সুটকেসের ভেতর লাশ, সেই নারী গ্রেফতার

1 min read

ফরিদপুরে নতুন বাসস্ট্যান্ডে ফেলে রাখা সুটকেসের ভেতর থেকে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের পর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে সুটকেসের ভেতর থেকে উদ্ধার করা লাশের পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার দুই দিনের মধ্যে অজ্ঞাত যুবকের পরিচয় এবং হত্যাকারী নারীকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছে পুলিশ।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোর্সেদ আলম। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন ওই নারী।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোর্সেদ আলম জানান, গত ২৭ জানুয়ারি সকালে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকার নতুন বাসস্ট্যান্ড গোল্ডেন লাইন কাউন্টারের পূর্বপাশে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১টি বড় সুটকেস (লাগেজ) পাওয়া যায়। পরিত্যক্ত লাগেজটি দেখে স্থানীয়রা ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় লাগেজের তালা ভেঙে ভেতরে অজ্ঞাতনামা পুরুষের (৪৫) লাশ দেখতে পায়।

এরপর জেলা পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রাথমিকভাবে লাশের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় ঘটনার পরদিন কোতোয়ালি থানার এসআই (নি.) মো. শামীম হাসান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এরপর পুলিশের একটি চৌকস টিম মামলাটির তদন্ত শুরু করে। উন্নত তথ্য-প্রযুক্তি ও স্থানীয় তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারে ২৭ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ৮টার দিকে বোরকা পরা এক নারী থ্রি-হুইলার (মাহেন্দ্র) গাড়িতে এসে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিকাশ পরিবহণের কাউন্টার হতে ১টি টিকিট কাটেন এবং লাগেজটি গাড়ির মালামাল রাখার বক্সে রেখে নাস্তা করার কথা বলে পালিয়ে যান।

নির্ধারিত সময়ে গাড়িটি ছাড়ার মুহূর্তে লাগেজের মালিককে না পেয়ে পরিবহণ কর্তৃপক্ষ লাগেজটি গাড়ির পাশে নামিয়ে রাখেন এবং গাড়িটি যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়। বিভিন্ন তথ্য, সিসি ক্যামেরা ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যের সূত্র ধরে পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দঘাট বাজার থেকে যুবকের লাশ বহনকারী মাহেন্দ্র গাড়ি ও গাড়িচালককে শনাক্ত করে তাদের হেফাজতে নেয়।

তার দেওয়া তথ্যমতে লাগেজ বহনকারী রিকশাচালককে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে গোয়ালন্দঘাট থানাধীন পতিতাপল্লীর জনৈক রুবেল মাতুব্বরের বাড়ির ২য় তলার ভাড়াটিয়া রোজিনার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঘটনার পর থেকে রোজিনা পলাতক ছিলেন। পরবর্তীতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রোজিনাকে মঙ্গলবার ভোররাত ৩টার দিকে ঢাকার কদমতলী থানাধীন জুরাইন এলাকার জনৈক মো. দেওয়ান বাড়ির ৬ তলা হতে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামি রোজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার আবুল কাসেম ও পারুল বেগমের কন্যা রোজিনা আক্তারের (কাজল) যখন ১৪ বছর বয়স তখন তার বাবা-মা তাকে জোরপূর্বক বিয়ে দেন। বিবাহের কিছুদিন পর তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর চায়ের দোকানদার জনৈক হাকিমের সঙ্গে তার ২য় বিবাহ হয়। হাকিম মারা যাওয়ার পর তিনি জনৈক সুজনকে ৩য় বিবাহ করেন। তিনি অনুমান ১০ থেকে ১২ বছর যাবত গোয়ালন্দঘাট দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে আছেন।

আসামি রোজিনা জানান, যুবক মিলন প্রামাণিকের বাড়ি পাবনা সদরে হলেও সে রাজবাড়ী জেলায় বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করতেন এবং মাঝে মাঝে যৌনপল্লীতে আসতেন। গত ২৬ জানুয়ারি মিলন প্রামাণিক আসামি রোজিনার ভাড়া বাসায় যান এবং ২৭ জানুয়ারি রাত অনুমান ২টার দিকে তাদের মধ্যে টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে ঝগড়া-বিবাদ হয়। একপর্যায়ে যুবক মিলন আসামি রোজিনাকে অশ্লীল ভাষায় গালি দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তার পরিহিত ওড়না গলায় প্যাঁচ দিয়ে যুবক মিলনকে হত্যা করেন রোজিনা।

যুবক মিলনের মৃত্যু নিশ্চিত হলে তাকে খাট হতে নামিয়ে লাশটি কালো রঙের ১টি কম্বল, ১টি বড় বেডশিট, ৩টি বালিশের কাভার দ্বারা মুড়িয়ে তার ঘরে থাকা বড় ১টি সুটকেসের (লাগেজ) ভিতরে রাখেন। পরবর্তীতে সকাল অনুমান সাড়ে ৬টার দিকে ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে লাশভর্তি লাগেজটি নিয়ে রিকশাযোগে গোয়ালন্দ বাজারে যান। সেখান থেকে ফরিদপুর যাওয়ার জন্য ৬০০ টাকা দিয়ে ১টি থ্রি-হুইলার (মাহেন্দ্র) গাড়ি রিজার্ভ করে লাশভর্তি লাগেজসহ রোজিনা ফরিদপুর নতুন বাসস্ট্যান্ডে আসেন।

এরপর বিকাশ পরিবহণে সাড়ে ৮টার গাড়ির টিকিট কাটেন এবং লাশভর্তি লাগেজটি গাড়ির হেলপারের সহায়তায় গাড়ির বক্সে রাখেন। লাগেজের এত ওজন কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে আসামি জানান- এটির ভেতরে একটি এসি আছে, তাই ওজন বেশি। এরপর গাড়ি ছাড়তে কিছুটা বিলম্ব হলে কৌশলে নাস্তা খাওয়ার কথা বলে রোজিনা দ্রুত পালিয়ে যান। এরপর যাত্রী রোজিনা ফিরে না এলে গাড়ির বক্স থেকে লাগেজটি নামিয়ে রেখে গাড়ি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

পুলিশ জানায়, যুবকের মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। এদিকে হত্যাকারী রোজিনাকে গ্রেফতারের পর আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে বলে জানায় পুলিশ। রিমান্ডে আরও তথ্য জানা যেতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামানসহ ফরিদপুর জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা। এ সময় ফরিদপুরে কর্মরত প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours