সিটি নির্বাচনে ভিন্ন কৌশলে অংশ নিচ্ছে বিএনপি

1 min read

বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। কিন্তু নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ছদ্মবেশে অংশগ্রহণ করছে এবং আগামী পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি’র ছদ্দবেশী প্রার্থীরা আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে বলেই বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বিএনপি প্রমাণ করতে চাইবে যে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা নেই এবং ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানছে না।

বিএনপি যদিও অনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে যে তারা সিটি নির্বাচনে যাবেনা। কিন্তু অন্যান্য সিটি নির্বাচন গুলোতে দেখা গেছে যে প্রকাশ্যে তারা বর্জনের ঘোষণা দিলেও গোপনে নির্বাচনগুলোতে তারা সক্রিয় থেকেছে এবং নারায়ণগঞ্জে বিএনপি’র হেভিওয়েট নেতা তৈমুর আমল খন্দকার পরাজিত হয়েছে এবং অন্যদিকে কুমিল্লায় বিএনপি’র নেতা মনিরুল হক সাক্কু তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন। ওই নির্বাচন নিয়ে অবশ্য বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।

এবারও পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি’র ছদ্মবেশী প্রার্থীরা থাকছেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন এমন প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন এবং সেক্ষেত্রে বিএনপি তাকে প্রকাশ্যে বহিষ্কার করলেও পুরো সিলেট মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ তার সঙ্গে থাকবেন বলে জানা গেছে। বিএনপি নেতারাই মনে করছেন যে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার একজন বহিরাগত প্রার্থী। তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে ভাল অবস্থান দেখাতে পারেন বর্তমান মেয়র আরিফ। আর সেক্ষেত্রে সেটি হবে সরকারকে সমালোচনা করার একটা বড় সুযোগ।

গাজীপুরেও বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার নির্বাচন করছেন বলে জানা গেছে। গাজীপুরে বিএনপি দুটি বিকল্প নিয়ে কাজ করছে। গাজীপুরে হাসান উদ্দিন সরকার যদি শেষ পর্যন্ত না দাঁড়ায়, তাহলে তারা জাতীয় পার্টির নেতা এম নিয়াজউদ্দিনকে সমর্থন দিতে পারেন। সাবেক সচিব এম এম নিয়াজউদ্দিন জাতীয় পার্টি থেকে এবার মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নিয়াজউদ্দিন ইতিমধ্যেই বিএনপি’র একটি অংশের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং তাদের সাথে সহযোগিতা করেছে। শেষ পর্যন্ত হাসান উদ্দিন সরকার নির্বাচন না করলে নিয়াজউদ্দিন হতে পারে বিএনপি প্রার্থী এবং সেক্ষেত্রে বিএনপি এই নির্বাচনে একটি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতা দাঁর করাতে পারে।

খুলনাতে বিএনপি’র হেভিওয়েট নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু নির্বাচন করবেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এই নির্বাচনের জন্য বিএনপি’র বহিষ্কৃত পদ হারানো এই নেতা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তিনি কর্মীদেরকে সমবেত করছেন এবং এখন তার শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া বাকি রয়েছে। রাজশাহীর নেতা বুলবুল নির্বাচন করবেন না, তবে সেখানে তারা প্রতীকী প্রার্থী দিয়ে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করবে।

অন্যদিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি’র গোপনে প্রার্থী দেবে এটি মোটামুটি নিশ্চিত এবং এই স্বতন্ত্র প্রার্থীকে তারা নির্বাচনে সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করবে। একাধিক সূত্র বলছে যে, বিএনপি মনে করছে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত তারা দূরে থাকে তাহলে ওই এলাকার নেতাকর্মীদের জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে এবং এটি দলের ভবিষ্যত আন্দোলনের জন্য ক্ষতিকর। আবার তারা এটাও মনে করছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন অবস্থায় যদি তারা নির্বাচন করে তাহলে একটি ভুল বার্তা যাবে।

তবে একাধিক সূত্র বলছে যে, সরকারকে চ্যালেঞ্জে ফেলার জন্যই তারা নির্বাচনে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে। তবে আওয়ামী লীগ বিএনপির ছদ্মবেশী প্রার্থীতে আগ্রহী এবং আনন্দিত। আওয়ামী লীগ মনে করছে যে এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তাদের জন্য একটি ‘টেস্ট কেস’। যেকোনো ভাবে এই নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার একটি বার্তা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি ইতোমধ্যে দিয়েছেন। নির্বাচনে কোনো রকম কারচুপি যেন না করা হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। কাজেই বিএনপি যদি নির্বাচনে ছদ্মবেশেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাহলে নির্বাচনগুলো অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। তখন সরকারের পক্ষে এটি বলা সহজ হবে যে, এই সরকার অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং এই সরকারের অধীনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে তার একটি ভিত্তি স্থাপিত হবে।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours