে গত ১০ বছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে মাদানী এভিনিউয়ের পূর্বমুখী সম্প্রসারণ (প্রগতি সরণীর ইন্টারসেকশন হতে বালূ নদী পর্যন্ত) প্রকল্প ব্যয় ৪২১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলকার সমন্বিত উন্নয়ন, প্রকল্প ব্যয় দুই হাজার ২৩৬ কোটি দুই লাখ টাকা।

শেখ হাসিনা বলেন, পূর্বাচল লিংকরোডের উভয় পাশে (কুড়িল হতে বোয়ালিয়া পর্যন্ত) ১০০ ফুট প্রসস্ত খাল খনন ও উন্নয়ন, প্রকল্প ব্যয় ১০ হাজার ৩২৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। গুলশান-বনাণী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্প ব্যয় ৪১০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। উত্তরা লেক উন্নয়নে প্রকল্প ব্যয় ৩৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

প্রধানমন্ত্রী জানান, মাদানী এভিনিউ হতে বালু নদী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ এবং বালু নদী হতে শীতলক্ষা নদী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (প্রথম পর্ব) প্রকল্প ব্যয় এক হাজার২৫৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এর বাইরে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীনে তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় হতে উত্তরার হাউজ বিল্ডিং পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ণ নির্মাণ প্রকল্পে ২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। মোহাম্মদপুর বেড়ীবাঁধ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এয়ারপোর্ট রোড থেকে মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ১৪৬ কোটি টাকা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিরপুর ১০ নাম্বার থেকে কচুক্ষেত রোড প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন নির্মাণ প্রকল্পে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। মিরপুর গ্রামীণ ব্যংক হতে আগারগাঁও পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ২৪০ কোটি। মিরপুর সেনানিবাস বাইপাস রোড নির্মাণ, সিরামিক রোড উন্নয়ন ও দক্ষিণ পল্লবী এলাকার নর্দমা ও সড়ক উন্নয়নে নির্মাণ প্রকল্পে ৪১ কোটি ৩৪ লাখ। মিরপুর দারুসসালাম সড়ক (আনসার ক্যাম্প) থেকে কচুক্ষেত পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে ৪৮৫ কোটি। শাহবাগ, শেরাটন, বাংলামোটর ও সোনারগাঁও ইন্টারসেকশনে আন্ডারপাস নির্মাণ প্রকল্পে ১৬৫ কোটি। রোকেয়া স্বরণর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে মিরপুর রোডের গণভবন পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ (১ম সংশোধিত) নির্মাণ প্রকল্পে ২৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক উন্নয়নসহ নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ নির্মাণ প্রকল্পে এক হাজার ২৫ কোটি। ইসিবি চত্বর হতে মিরপুর পর্যন্কত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন এবং কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পে ৬১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীনে থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, যাত্রাবাড়ি মোড় থেকে ত্রিমুখী রাস্তা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে ১৫৪ কোটি ৮৮৯ লাখ টাকা। সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী ও দয়াগঞ্জ এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা, নর্দমা এবং ফুটপাত উন্নয়ন প্রকল্পে ২১ কোটি ৩৩২ লাখ টাকা। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নীচে যাত্রাবাড়ি থকে জয়কালী মন্দির পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা এবং ফ’টপপাতের উন্নয়নে ২৩ কোটি ৭১ লাখ টাকার প্রকল্প। নবসংযুক্ত শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইইল এবং সারুলিয়া এলাকার সড়ক অবকাঠামে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পে ৭৩৪ কোটি দুই লাখ টাকা।

সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে গণপরিবহন হিসেবে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। বর্তমানে উত্তরা ৩য় পর্ব-পল্লবী- তেজগাঁও-মতিঝিল রুটে এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এই পথের মোট দৈর্ঘ্য ২০.১ কিলোমিটার। এমআরটি লাইন-১ গাজীপুর-এয়ারপোর্ট-কমলাপুর-ঝিলমিল-পূর্বাচল-খিলক্ষেত এবং এমআরটি লাইন-৫ ভুলা-বাড্ডা-মিরপুর রোড-মিরপুর ১০-গাবতলী বাস টার্মিনাল-ধানমন্ডি-বসুন্ধরা সিটি রুটে নির্মাণ করা হবে। এছাড়া গাজীপুর থেকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার বিআরটি লাইন-৩ প্রকল্প চলমান রয়েছে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেল লাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মান, নারায়ণগঞ্জ-জয়দেবপুর সেকশনে আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কার্যক্রম, ঢাকা শঞরের চতুর্দিকে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প এছাড়া ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার নৌপথে চলাচলের সুবিধা চালু করার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

এর বাইরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অধীনে বিশ্বব্যাংকের সাহায্যপুষ্ট ‘ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ (কেইস) প্রকল্পের অধীনে ঢাকা মহানগরীর ১০০টি ট্রাফিক ইন্টারসেকশনের মধ্যে ৯২টি ইন্টারসেকশনের অটোমেটিক এবং রিমোট কন্ট্রোলের সমন্বয়ে ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট অনুযায়ী যানবাহন চলাচলের প্রকল্প চলমান রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তবে এসব প্রকল্পের ব্যয় উল্লেখ করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, ঢাকার সার্বিক যানবাহন ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে বিভিন্ন রুটে থাকা অপ্রয়োজনীয় ইউটার্ণ/ক্রসিংগুলো অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours