বিএনপি নয়, বিএনপিকে ছাড়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে জামায়াত

1 min read

নিউজ ডেস্ক: বিএনপি নয়, বিএনপিকে ছাড়ছে জামায়াতে ইসলামী। প্রতিকূল পরিস্থিতি বিবেচনায় বিএনপির সঙ্গে আর জোটে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তবে এই সিদ্ধান্তের কথা দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে না। বিএনপির সঙ্গ ছাড়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তারা ২০-দলীয় জোটের কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় থাকবে। জামায়াতের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রগুলো বলছে, সম্প্রতি জামায়াতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার বৈঠকে বিএনপির সঙ্গে আর না থাকার সিদ্ধান্ত হয়। দলের নির্বাহী পরিষদকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

জামায়াতের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, দেশে এখন কোনো আন্দোলন নেই, নির্বাচন নেই। তাছাড়া জোটের প্রধান দল বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে রাজনীতির মাঠে ২০ দলীয় জোটের গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে জামায়াতও শরিক দল হিসেবে বিএনপির কাছে গুরুত্ব হারিয়েছে। সর্বশেষ ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঐক্যফ্রন্টকে প্রাধান্য দিয়েছে বিএনপি। ওই নির্বাচনে জোটের আসন ভাগাভাগিতে জামায়াত চাহিদা অনুযায়ী আসন পায়নি। যে কয়টি আসন পেয়েছে, সেগুলোতে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ নিয়েও গড়িমসি ও দীর্ঘসূত্রতা করে বিএনপি। এই অবস্থায় জামায়াতের নেতাদের উপলব্ধি হচ্ছে, বিএনপির সঙ্গে থাকার কারণে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ক্ষমতাসীনদের রোষের শিকার হচ্ছেন।

বিএনপির সঙ্গে না থাকার সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি ১১ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সংগঠনে কত সিদ্ধান্তই হয়। জানানোর মতো কিছু হলে আমরা তা গণমাধ্যমকে জানাই। এ রকম কিছু হলে সময়মতো আমরা বলব।’

অবশ্য বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা এবং দলের শুভাকাঙ্ক্ষী ও বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশ অনেক দিন ধরে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। জামায়াতের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের অনেকের বিরূপ ধারণা আছে। কিন্তু ভোটের মাঠের নানা হিসাব-নিকাশে জামায়াতকে ছাড়েনি বিএনপি। এখন জামায়াতই বিএনপিকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিএনপি-সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের সংগঠন শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন বলেন, ‘জামায়াত বেরিয়ে গেলে খুশি হব আমরা। বিএনপিরও উচিত হবে না আর জামায়াতকে জোটে যুক্ত রাখা। কারণ, এই মুহূর্তে জামায়াতকে সঙ্গে রাখা লাভজনক ব্যাপার নয়, বরং দায় হয়ে গেছে।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত প্রায় ২০ বছর একসঙ্গে আন্দোলন ও নির্বাচন করেছে বিএনপি-জামায়াত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা কারণে দল দুটির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে যাওয়ার পর এই দূরত্ব আরও বাড়ে, যা এখন বিচ্ছেদের দিকে গড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী দল। তাদের জোটে রাখাটা আমি কখনো পছন্দ করিনি, এ কথাটা সব সময় বলে আসছি। এখন যদি তারা বেরিয়ে যায়, সেটা তাদের ইচ্ছা। তবে আমি বলব, বিএনপি তাদের আশ্রয় দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours