নিউজ ডেস্ক: বিয়ে হয়েছে সাদামাটাভাবেই। কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন কই? বরপক্ষ থেকে শুরু করে আমন্ত্রিত, সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন। কনের বাবার সে সবে হেলদোল নেই। কারণ জানার পর অবশ্য কারও মুখেই কোনো ক্ষোভ নেই। বরং সবাই প্রশংসায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন পাত্রীর বাবাকে। মেয়ের বিয়ের খাওয়াদাওয়ার খরচের জন্য রাখা ১৬ লাখ টাকার পুরোটাই যে তিনি দিয়ে দিয়েছেন ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় শহীদ সিআরপিএফ জওয়ানদের পরিবারকে।
ভারতের গুজরাটের সুরাটের ছোটখাটো হীরা ব্যবসায়ী দেওয়াসি মানেক। মেয়ে অ্যামি’র বিয়ে ছিল শুক্রবার। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছিল সব আয়োজন। ভেবেছিলেন ধূমধাম করে একমাত্র মেয়ের বিয়ে দেবেন। কিন্তু বিয়ের আগের দিন বিকেলেই এমন একটা খবর পেলেন, তাতে সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল।
টিভিতে দেখলেন, কাশ্মীরের পুলওয়ামার লেথপোরাতে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর সিআরপিএফ জওয়ানদের কনভয়ের উপর আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে জয়েশ-ই-মোহাম্মদ। এতে মারা গেছেন অন্তত ৪০ জওয়ান।
পরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর পান জওয়ানদের পরিবারের ব্যাপারে। জানতে পারেন, কেউ হয়তো পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী, কারও সবে সন্তান হয়েছে।
দেওয়াসি মানেক তখনই ঠিক করেন, মেয়ের বিয়েতে খাওয়া-দাওয়ার খরচের জন্য যে টাকাটা তুলে রেখেছেন, সেটা দান করে দেবেন। সে অনুযায়ী, ১১ লাখ টাকা তিনি দান করেন জঙ্গি হামলায় নিহত জওয়ানদের পরিবারকে। বাকি ৫ লাখ টাকা তিনি ডোনেশন হিসেবে দেন সিআরপিএফকে। পুরো টাকাই অবশ্য দেয়া হয়েছে সিআরপিএফকে। নিহত জওয়ানদের পরিবারের মধ্যে টাকা ভাগ করে দেবে সিআরপিএফ।
এ’কথা জানতে পারার পর অবশ্য বরের বাড়ির লোক থেকে শুরু করে আমন্ত্রিত অতিথি, সবাই কনের বাবার প্রশংসা করেন। নিজের আনন্দের থেকে দেশের স্বার্থকে এগিয়ে রাখার জন্য ওই ব্যবসায়ীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন অনেকে। মেয়ে অ্যামি’ও খুব খুশি।
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমকে দেওয়াসি বলেন, বিয়েটা ঠিক হয়ে গিয়েছিল, তাই সেটা বন্ধ করিনি। কিন্তু বিয়ের খরচ বাদে আনুষঙ্গিক আর কোনও খরচ করিনি। পুরোটাই দিয়ে দিয়েছি শহীদ জওয়ানদের পরিবারের উদ্দেশে। আমি জানি, তারা যা হারিয়েছেন, তার কোনো ক্ষতিপূরণ হয় না। এই টাকায় আর্থিকভাবে যদি কিছুটা সাহায্য হয়, তাহলেই আমি ভাববো, আমার জীবন সফল। আশা করি তারা আমার মেয়েটাকে আশীর্বাদ করবেন।
+ There are no comments
Add yours