‘আদালতে রায় হলেই জামায়াত নিষিদ্ধ’

1 min read

নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে কি না, সে বিষয়টি জানতে রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এসংক্রান্ত মামলার রায় শিগগিরই হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বুধবার জাতীয় সংসদে তরীকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা ওই আশা প্রকাশ করেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা এবং তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনা হবে কি না জানতে চান নজিবুল বশর। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শর্ত পূরণ করতে পারেনি বলে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে। এখন তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার একটা মামলা কোর্টে রয়ে গেছে। এই মামলার রায় যতক্ষণ না হবে সেখানে বোধ হয় আমরা কোনো কিছু করতে পারি না। আমি আশা করি, কোর্টের রায় খুব শিগগির যদি হয়ে যায় তাহলে জামায়াত দল হিসেবে নিষিদ্ধ হবে।’

তারেক রহমানসহ দণ্ডিত পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা অপরাধী, মানুষ খুন থেকে শুরু করে যারা মানি লন্ডারিং করেছে, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে, দুর্নীতি এ সমস্ত মামলায় যারা সাজাপ্রাপ্ত, যারা বিদেশে পালিয়ে আছে, পলাতক আসামি তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের আলোচনা চলছে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা তাদের ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করতে পারব।’

নির্বাচনে জামায়াতকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এটা ন্যক্কারজনক, তারা নিবন্ধিত না, সেই অবস্থায়ও তারা বিএনপির সঙ্গে জোট করে জামায়াতে ইসলামী নামে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছে। জনগণকে ধন্যবাদ জানাই তারা জামায়াতকে ভোট দেয়নি, প্রত্যাখ্যান করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘জামায়াত যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল। এ দেশে গণহত্যা থেকে শুরু করে নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ নানা ধরনের অপরাধ তারা করেছে। স্বাধীনতার পর তাদের অপরাধের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তাদের বিচার বন্ধ করে দেয়, তাদের ভোটের অধিকার দেয়, রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়, যেটা আমাদের সংবিধানে ছিল না। সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়।’

চলতি বছরেই পদ্মা সেতু : জাতীয় পার্টির ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে এ প্রকল্পের ৬২ শতাংশ ভৌত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কারিগরি দিক থেকে অত্যন্ত জটিল এ সেতুর পাইল ড্রাইভিং চলাকালে সয়েল কন্ডিশনের কারণে কিছু পাইলের পুনরায় ডিজাইন করতে হয়েছে। দেশি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী এসব পাইলের ডিজাইন সম্পন্ন করতে কিছুটা অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়েছে। এ সত্ত্বেও ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপন এবং পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা হতে বরিশাল পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপনের কাজও চলছে। তিনি জানান, বরিশাল জেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার লক্ষ্যে ভাঙ্গা হতে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

রেকর্ডের জন্য রাজনীতি করি না : সরকারি দলের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি রেকর্ডের জন্য রাজনীতি করি না। আমার বাবা এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমরা দুই বোন প্রাণে বেঁচে যাই। আমি এর আগে কোনো দিন চিন্তাই করিনি জাতীয় রাজনীতিতে আসব। যদিও ছাত্রাবস্থায়ই আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘হত্যা, মামলা, জেল-জুলুম, হত্যার পরিকল্পনা, গ্রেনেড আক্রমণ কোনো কিছুই আমাকে আমার সংকল্প থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। আর আমার সংকল্প হচ্ছে আমার বাবা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি দেশটা স্বাধীন করেছিলেন, কিন্তু মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে মুক্ত করার আগেই বর্বর ঘাতকের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে নিহত হন। আমার প্রতিজ্ঞা ছিল এ দেশের মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তি। এ দেশের সাধারণ মানুষ যাতে ভালোভাবে বাঁচতে পারে, উন্নত-সমৃদ্ধ জীবনের অধিকরী হতে পারে তা বাস্তবায়ন করাই আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।’

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় ছিল প্রত্যাশিত : সরকারি দলের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এ দেশের আপামর জনসাধারণ বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। এ বিজয় ছিল খুবই প্রত্যাশিত। নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জরিপের ফলাফলে এ রকম পূর্বাভাসই দেওয়া হয়েছিল। লন্ডনভিত্তিক ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিট এবং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের জরিপের ফল সবাই লক্ষ করেছেন। আর আমাদের ল্যান্ড স্লাইড বিজয়ের বহুবিধ কারণ রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘একটি সমাজের প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যখন কোনো দলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন, তখন তার পক্ষে গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়। আমাদের বেলায় তাই হয়েছে। এ দেশের মানুষ আমাদের ইশতেহারের পক্ষে নিরঙ্কুশ রায় প্রদান করেছেন।’

সংসদ নেতা বলেন, ‘যেকোনো গণতান্ত্রিক নির্বাচন হলো পক্ষ এবং প্রতিপক্ষের মধ্যে ভোটারদের সমর্থন আদায়ের প্রতিযোগিতা। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হলে প্রতিযোগিতা জোরালো হয়; কিন্তু এবারের নির্বাচনে আমাদের যারা প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল তাদের কোনো নির্বাচনী প্রস্তুতি বা কৌশল ছিল বলে আমার মনে হয়নি।’ বিএনপি-জামায়াত জোটের ভরাডুবির কারণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে তারা এক আসনে তিন-চার বা এরও বেশি প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল। তারা দুর্বল প্রার্থী দিয়েছিল। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। নিজেরা জনগণের জন্য কী করবে সে কথা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপির ধানের শীষ মার্কায় যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের মনোনয়ন তরুণ ভোটাররা মেনে নিতে পারেনি। তরুণরা আর যা-ই হোক স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পক্ষ নিতে পারে না।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours