টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে ইজতেমার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন

1 min read

নিউজ ডেস্ক: আগামী শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুরু হতে যাচ্ছে হজের পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা। তাবলীগ জামাতের উদ্যোগে এবার ৫৪তম ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এখন চলছে ইজতেমা মাঠের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির কাজ। ইতোপূর্বে ইজতেমা তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলেও এবার মুসল্লিদের মতভেদের কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয় তা চার দিন নির্ধারণ করেছে।

১৫ ফেব্রুয়ারি ফজরের নামাজের পর থেকে আমবয়ানের মাধ্যমে প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশ নেবেন ঢাকার কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা যোবায়ের অনুসারী মুসল্লিরা। প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত হবে শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি)। আখেরি মোনাজাত শেষে যোবায়ের অনুসারী মুসল্লিরা শনিবার রাতের মধ্যেই ইজতেমা মাঠ ছেড়ে যাবেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি ফজরের নামাজের পর থেকে আমবয়ানের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নেবেন মাওলানা সা’দ আহমাদ (ওয়াসিফুল ইসলামের) অনুসারীরা। এ পর্বের আখেরি মোনাজাত হবে সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি)।

ইজতেমা আয়োজক কমিটির মুরুব্বি প্রকৌশলী মাওলানা গিয়াস উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবারের মধ্যে ইজতেমা মাঠের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। এখন চলছে ১০ শুরা সদস্যের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন জামাতে বিভক্ত হয়ে মাঠ প্রস্তুতির কাজ। ২০ থেকে ২৫ হাজার তাবলিগ জামাতের সাথি স্বেচ্ছাশ্রমে মাঠ প্রস্তুতের কাজ করছেন।

বুধবার সকাল ৮টায় ইজতেমা মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ইজতেমা ময়দানে বিশাল এলাকা জুড়ে প্যান্ডেল, খুঁটি ও মাঠের ভিতরে রাস্তা মেরামত কাজ চলছে। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মুসল্লিরা দলবেঁধে ময়দান পরিষ্কার করছেন। কেউ কেউ চট দিয়ে বিশাল সামিয়ানা, খুঁটি ও বিদ্যুতের তার টানাচ্ছেন। ঠেলাগাড়িতে বাঁশ নিয়ে আসছেন, মাইক লাগাচ্ছেন। বিদেশি মেহমানদের জন্য আলাদা মঞ্চসহ বয়ানমঞ্চ প্রস্তুত করছেন। মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজের ছাত্র ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে ইজতেমা মাঠে আল্লাহকে খুশি করার জন্য কাজ করছেন। প্রতিদিন গাজীপুর ও ঢাকার আশপাশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দলবেঁধে ইজতেমা মাঠে কাজ করে সময় ব্যয় করছেন। আগত মুসল্লিরা ইজতেমা সফল করার লক্ষ্যে পুরোদমে প্রস্তুতিমূলক কাজ করে যাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে বিশেষ নিরাপত্তার জন্য ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করতে দেখা গেছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন ইজতেমা মাঠের উঁচু-নিচু জায়গা ও রাস্তা-ঘাট সমান করছে। ইতোমধ্যেই ইজতেমা ময়দানের সামিয়ানার কাজ প্রায় শেষের পথে। জেলাভিত্তিক বিভিন্ন খিত্তায় মুসল্লিরা অবস্থান করবেন। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লির সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। মুসল্লিদের যাতায়াতসহ ময়দানে সুযোগ-সুবিধার লক্ষ্যে তুরাগ নদীতে সেনাবাহিনী ভাসমান সেতুর কাজ করছে। এখানে সবকিছুই হয়ে থাকে বিশ্ব তবলীগ জামায়াতের সর্বোচ্চ মজলিশে শুরার নির্দেশনা অনুযায়ী। একই সঙ্গে ইজতেমার মাঠজুড়ে গ্যাসের লাইন, বিদ্যুতের তার ও পানির পাইপ টানার কাজও চলছে। অজু-গোসলের স্থান ও টয়লেট পরিষ্কার-পরিছন্নতার কাজ করছে গাজীপুর জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও সিটি করপোরেশন। এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ ভাগ কাজ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইজতেমার আয়োজক কর্তৃপক্ষ। তবে মাঠ প্রস্তুত কাজে শুধু মাওলানা যোবায়েরের অনুসারীদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

৬০ শতাংশ মুসল্লির অংশগ্রহণ অনিশ্চিত

ইজতেমা প্রস্তুতি কমিটির মুরুব্বি প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী বিদেশি মুসল্লিদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এতো অল্প সময়ে সব শর্ত পূরণ করে তাদের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এজন্য অনেক মুসল্লি এবার ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন না। বিশেষ করে, ভারত থেকে আগত ৬০ শতাংশ মুসল্লি এবার ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন না। তাদের মধ্যে নিজামউদ্দিন/সা’দ বিরোধী মুসল্লিদের বোম্বের নেরুল মার্কাজ এবং দিল্লির ফয়েজ-ই-ইলাহি মার্কাজের শর্ত সাপেক্ষে ভিসা দেওয়ার কথা সভায় আলোচনা হলেও তা দেওয়া হয়নি। ৬০ শতাংশ ভারতীয় মুসল্লি ওই দুই মার্কাজের সঙ্গে যুক্ত।

তিনি জানান, তাছাড়া কোনও মুসল্লি টুরিস্ট ভিসায় ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। ইজতেমায় যোগ দিতে বিদেশি মুসল্লিদের শর্ত সহজ না করায় মুসল্লির সংখ্যা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে যারা অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাবেন তাদেরকে তাবলীগে অংশ নিতে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে তা শিথিল করলে তাবলীগের মেহমান অনেক বেড়ে যাবে।

বিদেশিদের জন্য ময়দানের উত্তরপশ্চিম পাশে তৈরি করা হচ্ছে টিনসেডের আলাদা থাকার জায়গা। ইজতেমা মাঠের কিছু কিছু জায়গায় চটের ছাউনি দেওয়া এখনও বাকি রয়েছে। তবে বাঁশের খুঁটি পোঁতা হয়ে গেছে। মাঠের দক্ষিণপূর্ব পাশে ট্রাক ভর্তি করে নতুন চট আসছে। মুসল্লিরা সেগুলো ট্রাক থেকে নামিয়ে মাঠে টানাচ্ছেন। মাঠের পূর্ব পাশে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বালু দিয়ে মাঠ ভরাটের কাজ করতে দেখা গেছে। বিদেশি মুসল্লিদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে টিনের ঘর। বিদেশি মেহমানদের কামরার দক্ষিণপূর্ব পাশে মূল মঞ্চের কাজ করা হচ্ছে।

১০ শর্তে এবারের ইজতেমা

এবার ১০টি শর্ত মেনে ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতিকাজ শুরু করা হয়েছে। শর্তগুলো হলো:

১. শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ফজরের নামাজের পর মাওলানা যোবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করবেন।

২. মাওলানা সা’দ অনুসারীরা ১৭ ফেব্রুয়ারি রবিবার ফজরের নামাজের পর ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করবেন এবং আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করবেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার সা’দপন্থী অনুসারীরা ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করে তাদের দুই দিনের ইজতেমার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

৩. মাওলানা যোবায়েরের অনুসারীরা বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে ইজতেমা মাঠ প্রস্তুতি কাজ শুরু করবেন।

৪. মাওলানা যোবায়েরপন্থীরা শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বাদ মাগরিব আখেরি মোনাজাত শেষে মাঠ ছেড়ে চলে যাবেন।

৫. যোবায়েরপন্থীরা প্রশাসনের উপস্থিতিতে সা’দপন্থীদের কাছে মাঠ বুঝিয়ে দেবেন।

৬. ইজতেমা শেষে দুই পক্ষের মুরুব্বিরা বসে মাঠের প্রস্তুতি কাজে লাগানো সরঞ্জামাদির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

৭. ইজতেমা শেষে ময়দানে মুসল্লিদের ব্যক্তিগত মালামাল ছাড়া বাকি সবকিছু স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বে থাকবে।

৮. মাওলানা যোবায়েরের অনুসারী বিদেশি মেহমানরা দুই দিন ইজতেমা শেষে উত্তরা হাজিক্যাম্পে অবস্থান করবেন।

৯. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাওলানা সা’দ বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন না।

১০.ইজতেমা চলাকালে উভয় পক্ষের মুসল্লিরা টঙ্গীর আশপাশ এলাকার মসজিদে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবেন।

মাত্র আট দিন আগে ইজতেমা মাঠের কাজ শুরু

প্রতিবছর ইজতেমার তিন মাস আগে থেকে মাঠের প্রস্তুতিকাজ শুরু হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর দু’পক্ষের বিরোধের আশঙ্কায় মাত্র আট দিন আগে ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতির কাজ শুরু করা হয়েছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (এডিসি, মিডিয়া) রুহুল আমীন সরকার জানান, ডিএমপি থেকে ডগ স্কোয়াড, বোম ডিসপোজাল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন টিম ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তায় কাজ করবে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার সিসি ক্যামেরাও বাড়ানো হয়েছে এবং নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘অন্যান্য বারের মতো এবারও সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও সাদা পোশাকে ১০ হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মুসল্লিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকবে শর্টসার্কিট ক্যামেরা, পুলিশ ও র‌্যাবের পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। ইতোমধ্যে মাঠের চারদিকে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে। মুসল্লিদের পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য আট হাজার পাকা টয়লেট ও এক হাজার অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অজু-গোসলের জন্যও সুব্যবস্থা করা হয়েছে।’

তিনি আরও জানান,এবার যাতায়াতের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে ১৩৮টি ট্রেনের ব্যবস্থা করবে এবং বিআরটিসি ৩০০ বাস সার্ভিস সেবা দেবে।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours