ডা. আকাশের আত্মহত্যা নিয়ে তসলিমা নাসরিনের বক্তব্য

1 min read

নিউজ ডেস্ক: গত দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমগুলোতে বেশ আলোচিত সংবাদ; স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে স্বামীর আত্মহত্যা। দীর্ঘ নয় বছর প্রেম, অতঃপর বিয়ে তবু কেন চট্টগ্রামের তরুণ চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের এমন করুণ পরিণতি হলো, এ বিষয়ে নানা প্রশ্নে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া।

তানজিলা হক মিতুকে ডিভোর্স না দিয়ে কেন একজন চিকিৎসক আত্মহত্যার পথই বেছে নিলেন সে বিষয়ে নিজেদের মতামত জানাচ্ছেন নেট জনতা।

এবার ডা. আকাশের আত্মহত্যা বিষয়ে নিজের মতামত জানালেন ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন।

আত্মহননকারী যে খুব সৎ, সরল বা মহান বাঙালি সমাজে এমন ভাবনাকে নাচক করে দিয়েছেন তসলিমা।

তার মতে, নানা কারণে মানুষ নিজেকে খুন করে ফেলার পথ বেছে নেয়, সে কারণগুলো বিশ্লেষণযোগ্য।

উদাহরণস্বরুপ তসলিমা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের লাখো কোটি নিরীহ মানুষের রক্তে হাত রাঙানো হিটলারের কথা বলেন। হিটলারও আত্মহত্যা করেছিল। বহু খুনী, সন্ত্রাসী, আপরাধী আত্মহত্যা করেছে যাদের কেউ মহান ছিলেন না বলে জানান তসলিমা।

ডা. আকাশ বিষয়ে তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো:

‘আত্মহত্যা করলেই সে মানুষ নির্দোষ এমন ভাবার কোনো যুক্তি নেই। মাথায় অসুখ, সে কারণে অনেকে আত্মহত্যা করে। রাগে জেদে হিংসায় ঘৃণায় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েও কেউ কেউ আত্মহত্যা করে।

কাউকে খুন করে, অত্যাচার নির্যাতন করে, পালানোর পথ না পেয়ে শাস্তির ভয়ে বা গ্লানিতেও অনেকে করে আত্মহত্যা।

বাংলাদেশে এক ডাক্তার ছেলে আত্মহত্যা করেছে কারণ তার ডাক্তার বউটি অন্য ছেলেদের সংগে প্রেম করতো, শুতো।

এতে বড্ড রাগ হয়েছে ছেলের, তাই আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যা করার মানেই সে তার বউকে খুব ভালোবাসতো, তা প্রমাণ করে না।

বউ তাকে ছেড়ে চলে যাবে, ডিভোর্স দেবে, বউয়ের এত বড় স্পর্ধা তার সহ্য হয়নি। আত্মঅহমিকা অনেক সময় এত অতিকায় হয়ে ওঠে, এতে চির ধরলে মানুষ আত্মহননের পথ বেছে নিতে দ্বিধা করে না।

ডাক্তার ছেলেটির হাত হয়তো নিশপিশ করছিল বউকে আর বউয়ের প্রেমিকদের খুন করতে, কিন্তু দেশের জনগণ জানবে সে খুনী, জনগণ দেখবে তার ফাঁসি হচ্ছে বা তাকে জেলের ভাত খেতে হচ্ছে যাবজ্জীবন! এই ব্যাপারটি তার ভালো লাগেনি।

খুন করতে না পারার এই অক্ষমতাও মানুষকে আত্মহত্যা করতে প্ররোচনা দেয়। যাকে আমি আমার অধীন রাখতে চেয়েছি, আমার চেয়ে ক্ষুদ্র, আমার চেয়ে তুচ্ছ, আমার চেয়ে মূর্খ না হয়ে যদি সে আমার হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে আমাকেই টেক্কা দেয়, বা আমাকে অবজ্ঞা করে, তাহলে এ জীবন রাখার কোনো মানে নেই।

ঈর্ষা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলে কী করে মানুষ? হয় হত্যা নয় আত্মহত্যা। কেউ একজন আত্মহত্যা করেছে, সুতরাং সে খুব সৎ ছিল, সরল ছিল, মহান ছিল, মহামানব ছিল – এই ধারণাটি মস্ত ভুল ধারণা।

কুখ্যাত খুনী হিটলার আত্মহত্যা করেছিল। বহু খুনী , সন্ত্রাসী, আপরাধীই আত্মহত্যা করেছে। বিশ্বাস না হয়, ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন।

আজকাল তো ইতিহাস কেউ ঘাঁটে না। সহজ উপায় বলে দিই, গুগুল করুন, ‘মারডারারস হু কমিটেড সুইসাইড’, অথবা ‘ক্রিমিনালস হু কমিটেড সুইসাইড’। দেখুন লিস্ট কত লম্বা।’

আরও পড়তে পারেন

+ There are no comments

Add yours