ক্ষমতার লোভে কতোটা হিংস্র হন জিয়াউর রহমান

1 min read

নিউজ ডেস্ক: রক্ত ও সংঘাতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছিলেন ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে। তার ক্ষমতায় থাকার সময় একের পর এক সেনা বিদ্রোহ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এক সেনা বিদ্রোহে ১৯৮১ সালের ৩০ মে তিনি নিহত হন। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে-মানুষ, সৈনিক বা রাজনৈতিক হিসেবে জিয়া কেমন ছিলেন?

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ইতিহাসে জিয়ার পদার্পণ। দুঃখজনক হলেও সত্য শুরুটা হয়েছিল কিন্তু একটা প্রতারণা দিয়েই। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণার সময় তিনি নিজেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ফেলেছিলেন।

১৯৭২ সালে তিনি দেশের এক প্রথম সারির সাপ্তাহিক পত্রিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রশংসা করে একটি লেখা প্রকাশ করেন। চার বছর পর উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে তিনি প্রেসিডেন্ট আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম এবং মীজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে যাওয়া আওয়ামী লীগের একটি দলের সঙ্গে আলোচনায় তিনি জোর গলায় অংশ নিয়ে বলেন, ‘আমার চেয়ে বড় আওয়ামী লীগ আর কে আছে? আমি চট্টগ্রামের রেডিও স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ সবাইকে শুনিয়েছি।’এটা সেই সময়, যখন তার উচ্চাশা একটি পর্যায়ে পোঁছাচ্ছে। তিনি জাতীয় রাজনীতিতে ঠাঁই করে নেয়ার জায়গা খুঁজছেন।

জিয়া আওয়ামী লীগের কাছে আসলে সমর্থন চাচ্ছিলেন। এ সমর্থন তিনি কখনোই পাননি। এই অসমর্থন এ জন্যই নয় যে, একদল বিপথগামী সেনা যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে পনেরো আগস্টে এর সকালে হত্যা করল তখন তিনি নীরব দর্শক ছিলেন। যখন তাকে এ হত্যার কথা জানানো হলো, তখন তিনি শেভ করছিলেন। আর বঙ্গবন্ধু হত্যার কথা শুনে নির্বিকারভাবে বলেছিলেন, ‘তাতে কী হয়েছে? উপ-রাষ্ট্রপতি আছেন!’

১৫ আগস্টের মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীর চেন অব কমান্ড যে ভেঙ্গে পড়েছিল তা উদ্ধার করতে পারলেন না জিয়া। ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বর জিয়াকে উৎখাত করলেন খালেদ মোশাররফ। চারদিন পর বিপ্লবের মোহে আচ্ছন্ন কর্নেল আবু তাহেরের বদৌলতে জিয়া মুক্ত হলেন। আবার সেনাপ্রধান হলেন। সঙ্গী-সাথীদের সঙ্গে হত্যা করা হলো খালেদ মোশাররফকে।

যে সেনানিবাসে খালেদ মোশাররফ বন্দি ছিলেন, সেখানে থাকা এক সেনা কর্মকর্তা ৭ নভেম্বর সকালে জিয়াকে খবরটি জানিয়ে দেন। এর কিছুক্ষণ পর খালেদ মোশাররফ, নাজমুল হুদা এবং এটিএম হায়দারকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়। এরপর কর্নেল তাহেরের সঙ্গে শুরু হয় জিয়ার দ্বন্দ্ব।

জিয়া আর তাহেরের এই প্রত্যাশিত লড়াইয়ে অনেক বেশি ধূর্ত জিয়া জয়ী হলেন। তাহের যুদ্ধে হেরে গেলেন এবং তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হলো। জিয়ার নির্দয়তার প্রথম স্মারক এটিই।

কর্নেল তাহেরের নারকীয় হত্যাকাণ্ড জিয়ার মধ্যযুগীয় বর্বরতার একটি নমুনা ছিল। ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে এই বর্বরতাকেই সম্বল করেছিলেন জিয়া। এরপর এর ধারাবাহিকতা চলেছে। ১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে কয়েক হাজার বিমান ও সেনাবাহিনীর সদস্যকে আবারও বিচার করে ফাঁসি দেয়া হয়। বিচার প্রক্রিয়ার এক কলঙ্কজনক অধ্যায় ছিল এটি। এই প্রহসনের বিচারে যারা দণ্ড পেয়েছিলেন তাদের অনেকেই জানতেন না তাদের দোষ কী। দণ্ড পাওয়া এসব মানুষের পরিবারের সদস্যরা দুই দশক পর তাদের কারও বাবা, কারও স্বামী বা কারও ভাইকে ঢাকা ও কুমিল্লার নাম না জানা অনেক কবরস্থানে খুঁজে পেয়েছেন। দ্রুত বিচার করে, ফাঁসি দিয়ে অধিক দ্রুততার সঙ্গে যাদের কবর দেয়া হয়েছিল।

জিয়া অনুসারীরা সবসময় একটি কথা বলে যান। তাহলো দেশের এই প্রথম সামরিক স্বৈরাচার ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলেন! এটা নেহাত সত্যের অপলাপ ছাড়া কিছু নয়। জিয়ার একটি রাজনৈতিক ভিত্তি দরকার ছিল। এই ভিত্তি গড়ে উঠেছিল ১৯৭১ সালে প্রত্যাখ্যাত, এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের বিরোধিতাকারী পাকিস্তানী বাহিনীর দালাল ঘাতকদের রাজনৈতিক শক্তির মাধ্যমে। জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের দ্বার উন্মোচন করেননি।

১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সময়ে জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন। জিয়া ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর স্থান নিয়ে নিজে কখনও প্রশ্ন তোলেননি। ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি সত্যিই অন্যরকম হতো, যদি জিয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের পাস করে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের ঘাতকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা না করতেন। তিনি এভাবে এসব হত্যাকারীকে রক্ষা করেই ক্ষান্ত হননি বরং পাকিস্তান, জাপান এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে তাদের কূটনীতিকের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours