নিউজ ডেস্ক: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়কার ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া, বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ ও নতুন নামে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করার আলোচনাকে কৌশল হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। দল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য না করে নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে রাজনীতির মাঠে আওয়াজ তুলে জনমনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাচ্ছে বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীন দলটি। তাদের মতে, জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধাপরাধের বিচার এড়ানোর পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধের দল হিসেবে চিহ্নিত পাওয়া ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া রাজনীতিতে নতুন করে জায়গা করে নিতে চাচ্ছে। তবে, দেশের মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে । তারা যে নামেই আসুক, মানুষ তা গ্রহণ করবে না।
সপ্তাহখানেক ধরে দুই দশকের জোটসঙ্গী বিএনপিকে ছাড়া ও বর্তমান সংগঠন বিলুপ্ত করে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্বে নতুন নামে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করার আলোচনা শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে একাত্তরের ভূমিকায় ক্ষমা না চাওয়া ও যুগের চাহিদায় দলের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ উল্লেখ করে শুক্রবার দলটির অন্যতম শীর্ষ নেতা দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্রে তিনি ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে নেতিবাচক ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া শুধু নৈতিক দায়িত্বই নয় বরং তৎপরবর্তী প্রজন্মকে দায়মুক্ত করার জন্য অত্যন্ত জরুরি কর্তব্য বলেও উল্লেখ করেন।
পদত্যাগের কারণ উল্লেখ করে আব্দুর রাজ্জাকের গণমাধ্যমে পাঠানো বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিষয়টিকে ‘কৌশল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর জামায়াত এখন ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি কেন সামনে নিয়ে আসছে, এটা ঘোলাটে। এটা তাদের রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে।’
দলটি অফিসিয়ালি এখনও কিছু বলেনি মন্তব্য করে কাদের বলেন, ‘এখনও তারা ক্ষমা চায়নি। এটা স্পেকুলেশনের পর্যায়ে, আলোচনার পর্যায়ে, গুজব-গুঞ্জনের পর্যায়ে সীমিত আছে। আর ক্ষমা চাইলেও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার তাতে বন্ধ হবে না।’
দলের যুগ্ম সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি তার নির্বাচনি এলাকা চাঁদপুরের একটি অনুষ্ঠানে বলেন, পদত্যাগকালে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক যে কথাগুলো বলেছেন তাতে তার উদ্দেশ্য কী তা পরবর্তী কার্যক্রম দেখলে বোঝা যাবে। আর জামায়াত তার জঙ্গিবাদি ও সাম্প্রদায়িক আদর্শকে ধারণ করে আরেকটি ভিন্ন নামে সংগঠন করার অপপ্রয়াস চালায় কীনা, সেটিও দেখার বিষয়।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে অনেক আগেই জামায়াতের জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। তা না করে অনেক আগেই তারা এ রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। আর কোনোদিনই এই দলটি এ দেশে রাজনীতি করতে পারবে না। তবে এই দলের কোন নেতা কী নামে রাজনীতি করবে তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু জামায়াতের আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশে আর রাজনীতি করার সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, তাদের একজন ব্যক্তি স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। আর ইন্ডিভিজুয়াল কোনও স্টেটমেন্টের গুরুত্ব নেই। প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেলে নিষিদ্ধ হবে। তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, দলীয়ভাবে তারা এখনও কোনও বিষয় খোলসা করেনি। এটা তাদের একটা কৌশল হতে পারে। তবে, রাজনীতিতে শেষ বলে কোনও কথা নেই। তাদের অবস্থানটা দেখি। তারপরে এ বিষয়ে কথা বলা যাবে।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু বলেন, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমা চায়নি এবং ভবিষ্যতে চাইবে বলেও মনে হয় না। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক নিজের উপলব্ধি থেকে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছেন। আর জামায়াত নেতারা যে নামেই দল করুন না কেন সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদের আদর্শ জিইয়ে রেখে রাজনীতি করলে দেশের মানুষ তা গ্রহণ করবে না।
+ There are no comments
Add yours