সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ : হাইকোর্ট

1 min read

নিউজ ডেস্ক: দেশের সব সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালে সরকারের করা নীতিমালা বৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, এই নীতিমালার বাইরে কোনো কোচিং করা যাবে না। এ রায়ের ফলে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধই থাকছে।

একই সঙ্গে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত সরকারি শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করাও বৈধ বলেছেন আদালত।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। কোচিং বাণিজ্য নিয়ে পাঁচটি রিট আবেদনে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় দেওয়া হয়।

আদালতে রিট আবেদনকারী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, অ্যাডভোকেট মো. নাসির উদ্দিন। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ বৈধ বলে রায় দিয়েছেন। এই রায়ের ফলে কোচিং বাণিজ্য বন্ধই থাকছে।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্কুলে অনুসন্ধান চালিয়ে দুদকের অনুসন্ধানদল জানতে পারে যে কোচিং বাণিজ্য হচ্ছে। এরপর দুদক ওই শিক্ষকদের নোটিশ দেয়। এই নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে কিছু শিক্ষক হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এই রিট আবেদনের ওপর দীর্ঘদিন শুনানি হয়। শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছেন আদালত। রায়ে সরকারি শিক্ষকদের রিট আবদেন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। ফলে দুদক সরকারি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাতে পারবে। তবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাতে পারবে না।

শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১২ সালে একটি নীতিমালা করে। এই নীতিমালায় বলা হয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁর এমপিও স্থগিত, বাতিল, বেতন-ভাতাদি স্থগিত, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন এক ধাপ অবনমিতকরণ, সাময়িক বরখাস্ত, চূড়ান্ত বরখাস্ত ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওবিহীন কোনো শিক্ষক এবং এমপিওবিহীন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষকও কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁরও একই শাস্তি হবে। এ ছাড়া সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-১৯৮৫-এর অধীনে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ওই নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে ছাত্রছাত্রীর তালিকা, রোল, নাম ও শ্রেণি উল্লেখ করে জানাতে হবে।

নীতিমালায় বলা হয়, অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানপ্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে মহনগরী এলাকার প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে ৩০০ টাকা, জেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০০ টাকা এবং উপজেলা ও অন্যান্য এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা নেওয়া যাবে। নীতিমালা অনুযায়ী, অতিরিক্ত ক্লাসের ক্ষেত্রে একটি বিষয়ে মাসে কমপক্ষে ১২টি ক্লাস নিতে হবে, প্রতি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারবে।

রায়ে বলা হয়, সরকারি চাকরির বিধিমালা লঙ্ঘন করা একটি অপরাধ। এই অপরাধের অনুসন্ধান করার এখতিয়ার দুদককে আগেই দণ্ডবিধির ১৬৬ নম্বর ধারায় দেওয়া আছে। সুতরাং সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান পরিচালনার এখতিয়ার দুদকের রয়েছে। আর আইন অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর সরকারি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ব্যাংকিং খাত, কাস্টম হাউস, বন্দর, ভূমি অফিসসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে বড় বড় দুর্নীতি হচ্ছে। একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলেন কী থাকলেন না তার চেয়ে দুদককে গুরুতর দুর্নীতির দিকে নজর দিতে হবে। আদালত বলেন, দুদক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি দেখবে না, তা নয়। তবে গুরুতর দুর্নীতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

স্কুল শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে মো. জিয়াউল কবির দুলু কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে ২০১১ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। ওই রিট আবেদনে আদালত রুল জারি করেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালে একটি নীতিমালা করে। নীতিমালা করার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুদক ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের শিক্ষক ড. ফারহানা খানম, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ কবীর চৌধুরী, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক শাহজাহান সিরাজ ও অভিভাবক মো. মিজানুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। কোনো কোনো শিক্ষককে বদলি করা হয়। এরপর দুদকের নোটিশ ও বদলির আদেশ চ্যালেঞ্জ করে আলাদা রিট আবদেন করেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours