জাহাঙ্গীর নাটকে বড় ওস্তাদ: আজমত উল্লা

1 min read

আজ বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। রাজধানী ঢাকার পাশে গুরুত্বপূর্ণ এই মহানগরীর দায়িত্ব আগামী পাঁচ বছরের জন্য কারা পাবেন, তা ঠিক করবেন এই নির্বাচনী এলাকার প্রায় ১২ লাখ ভোটার। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে প্রবীণ নেতা ও টঙ্গী পৌরসভার একাধিকবারের মেয়র আজমত উল্লা খানকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের নানা দিক নিয়ে  গণমাধ্যেমের সঙ্গে কথা বলেছেন নৌকার প্রার্থী।

নির্বাচনী প্রচার শেষ হয়েছে। নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে না। এই অবস্থায় কাকে আপনার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন?

আজমত উল্লা খান: ধন্যবাদ। আমি আগেও বলেছি বিএনপি নির্বাচনে মেয়র পদে অংশগ্রহণ না করলেও পরোক্ষভাবে কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। আপনার দেখেছেন, উৎসবমুখর ও আনন্দমুখর পরিবেশে এখানে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন ঘিরে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ করা যাচ্ছে। অবশ্যই এটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। আমি সকল প্রার্থীকে সম্মান করি এবং সকলকেই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি। কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা প্রার্থীকে আমি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি না। বাকিটা আমি আমার প্রিয় নগরবাসীর উপর ছেড়ে দিয়েছি, তাঁরাই সিদ্ধান্ত নিবেন কে তাঁদের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী এবং কে তাঁদের প্রতিনিধি হলে তাঁরা সম্মানবোধ করবেন।

এই নির্বাচনে কী কী বিষয় ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

আজমত উল্লা খান: স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণ মানুষ এবং ভোটার স্থানীয়দের মধ্যে মূল প্রত্যাশা থাকে কার দ্বারা আমরা বেশি উপকৃত হব, কোন প্রার্থী আমাদের স্থানীয় সমস্যা সমাধান এবং এলাকার উন্নয়নের মূল ভূমিকা পালন করতে পারবেন। তাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন মানুষের সেবা গ্রহণের মূল খাত যেগুলো রয়েছে, মানুষ চিন্তা করবে কার দ্বারা তাদের এসব চাহিদা সুস্থ, সুন্দরভাবে পূরণ হতে পারে। তা ছাড়া একটি সিটি করপোরেশনকে পরিচ্ছন্ন রাখা, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করা, তাদের সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, সামাজিক নিরাপত্তাবলয় সৃষ্টি করা, সকল নাগরিক সেবাগুলো সহজে এবং হয়রানি ছাড়া কার দ্বারা তারা পেতে পারেন—এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে নাগরিকগণ ভোটে অংশগ্রহণ করবেন।

আনুষ্ঠানিক প্রচারের সময়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছে আপনার বিরুদ্ধে। অনেকে মনে করেন, আপনি সরকারি দলের প্রার্থী হিসেবে বেশি সুবিধা পেয়েছেন—এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?

আজমত উল্লা খান: প্রশাসন থেকে আমার ওপরেই আইন বেশি প্রয়োগ করা হয়েছে। আমাকে নির্বাচন কমিশন তলব করেছে। আমার অন্তত ১২ থেকে ১৪টা মিছিলে জরিমানা করেছে। এমনকি আমার পার্টি অফিসে পর্যন্ত তারা অভিযান চালিয়েছে। অফিসের ভিতরে সাঁটানো একটি ব্যানার নিয়ে তারা আপত্তি তুলেছে এই বলে যে এটি একটু আকারে বড় হয়েছে। কিন্তু সেটা তো আমার নির্বাচনী প্রচারণার অংশ ছিল না। সুতরাং, এসব বিবেচনায় আমি বলতে পারি, প্রতিপক্ষের প্রার্থীগণ শুধু অভিযোগ করার জন্যই এসব অভিযোগ করছেন।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন অভিযোগ করেছেন, তাঁর প্রচারে একাধিকবার বাধা দেওয়া হয়েছে বা হামলা করা হয়েছে। প্রচারে বাধা দেওয়া বা হামলার ব্যাপারটিকে আপনি গণতান্ত্রিক বা যৌক্তিক মনে করেন কি?

আজমত উল্লা খান: না, কারও প্রচারণায় বাধা দেওয়াকে আমি গণতান্ত্রিক বা যৌক্তিক মনে করি না। আমাদের জানতে হবে এর পেছনে কোনো নাটক আছে কি না। কারণ, ওনার ছেলে (জাহাঙ্গীর) নাটকে বড় ওস্তাদ। তিনি তিন বছর এখানে দায়িত্ব পালন করেছেন। মানুষের উপর ট্যাক্সের বোঝা চাপিয়ে, কলকারখানার উপর ট্যাক্স চাপিয়ে দেওয়ার নামে ব্যবসা আদায় করার জন্য চাপ সৃষ্টি করার অজস্র অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে।

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণায় তাঁরা ‘স্টান্টবাজি’ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনের সম্পূর্ণ ট্যাক্স তিনি মওকুফ করে দেবেন। কিন্তু সম্পূর্ণ ট্যাক্স মওকুফ করার কোনো ক্ষমতা কি কারও আছে? এ ধরনের চমকপ্রদ কথা সব সময় সে (জাহাঙ্গীর) বলে থাকে। নির্বাচন উপলক্ষে মানুষকে বোকা বানানোর জন্য সে রকমই একটি কথা সে এখানে বলেছে।

মা-ছেলের নির্বাচন কীভাবে দেখবেন, আসলে কে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী?

আজমত উল্লা খান: নির্বাচনের একজন প্রার্থীর ছেলের নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির কথা এখন নগরবাসী সবাই জানে। এমনকি মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগেও তার দুর্নীতি নিয়ে রিট পিটিশন হয়েছে। আপনাদের সুবিধার জন্য আমি দুয়েকটি জায়গার উদাহরণও দিতে পারি। দুর্নীতির আর কোনো প্রমাণ দরকার হবে না, আপনারা শুধু সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পাবেন, এসি লাগানোর কথা, লিফট লাগানোর কথা, সেগুলো কি লাগানো হয়েছে? এগুলো এখানে লাগানোর জন্য কত টাকার বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে?

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের নাম করেও কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ যখন বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে, তখন সারা বাংলাদেশে সকল জনসমাবেশ, সভা ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান জাতীয়ভাবেই পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ কারণে তখন অনুষ্ঠান হয়নি। কিন্তু তারপরও অনুষ্ঠানের নাম করে কোটি কোটি টাকা নগর সিটি করপোরেশন থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে । সিটি করপোরেশনের নামে বিভিন্ন শিল্পমালিকদের কাছ থেকে পে-অর্ডার নিয়ে সিটি করপোরেশনের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না খুলে মেয়রের নামে আলাদা গোপন অ্যাকাউন্ট করে সেই অ্যাকাউন্টে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ট্যাক্সের আদায়কৃত পে-অর্ডার বানিয়ে সে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই ধরনের অসংখ্য প্রমাণ গাজীপুর নগরবাসীর সবার এখন জানা হয়ে গেছে।

এই টঙ্গী এলাকার ৫৬টি টিউবয়েল স্থাপন করার জন্য প্রকল্প দেখিয়ে তিনি পাঁচ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। এ রকম অসংখ্য অনিয়ম এবং দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে।

আগামীকাল ভোটে বিজয় নিয়ে কতটুকু আশাবাদী আপনি? ফল যা-ই আসুক, মেনে নেবেন কি না?

আজমত উল্লা খান: আমি যেহেতু একজন রাজনৈতিক কর্মী। আমার দল একটি গণতান্ত্রিক দল। আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্রের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল, জনগণের রায়ের প্রতিও আমি শ্রদ্ধাশীল। তাই আমার প্রিয় গাজীপুরবাসী যে রায় দেবেন, তা আমি মাথা পেতে নেব।

আমি এই গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। কোনো অপপ্রচার, কোনো গুজব, কোনো মিথ্যাই কাজে আসবে না। মানুষ ঠিকই ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে উন্নয়নের প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবেন ইনশাআল্লাহ।

মানুষ আপনাকে কেন ভোট দেবে?

আজমত উল্লা খান: আমি ইতিমধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছি। আমি প্রচারের সময় বিভিন্ন পথসভায় নগরীর উন্নয়নে কী করব, তা বিস্তারিত জানিয়েছি। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে আগামী পাঁচ বছর আমার কী পরিকল্পনা, আমার কী লক্ষ্য, মানুষকে আমি কীভাবে সেবা দেব—এসব বিষয় উপস্থাপন করেছি।

আমি ১৮ বছর নগরবাসীর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। তাঁরা জানেন, আমি কখনো কোনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেইনি—তাঁরা এটা বিশ্বাস করেন, আজমত উল্লা খান মিথ্যা আশ্বাস দেয় না এবং আমি যা করতে পারি না, তা কোনো দিন বলি না এবং ১৮ বছর মানুষ আমাকে পরীক্ষা করেছে। এই সময়ের মধ্যে কোনো দুর্নীতি বা কোনো নিয়মের অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়নি। আমার বিরুদ্ধে কেউ কোনো স্বজনপ্রীতির অভিযোগ আজ পর্যন্ত আনতে পারেনি। সম্মানিত ভোটারগণ এসব বিষয় দেখেছেন।

সে জন্য আমি বিশ্বাস করি, আমি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি যে আবেদন জানিয়েছি, তাঁরা সেগুলো বিশ্বাস করেছেন, আস্থায় নিয়েছেন। তাঁরা এইটুকু অন্তত বিশ্বাস করেছেন যে এই ভদ্রলোক আর যা-ই করুক মানুষকে ব্লাফ দেয় না।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours