জামায়াতকে বাদ দিয়ে ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গড়তে তৎপর বিএনপি

1 min read

নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের এক দফা দাবিতে শিগগিরই আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এজন্য ‘বৃহত্তর ঐক্য’ গড়তে বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসছে দলটি। শিগগিরই দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করবে। তবে এতে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীকে আমন্ত্রণ না জানানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার রাতে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে রাত ৯টায় শুরু হওয়া ভার্চুয়াল ওই বৈঠক চলে ৫ ঘণ্টা। দীর্ঘ বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল বাদে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সব দলকে মতবিনিয়ম সভায় আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য তিন সিনিয়র নেতাকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তারিখ নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মতবিনিময় সভার পর রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি রূপরেখা দেবে বিএনপি।

বৈঠকে বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে জামায়াতকে রাখা, না রাখার পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত দেন নেতারা। তিনজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বৈঠকে বলেন, বৃহত্তর ঐক্য ইস্যুতে বামসহ বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে বিএনপি অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছে। তারা জামায়াত থাকলে ঐক্যে আসবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আরেক নেতা বলেন, জামায়াতকে নিয়ে বিএনপিই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের বিষয়ে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। তবে একজন সিনিয়র সদস্য বৈঠকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে তো বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে কোনো সম্পর্ক নেই। ২০ দলীয় জোটেরও কোনো কার্যক্রম নেই। এ অবস্থায় জামায়াতকে বাদ দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি স্থায়ী কমিটি। তবে মতবিনিময় সভায় দলটিকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়ে সব নেতা একমত হন বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবি এখন সবার। এ ইস্যুতে আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চাই। এরই মধ্যে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কয়েকটি দল এবং ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি দল বিএনপির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে। শিগগিরই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করব। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল বাদে সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। প্রয়োজন হলে এমনও হতে পারে বিএনপির প্রতিনিধি দল রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যালয়ে গিয়ে মতবিনিময় করতে পারে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, বৃহত্তর ঐক্যে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন জামায়াতে ইসলামী বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানেও কৌশল অবলম্বনের কথা ভাবছে বিএনপি। আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে না। তবে দূরে ঠেলে না দিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে কৌশলে বোঝাপড়া করে তাদের সঙ্গে পথ চলবে বিএনপি। কারণ জামায়াতকে বিভিন্ন কৌশলে আওয়ামী লীগ কাছে টেনে নেবে, আগের মতো সে বিষয়টি নিয়েও দলের ভাবতে হচ্ছে। এসব হিসাব-নিকাশ কষে জামায়াতকে বাইরে রেখে বৃহত্তর ঐক্য গঠন করতে চায় বিএনপি।

নীতিনির্ধারকরা জানান, বৃহত্তর জোট গঠনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চলছিল। তবে তা হচ্ছিল না। তবে সরকার নিজেদের পছন্দমতো ইসি গঠনে আইন করে আবারও একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। আইন পাশের পর বিএনপি তাগিদ অনুভব করে যে এই সরকারকে আর বেশি দিন সময় দেওয়া যায় না। এক দফা নিয়ে আন্দোলনে নামা ছাড়া সামনে বিকল্প নেই।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামের দুটি জোট আছে। এ দুই জোটকে সঙ্গে রেখে কোন ফর্মে বৃহত্তর ঐক্য হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি বলে জানান বিএনপির আরেক নেতা। তার মতে, তবে এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আর যে যেখানে আছেন, তাদের সবার সঙ্গে এক দফা নিয়ে আলোচনা করেই বৃহত্তর জোট গঠন করা হবে। সেক্ষেত্রে যে যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখবেন-এ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রয়োজনে বিএনপি ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টে পরিবর্তন আনতে পারে। দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, অভিন্ন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের উদ্দেশ্যে এ ঐক্য গড়ে তুলতে চান তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে রাজপথে যারাই থাকবে, তাদের নিয়েই আমরা বৃহত্তর জোট গঠনের চিন্তা করছি।

সূত্র জানায়, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময়ের আগে ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদেরও মতামত নেবে বিএনপি। দুই জোটে থাকা দলগুলোর সঙ্গে কথা বলতে সিনিয়র নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মতবিনিময় সভায় বিএনপির আলোচ্যসূচির একটি খসড়া নিয়েও আলোচনা হয়। এতে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনের পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে কিভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হবে এ নিয়ে দলের অবস্থানের বিষয়ে ১১ দফা অঙ্গীকার রয়েছে। যা দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হবে।

বিএনপি নেতারা জানান, সরকারের চারদিকে এখন চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং জাতিসংঘে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চিঠিতে সরকার দিশাহীন হয়ে পড়েছে। আগামীতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে বিশ্ববাসী আর গ্রহণ করবে না-তাও সরকার বুঝতে পেরেছে। বিএনপি কোনোভাবেই ২০২৩ সালের নির্বাচন ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো করে পার হতে দেবে না। এবারের নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছে দলটি।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours