লক্ষ্মীপুরের ভাগ্যবান এমপি দম্পতির বাজিমাত!

1 min read

ডেস্ক রিপোর্ট: দীর্ঘ প্রবাসজীবন কাটিয়ে মাত্র বছর দুয়েক আগে দেশে ফেরেন তিনি। কী রাজনৈতিক অঙ্গন, কী এলাকা- কোথাও তেমন পরিচিতি ছিল না তাঁর। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হয়ে গেলেন তিনি। শুধু তাই নয়, তাঁর স্ত্রীও সংরক্ষিত (নারী) স্বতন্ত্র আসনে এমপি হতে যাচ্ছেন। এই ভাগ্যবান দম্পতি হলেন কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল ও সেলিনা ইসলাম। রাজনীতিতে এসেই তারা বাজিমাত করলেন। যেন এলেন, দেখলেন, জয় করলেন! একাদশ জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র ও সংরক্ষিত (নারী) স্বতন্ত্র এমপি হয়ে সর্বত্র আলোচিত এ দম্পতি। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বামী কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদর আংশিক) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী (আপেল প্রতীক) হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন।

একই সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে স্বতন্ত্র এমপিদের গ্রুপ থেকে এমপি নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী সেলিনা ইসলাম। মহাজোট প্রার্থী জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমানের রহস্যজনক উধাওয়ের পর আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন পাপুল। জানা যায়, কুয়েতপ্রবাসী ব্যবসায়ী অরাজনৈতিক ব্যক্তি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল বছর দুয়েক আগে তাঁর নিজ গ্রাম লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আসেন। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হাত ধরে দান-অনুদান দিয়ে সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। যদিও তিনি জনপ্রতিনিধি হওয়ার আকাক্সক্ষা নেই বলে তখন গণমাধ্যমকে জানান। তিনি নিজেকে মানবতার সেবায় সম্পৃক্ত করাসহ রায়পুরবাসীর উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি নিজ সম্পদের শতকরা ২৫ ভাগ ব্যয় করার ঘোষণা দেন। এতে কৌতূহল সৃষ্টি হয় জনমনে। তিনি না পারলেও তাঁর স্ত্রী ও কন্যাসন্তানরা মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনে নগদ লাখ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিতে থাকেন।

শহীদ-সেলিনা ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে স্থানীয় হাজার হাজার গরিব অসহায় মানুষের সেবায় নিজে ও পরিবারকে সম্পৃক্ত করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নৌকার প্রচারণায় মাঠে নামেন পাপুল। দলীয় নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। পাপুল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে মনোনয়ন পেতে বিভিন্নভাবে লবিং করেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কেনেন। এ আসনে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির তৎকালীন সংসদ সদস্য জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ নোমানকে আবারও মহাজোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর প্রায় সবাই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে মহাজোট প্রার্থীকে জয়ের ব্যাপারে স্থানীয় দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজে নেতা-কর্মীদের শপথ করান। সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থীকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন পাপুলের কাছ থেকে সরে যান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু নির্বাচনের ঠিক সপ্তাহখানেক আগে রহস্যজনক কারণে উধাও হয়ে যান মহাজোট প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান। জনশ্রুতি রয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করে নোমান আত্মগোপনে গিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

এ নিয়ে ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পরোক্ষ সমর্থন নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী পাপুল। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আপেল প্রতীকের শহীদ ইসলাম পাপুল ২ লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৪ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। স্বপ্ন পূরণ হয় তাঁর। সংরক্ষিত (নারী) আসনে স্বতন্ত্র এমপিদের গ্রুপ থেকে শহীদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। এ কোটায় তাঁরও সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার। সেলিনার পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায়। তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। পাপুল-সেলিনা দম্পতি এমপি নির্বাচিত হওয়ায় তাঁদের সৌভাগ্যবান মনে করছেন সবাই। তাদের শুভাকাক্সক্ষীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আবার মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেকে। কেউ বলছেন, অনন্য এক ইতিহাস গড়লেন এ দম্পতি। কেউ বলছেন, টাকা দিয়ে সৌভাগ্য কিনেছেন তারা।

ত্যাগীরা বঞ্চিত হয়েছেন বলে কারও কারও ফেসবুক আইডিতে মন্তব্য করতে দেখা গেছে। লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরের চার এমপির পাশাপাশি আমরা আরও একজন এমপি পেলাম। যিনি লক্ষ্মীপুরের বধূ। আমরা অত্যন্ত খুশি। এমপি দম্পতিকে সাধুবাদ জানাই। আমাদের জেলার উন্নয়নে পাঁচজন এমপির সমান ভূমিকা থাকবে- এ প্রত্যাশা এখন সবার।’

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours