কোণঠাসা রুমিন, লাইমলাইটে শামা

1 min read

বিএনপির রাজনীতিতে রুমিন ফারহানা এসেছিলেন হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো। যদিও তার পিতা একজন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ভাষা সৈনিক ছিলেন। কিন্তু তারপরও বিএনপির রাজনীতিতে তার উত্থান অনেকটাই নাটকীয়তায় ভরা। তারেক জিয়ার আশীর্বাদে দলের অনেক হেভিওয়েট নারী নেতাদেরকে ডিঙ্গিয়ে তাকে জাতীয় সংসদের মহিলা আসনের কোটায় সংসদ সদস্য হয়েছিলেন এবং সংসদ সদস্য হিসেবে রুমিন ফারহানা ভালোই আলোচিত হয়েছিলেন এবং সেই সময় বিএনপির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতায় পরিণত হন রুমিন ফারহানা।

রুমিন ফারহানার সঙ্গে এক ধরনের প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ছিল আরেকজন জাতীয় রাজনৈতিক নেতার কন্যা শামা ওবায়েদের। শামা ওবায়েদ বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতা কেএম ওবায়দুর রহমানের কন্যা। কিন্তু রুমিন ফারহানার উত্থানের সাথে সাথেই শামা ওবায়েদ বিএনপির রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। যখন নারী সংসদ সদস্যদেরকে মনোনয়ন দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন শামা ওবায়েদ আশা করেছিলেন যে তিনি হয়তো মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আর মনোনয়ন পাননি। কিন্তু শামা ওবায়েদও রাজনীতির মধ্যে বেড়ে ওঠা। কাজেই তিনি হাল ছাড়েননি। আস্তে আস্তে তিনি তার জায়গা করে নিয়েছেন এবং রুমিন ফারহানাকে মোটামুটি লগআউট করে ফেলেছেন।

সম্প্রতি জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইসের সঙ্গে বিএনপির তিন নেতার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং শামা ওবায়েদ। শুধু এই বৈঠকই নয়, গত কিছুদিন ধরেই বিএনপি কূটনৈতিক অঙ্গনে যে বৈঠকগুলো করছে সেখানে শামা ওবায়েদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অথচ জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের আগে কূটনীতিকদের সাথে বৈঠকগুলোতে রুমিন ফারহানার সপ্রতিভ উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তিনি বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে যেতেন। বিশেষ করে মার্কিন দূতাবাসে একাধিক কর্মকর্তার সাথে বৈঠকে রুমিন ফারহানার উপস্থিতি ছিল। সেখান থেকে রুমিন ফারহানা কেন কোণঠাসা হয়ে পড়লেন? কেন তাকে এখন আর কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে নেয়া হচ্ছে না—এই প্রশ্ন নিয়ে বিএনপিতে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে।

বিএনপির কেউ কেউ বলছেন যেহেতু শামা ওবায়েদ আন্তর্জাতিক বিষয়টি দেখেন সেজন্য তিনি যাচ্ছেন। এর মধ্যে বিতর্কের কোনো কিছু নেই। এর মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয় না যে রুমিন ফারহানা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। বিএনপির কোনো কোনো নেতার বক্তব্য হচ্ছে যেহেতু জাতীয় সংসদে রুমিন ফারহানা ছিলেন এবং বক্তব্য রাখতেন সেজন্য তিনি সেসময় লাইমলাইটে উঠেছিলেন। সংসদ থেকে বিএনপির সদস্যরা পদত্যাগ করার ফলে রুমিন ফারহানার বক্তব্যগুলো তেমন গণমাধ্যমে আসছে না। তাই তিনি এখন সেভাবে লাইমলাইটে নেই। যদিও রুমিন ফারহানা বিভিন্ন টকশোগুলোতে অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন যে এই টকশোগুলোতে রুমিন ফারহানা আগের মত নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না। তিনি উজ্জ্বলতা হারিয়েছেন।

বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছেন যে তারেক জিয়া রুমিন ফারহানাকে আগে প্রোটেনশিয়াল মনে করতেন, একজন মেধাবী রাজনৈতিক নেতা মনে করত কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপিতে কিছু কিছু তথ্য হাতে এসেছে যাতে দেখা যায় যে রুমিন ফারহানার সঙ্গে সরকারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে রুমিন ফারহানার ঘনিষ্ঠতার খবরটির লন্ডন পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। পাশাপাশি রুমিন ফারহানার কিছু বক্তব্য, আচার-আচরণ নিয়েও দলের হাইকমান্ডের প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। এই সবের প্রেক্ষিতেই অনেকেই মনে করছেন যে বিএনপির রাজনীতিতে রুমিন ফারহানার অধ্যায় ধোঁয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। বিএনপির রাজনীতি ব্যক্তি সন্তুষ্টির ওপর নির্ভর করে। এখানে আদর্শ বা ভালো কর্ম কোনো বিষয় নয়, সেকারণেই হয়তো রুমিন ফারহানা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। তবে শামা ওবায়েদের উত্থানকে অনেকেই মনে করছেন যে এটি তাঁর রাজনৈতিক পরিশ্রম থেকে প্রাপ্ত।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours